আবারও অস্থির ভোজ্য তেলের বাজার

মঙ্গলবার, ২৬ এপ্রিল ২০২২ | ১১:৪৭ পূর্বাহ্ণ

আবারও অস্থির ভোজ্য তেলের বাজার
apps

আবারও অস্থির হয়ে উঠেছে ভোজ্য তেলের বাজার। গত শনিবার বিশ্বে পাম অয়েলের সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক দেশ ইন্দোনেশিয়া তেল রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই দেশের বাজারে লাগামহীনভাবে বাড়ছে সয়াবিন ও পাম অয়েলের দাম। গত দুই দিনের ব্যবধানে খুচরা বাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ও পাম অয়েলে ১৫ থেকে ১৭ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

উল্লেখ্য, গত প্রায় দুই বছর ধরে সয়াবিন ও পাম অয়েলের বাজার চড়া। দেশের বাজারে দাম কমাতে সম্প্রতি ভোজ্য তেলের বিভিন্ন পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) কমানো হয়। এতে দাম কিছুটা কমে। কিন্তু এখন আবার লাগামহীনভাবে বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দাম ।

ইন্দোনেশিয়া পাম অয়েল রপ্তানি বন্ধ করায় এক শ্রেণির ব্যবসায়ী অধিক মুনাফার লোভে বাজারে সয়াবিন, পাম অয়েলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। ঈদকে সামনে রেখে তারা ভোজ্য তেলের বাজার অস্হিতিশীল করে তোলার চেষ্টা করছে। সূত্র জানিয়েছে, এই চক্র বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়াই বাজারে দফায় দফায় সয়াবিন, পাম অয়েলের দাম বাড়াচ্ছে।

গতকাল সোমবার রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৬৫ থেকে ১৭২ টাকা ও খোলা পাম অয়েল ১৫৮ থেকে ১৬৩ টাকায় বিক্রি হয়। যা দুই দিন আগেও যথাক্রমে ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা ও ১৪০ থেকে ১৪৮ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

যদিও সরকার খুচরা বাজারে বিক্রির জন্য প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৩৬ টাকা ও পাম অয়েল ১৩০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। সরকারের বিপণন সংস্হা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) গতকাল তাদের বাজারদরের প্রতিবেদনে সয়াবিন তেল, পাম অয়েলের দাম বাড়ার বিষয়টি জানিয়েছে।

সরকারের এ সংস্হাটির হিসেবে গত বছর এই সময় দেশে খুচরা বাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন ১২০ থেকে ১২৩ টাকা ও খোলা পাম অয়েল ১০৬ থেকে ১১০ টাকা লিটারে বিক্রি হয়েছে।

ইন্দোনেশিয়ার পাম অয়েল রপ্তানি বন্ধের কারন ?

বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ার বাজারেও ভোজ্য তেলের দাম বাড়তি। ফলে দেশটি তাদের নিজেদের বাজারে সরবরাহ বাড়িয়ে দাম কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে। তবে গত শনিবার রপ্তানি বন্ধের এ ঘোষণা চলতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হবে। এখন যেসব তেল রপ্তানির জন্য পাইপলাইনে রয়েছে, সেগুলো শুধু রপ্তানি করা হবে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে। জানা গেছে, বিশ্বব্যাপী পাম অয়েলের চাহিদার ৩৯ শতাংশই ইন্দোনেশিয়া রপ্তানি করে। এর পরেই রয়েছে মালয়েশিয়া। তারা রপ্তানি করে ২৭ শতাংশ। এর বাইরে অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, চীন, আর্জেন্টিনা সীমিত আকারে পাম অয়েল উত্পাদন ও রপ্তানি করে।

দেশের বাজারে কেন দাম বাড়ছে  ?

এদিকে ইন্দোনেশিয়া রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কেন দেশের বাজারে সয়াবিন, পাম অয়েলের দাম বাড়ছে—এ প্রশ্ন ভোক্তাদের? গতকাল রাজধানীর কাওরানবাজারে বাজার করতে আসা ফরিদুল আলম বলেন, বর্তমানে বাজারে যে তেল বিক্রি হচ্ছে তা আগের আমদানি করা। এই তেল তো এখন দেশের বাজারেই আছে। তাহলে দাম বাড়বে কেন?

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্য তেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. গোলাম মাওলা বলেন, ইন্দোনেশিয়া পাম অয়েলের বড় রপ্তানিকারক দেশ। তাই তাদের রপ্তানি বন্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী এর প্রভাব পড়বে। এরই মধ্যে বাজারে ভোজ্য তেলের দাম বেড়েছে। সামনে দাম আরো বাড়তে পারে বলে জানান তিনি।

তবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা অফিসপ্রধান মো. আব্দুল জব্বার মণ্ডল গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, আমরা ভোজ্য তেলের বাজারে অভিযান পরিচালনা করব। কেউ কারসাজি করে তেলের দাম বাড়ালে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্হা নেওয়া হবে। তেল নিয়ে কোনো ধরনের নৈরাজ্য মেনে নেওয়া হবে না।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশে প্রতি বছর ২৪ লাখ টন ভোজ্য তেলের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে ২০ লাখ টন খাদ্য হিসেবে ব্যবহূত হয়। বাকি ৪ লাখ টন ব্যবহূত হয় শিল্প খাতে। আর মোট চাহিদার ৬৭ শতাংশই পাম অয়েল দিয়ে মেটানো হয়।

ইন্দোনেশিয়া রপ্তানি বন্ধের ঘোষণার পর বিশ্ববাজারে দাম বাড়ছে পাম অয়েলের। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪৫০ ডলারে, যা এক বছর আগে ছিল ৯৬০ ডলার। আর এক বছর আগে প্রতি টন সয়াবিনের দাম ছিল ১ হাজার ১০ ডলার। বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৯০০ ডলারে।

Development by: webnewsdesign.com