ইডেন কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভার একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। যেখানে তাকে শিক্ষার্থীদের রাজিয়া হল থেকে বের করে দেয়া এবং হল প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জ জানানোর কথা শোনা গেছে। এছাড়া ছাত্রীদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করার সেই অডিও দেশব্যাপী আলোচনার জন্ম দেয়।তাকে বলতে শোনা গেছে, ‘এক পায়ে পাড়া দিমু, আরেক পা টাইনা ধইরা ছিঁড়া ফেলমু।’শুক্রবার (১৯ আগস্ট) সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া সেই অডিওটির বিষয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন তামান্না। অডিওতে যে কথাগুলো শোনা যাচ্ছে, তা নিজের বলে স্বীকারও করেছেন তিনি।
ক্ষমা চেয়ে নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে এক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের প্রতিটি কর্মীর সঙ্গে আমার আত্মার সম্পর্ক। এরা আমার পরিবারের সদস্য ছাড়া অন্য কিছু নয়। একান্ত ব্যক্তিগত পরিবেশে হলেও দায়িত্বশীল জায়গা থেকে অসংযত ভাষার প্রয়োগ আমার অপরাধ হয়েছে বলে আমি স্বীকার করছি। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আমাকে এমন শিক্ষা দেয় না, তাই সংগঠনের প্রতি আমি ক্ষমাপ্রার্থী।’এর আগে ফাঁস হওয়া অডিওতে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতিকে বলতে শোনা যায়, ‘তোরা লিগ্যাল তাতে আমার…(প্রকাশ অযোগ্য) গেছে। কোন হেডাম দেখাইতে আসিস তোরা। আমার পলিটিক্যাল রুমে তোরা লিগ্যাল থাকবি কি না, সেটা তোদের বিষয়। কে কে টাকা জমা দিছিস? আমারে দিছিস? আর কে লিগ্যাল?’এ সময় পাশ থেকে একজনকে বলতে শোনা যায়, ‘ও তো অসুস্থ, বাসায় গেছে?’ জবাবে তিনি বলেন, ‘২০২ (রুম নম্বর)-এ আর লিগ্যাল কে? তোরা লিগ্যাল তাতে আমার কি… গেছে? বল? আমি কি … তোদের। চ্যাটাং চ্যাটাং করতেছোস। এক পায়ে পাড়া দিমু, আরেক পা টাইনা ধইরা ছিঁড়া ফেলমু। চার মাস হয়ে গেছে ফাইজলামি শুরু করছিস।’
অডিওতে সুমনা মীম নামে এক মেয়েকেও গালমন্দ করতে শোনা যায়। তিনি বলেন, ‘বুঝিস না, পলিটিক্যাল রুমে থাকিস। তোদের লিগ্যাল করাইছে, তাতে আমার … কী? আমি যদি একটা সিট না দেই, ২০২ থেকে তোদের কোন বাপ সিট দেবে? ম্যাডামরা দেবে? ক্ষমতা আছে ম্যাডামদের?’‘ম্যাডামদের ক্ষমতা আছে, আমাদের রুম থেকে একটা মেয়েকে বের করার? ইডেন কলেজের প্রিন্সিপালেরও ক্ষমতা নেই, এ রুম থেকে একটা মেয়েকে বের করার। একদম গলায় পাড়া দিয়ে ধরতে ইচ্ছা করতেছে। আগামী এক ঘণ্টার মধ্যে যে রুমে বলব, সে রুমে যাবি। আমার সঙ্গে হ্যাডাম দেখাইতে আসে!’রিভাকে আরও বলতে শোনা যায়, ‘একটা সিঙ্গেল মেয়ে যদি ওই রুমে এসে কন্ট্রোল করতে চায়, সে হোক নেত্রী, ইডেন কলেজের প্রিন্সিপাল ম্যামও কোনো মেয়ে দিতে পারবে না। এটুকু সেন্স থাকা উচিত ছিল। রুমটা যেহেতু ইডেন কলেজের প্রেসিডেন্ট নিয়ে নিছে, ইডেন কলেজের প্রেসিডেন্টের ওপরে আর কেউ নাই।’
তিনি বলেন, ‘আমি যদি রুম না দেই সুমনা মীমের বাপেরও ক্ষমতা নেই ২০১ রুম রাখা। কাউকে দিয়ে ফোন করাইয়া আমারে রাখতে পারবে না। ২০১-এ থাকে না, ওইটাও রাখতে পারবে না। চার মাস যাবৎ ভদ্রতা দেখাই, রুমে মেয়ে পাঠাই না। চ্যাটাং চ্যাটাং কথা বলিস, আটজনে লিগ্যাল থাকিস। তোরা লিগ্যাল থাকিস তাতে আমার কী… (প্রকাশ অযোগ্য)। আমার পলিটিক্যাল রুমে লিগ্যাল থাকার কোনো অপশন আছে? যাদের টাকা দিয়া উঠছিস তাদের লগে হ্যাডাম দেখাইস। আমার সাথে হ্যাডাম দেখাইতে আসিস না।’অডিওর বিষয়ে তামান্না জেসমিন রিভা বলেন, ‘মেয়েরা প্রোগ্রাম না করায় তাদের রুম থেকে শিফট করার কথা বলছি।’তিনি বলেন, ‘এটা আমার দেখভাল করা রুম। আমি এখানে যেভাবে ভালো হবে, সেভাবে শিফট করাব। এটা আমার এখতিয়ার।’এ বিষয়ে শিক্ষার্থীরা সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হয়নি।অডিওটি এখনও শোনেননি জানিয়ে রাজিয়া হলের প্রাধ্যক্ষ নারগিস রুমা বলেন, হল থেকে কাউকে বের করতে হলে তা হল কর্তৃপক্ষই দেখবে।
কেউ বের করার কথা বলতে পারে না।বিষয়টি জানেন না উল্লেখ করে কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য বলেন, হলের বিষয়টি হল কর্তৃপক্ষ দেখবে। এখানে অন্য কারো কথা বলার কথা নয়।উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ২৪ জুলাই ইডেন মহিলা কলেজের অডিটোরিয়ামে ছাত্রলীগের সবশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সে সময় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন গোলাম রব্বানী। ওই সম্মেলনের ২ বছর ৯ মাস ২০ দিন পর গত ১৩ মে ৪৮ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কমিটিতে সভাপতি করা হয় তামান্না জেসমিন রিভাকে। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন রাজিয়া সুলতানা।
Development by: webnewsdesign.com