আমার অনুপ্রেরণা’‘জীবন সংগ্রামই

শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪ | ১২:৩৭ অপরাহ্ণ

আমার অনুপ্রেরণা’‘জীবন সংগ্রামই
apps

পথিক নবী নন্দিত সংগীতশিল্পী ও গীতিকবি। কথার মাদকতা ও সুরের মূর্ছনায় তিন দশকের বেশি সময় ধরে বাংলার গানপাগল মানুষের মনে তারার মতো জ্বলছেন তিনি। সংগীতজীবনের পথচলা এবং পাওয়া না পাওয়ার গল্প নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন শিশির রোয়েদাদ।

সংগীতে শুরুটা কীভাবে হয়েছিল এবং প্রথম অ্যালবাম সম্পর্কে জানতে চাই।

৮-১০ বছর বয়স থেকে রেডিও শুনে শুনে গান করা। হাইস্কুলে ওঠার পর উম্মাদনা বেড়ে যায়। ঢাকায় আসার পর নবাইয়ের গণআন্দোলনের সাথে যুক্ত হই। শাহবাগ কেন্দ্রিক অভড়া ছিল। গানের মানুহদের সাথেও পরিচয় হতে প্রতিনিয়ত। ১৯৯২ সালের শেষ দিকে মেসের বন্ধুরা মিলে ‘নষ্ট নগর নষ্ট স্বণ্ডখ’ নামে একটি অ্যালবাম করেছিলাম। কিন্তু অ্যালবামটি সফল না হওয়ার কারণে তেমন কেউ জানে না। অফিশিয়ালি ‘অচেনা পথিক’-ই আমার প্রথম অ্যালবাম তারপর নিজের গানের বাইরেও, অন্যের কথা সুর করে এবং অন্যের কথা-সুরে গান গাইতে থাকি।

আপনার অনুপ্রেরণা কী?

আমার জীবন সংগ্রামই আমার অনুপ্রেরণা। যাদের আমি ফলো করি এবং যারা অমাকে উৎসাহিত করেন, পাশে থাকেন, তাদের দ্বারাও আমি অনুপ্রাণিত।

এত কিছু থাকতে গানই কেন বেছে নিলেন?

ছোটবেলা থেকে ইচ্ছে ছিল ভিন্ন কিছু করার। অনেকের মধ্যে আলাদা হওয়ার। সেটা যে গান দিয়ে হবে তখনো বুঝিনি। তবে ইচ্ছেপূরণের উপায়টা খুঁজতাম। তরুণ বয়সে যখন গান লিখি, গান গাই, তখনই আমার মনে হয়েছে গানই আমার ইচ্ছেপূরণের মাধ্যম হতে যাচ্ছে।

বর্তমান মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে কী বলবেন?

আমার নিজেরই কোনো ভবিষ্যৎ নেই এখানে। এমন একটা সময়ে আমরা কস করছি যেখানে ভালো খারাপ বলে কিছু নেই। হাস্যকর কিছু খুব নাম করে ফেলতে পারে। অবার শৈল্পিক কাজ মুখ থুবড়ে পড়ে থাকতে পারে যেমন খুশি তেমন সাজো একটি পরিস্থিতিতে আছি আমরা।

কনসার্টের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে চাই।

কনসার্ট করেই বেঁচে আছি। প্রতিটি কনসার্ট থেকেই নতুন কিছু শিখি। প্রতিটি কনসার্ট আমাকে নতুন করে তৈরি হতে সাহায্য করে। স্টেজ আমার
ক্লাসরুম।

জীবনের পাওয়া না পাওয়ার হিসেব করেন?

না। ওসব নিয়ে কোনো হিসেব সেই ‘অচেনা পথিক কোথা যাবি চল কোন দুঃখ নেই’ যা আমার পাওয়ার তা আমি পেয়েছি। যা আমার না, তা আমি চাই না। যা আমার তা আমার হবে, যা অন্য কারো তা আমার পাওয়ার দরকার নেই।

অনেকের ধারণা আপনি গান থেকে দূরে আছেন…

একদমই না। নতুন গান না আসা মানেই গান থেকে দূরে থাকা নয়। নিয়মিত স্টেজ শো করি। আমি শিল্পী মানুষ। গান নিয়েই আছি, গগন নিয়েই থাকতে চাই।

আপনার গান চলচ্চিত্রে পাই না কেন?

দুই তিনটা চলচ্চিত্রে আমার অ্যালবামের গন ব্যবহার করেছে। তাছাড়া চলচ্চিত্রের জন্য আমি গান করিনি। করিনি বলতে, আমাকে কেউ ডাকেনি। তবে কেউ ডাকলে অবশ্যই করব ।

কখনো ব্যান্ড করেছেন?

ফিক্সড মেম্বার নিয়ে ব্যস্ত করা হয়ে ওঠেনি। যাদের সাথে স্টেজ শো করি তাদের সাথেই প্ল্যান করি। প্রতিনিয়ত ব্যান্ড করার উদ্যোগ নিতে থাকি আর ব্যর্থ হই।

একটি আদর্শ গানে কী কী থাকা উচিত?

নান্দনিকতা, দর্শন, বিনোদন, শ্রুতিমধুরতা, ধুরতা, কথা-সূর ও সংগীতের সামঞ্জস্য যে গনে বিদ্যমান, সেটাই আদর্শ গান।

সামাজিক ক্ষেত্রে সংগীত কী ভূমিকা রাখে?

সংগীত একটি শক্তি, যা মানুষকে প্রাশান্তি দেয়, স্বপ্ন দেখায়, আনন্দ দেয়, নানা প্রকার অনুভূতি দিয়ে মনকে শান্ত রাখে। নতুন জীবন খুঁজে পেতে সাহায্য করে। গান মানুষের মনে এবং সামাজিক জীবনে গভীরভাবে প্রভাব ফেলে।

‘আমার একটা নদী ছিল’ গানটি কী পুরোটাই আপনার?

জীবনে আমি এই প্রশ্নের উত্তর সবচেয়ে বেশিবার দিয়েছি। এটা আমার তরুণ বয়সে লেখা সুর করা সম্পূর্ণ একটি গান। তখন বয়স ২২-২৩, গানটির প্রথম অংশ তৈরি হওয়ার পর কিছু জায়গাতে পারফর্ম করি। খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে গানটি। অ্যালবামে তো অসছে অনেক পরে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় বহুবার গেয়েছি। শুরুর দিকের যারা শুনেছে, তারা প্রথম অংশটুকু ঠিক রেখে অন্তরগুলো নিজের মতো করে লিখে নিজের নামেই প্রজার করেছে। এটা দেখে অবশ্য আমি একপ্রকার মজাই পেয়েছি। তাদের এতই ভালো লেগেছে যে, তারা গানটিকে নিজের করে পাওয়ার লোভ সামলাতে পারেনি।

আমার একটা নদী ছিল, বৃক্ষ যেমন, নিশি কালো মেঘ, অচেনা পথিক, পাখি উড়িয়া উড়িয়া, কষ্টের গায়ে লাল জামা, তুমি বন্ধু জলের ঢেউসহ আরো অসংখ্য জনপ্রিয় গান রয়েছে এ গীতিকবির ঝুলিতে।

 

Development by: webnewsdesign.com