আহত তিন শিক্ষার্থীকে পাঠানো হচ্ছে ভারতে, চিকিৎসার খরচ দেবে রাবি প্রশাসন

শনিবার, ২৫ মার্চ ২০২৩ | ১:১৯ অপরাহ্ণ

আহত তিন শিক্ষার্থীকে পাঠানো হচ্ছে ভারতে, চিকিৎসার খরচ দেবে রাবি প্রশাসন
আহত তিন শিক্ষার্থীকে পাঠানো হচ্ছে ভারতে, চিকিৎসার খরচ দেবে রাবি প্রশাসন
apps

স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষ চলাকালীন পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেটে আহত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) তিন শিক্ষার্থীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে (ভারত) পাঠাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা এম তারেক নূর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

গত ১১ মার্চ সন্ধ্যায় বিনোদপুর বাজারে স্থানীয়দের সঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। স্থানীয় লোকজনের হামলা ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছোড়া কাঁদানে গ্যাসের শেলে আহত হন দুই শতাধিক শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ওই তিন শিক্ষার্থী চোখে আঘাত পান। প্রথমে তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও পরে ঢাকার জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট চিকিৎসা দেওয়া হয়। কিন্তু সেখানেও চোখের উন্নতি না হওয়ায় ভারত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, বুধবার (২২ মার্চ) আহত ওই তিন শিক্ষার্থীকে ঢাকার জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট থেকে ফেরত পাঠানো হয়। চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট থেকে তাদের বিদেশে চিকিৎসার নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

আহত তিন শিক্ষার্থী হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্সি বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র মিসবাহুল ইসলাম, মার্কেটিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আলিমুল ইসলাম এবং আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আল আমিন। তাদের মধ্যে আল আমিন ও মিসবাহুল বুধবার রাতে রাজশাহীতে ফিরেছেন। আর মার্কেটিং বিভাগের আলিমুল ইসলাম পাসপোর্টের কাজে ঢাকায় অবস্থান করছেন।

আইন বিভাগের আল আমিন ইসলাম বলেন, সংঘর্ষের দিন আমরা বুঝতে পারিনি গুলি করা হবে। আকস্মিক আমাদের ওপর হামলা করা হয়। হামলার পর আমার শরীরের বিভিন্নস্থানে পিলেট রয়েছে। গলার নিচে প্রায় ২০-৩০ টা পিলেট রয়েছে। ঢাকায় আমাদের তেমন কোনো চিকিৎসা করা হয়নি। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করা পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিলো। তিনি আরও বলেন, আমার পরিবারের আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো না।

ফার্সি বিভাগের মেসবাহুল বলেন, ঢাকায় যাওয়ার পর নতুন কোনো চিকিৎসা হয়নি, যা হওয়ার রাজশাহীতেই হয়েছে। চোখে এখনও গুলির ‘পিলেট’ আছে। ডান চোখে কিছুই দেখতে পারছেন না। চিকিৎসক বলেছেন, তাঁরা কোনো ঝুঁকি নিতে চান না, অপারেশন করতে হবে। সে জন্য ভারতে সার্জারি করতে ও চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছেন।

আহত শিক্ষার্থী আল আমিন বলেন, ‘আমার দুই চোখে সমস্যা। এক চোখে একটু দেখতে পাচ্ছি। তাও আবার ঘোলাটে। আমাদের তিনজনের চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাবে বিশ্ববিদ্যায়ল থেকে। তারা চিকিৎসার সব খরচ দেবে।’

আল আমিনের বাবা আবদুস সেলিম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি জানিয়েছেন চিকিৎসার সব খরচ বিশ্ববিদ্যালয় দেবে। আপনি চিন্তা করিবেন না। এখন আমার ও ছেলের পাসপোর্ট করতে দেবো। ছেলের চিকিৎসার জন্য আমিও যাবো।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা এম তারেক নূর বলেন, ‘আমরা আহত শিক্ষার্থীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ঢাকার জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক ডা. পঙ্কজ আমাদের এ পরামর্শ দিয়েছেন। তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতের চেন্নাইয়ের শঙ্কর নেত্রালয়ে পাঠানো হবে। একজনকে আগে পাঠানো হবে। পরবর্তীতে দুজনকে পাঠানো হবে।’
তিনি আরও বলেন, একজনের ভিসার কাজ প্রক্রিয়াধীন। শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যয়ভার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও তাদের বিভাগ বহন করবে।

রাবির উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, আল আমিন ও মেসবাহুলের পরিবারের সদস্যরা এসেছিলেন। তাঁদের চিকিৎসার জন্য ভারতের চেন্নাইয়ের শঙ্কর নেত্রালয়ে নেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তিন শিক্ষার্থীর বিদেশে চিকিৎসার খরচ দেবে। সাধ্যের মধ্যে থাকলে শতভাগ খরচই দেওয়া হবে। বৃহস্পতিবার দু’জনকে পাসপোর্ট করতে পাঠানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ১১ মার্চ সন্ধ্যায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বাসে ক্যাম্পাসের দিকে ফিরছিলেন। বাসের সুপারভাইজারের সঙ্গে বাগবিতণ্ডার জেরে বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের সংঘর্ষ হয়। হামলা-সংঘর্ষ ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছোড়া কাঁদানে গ্যাসের শেলে আহত হন দুই শতাধিক শিক্ষার্থী। তাঁদের মধ্যে ৯০ জনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গুরুতর তিনজনকে পাঠানো হয় ঢাকায়। পুলিশের ছোড়া ছররা গুলিতে আহত ছয় শিক্ষার্থীকে রাজশাহী মেডিকেলের চক্ষু বিভাগে ভর্তি করা হয়েছিল।

Development by: webnewsdesign.com