আফ্রিকায় আরেক ভয়ংকর ভাইরাসের সন্ধান!

বুধবার, ০৬ জানুয়ারি ২০২১ | ৭:৩১ অপরাহ্ণ

আফ্রিকায় আরেক ভয়ংকর ভাইরাসের সন্ধান!
apps

২০২০ সাল শেষ হয়ে ২০২১ শুরু হয়েছে। কিন্তু মানুষের দুঃখ-দুর্ভোগ মোটেই শেষ হয়নি। বিশ্বে প্রতিদিনই নতুন নতুন ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হচ্ছে। মানুষ মনে করতে শুরু করেছে, পৃথিবী থেকে শিগগিরই বিদায় নেবে করোনাভাইরাস মহামারি। কিন্তু এর মধ্যে নতুন করে আরও ভয়াবহ খবর সামনে এসেছে। করোনার চেয়ে আরও ভয়ংকর বেশ একটি ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া গেছে আফ্রিকায়। ‘ডিজিজ এক্স’ নামের এই ভাইরাস শিগগিরই বিশ্বজুড়ে আরও ভয়াবহ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ ব্যাপারে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন চার দশক আগে ইবোলা ভাইরাস সন্ধানী বিজ্ঞানী।

১৯৭৬ সালে ইবোলা ভাইরাস চিহ্নিত করার অন্যতম পথিকৃৎ বিজ্ঞানী ও গবেষক অধ্যাপক জাঁ-জ্যাক মুয়েম্বে তামফুম। মুয়েম্বে কিনসাসার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিকেল রিসার্চ (আইএনআরবি) পরিচালনা করে থাকেন। কেন্দ্রটি পরিচালনায় সহায়তা করে থাকে যুক্তরাষ্ট্রের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র এবং ডব্লিউএইচও। ওই কেন্দ্রটির পরীক্ষাগার থেকেই ইবোলার মতো প্রাণঘাতী রোগের প্রাথমিক হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। বিজ্ঞানী মুয়েম্বে সতর্ক করে বলেছেন, মানবজাতি নতুন ও সম্ভাব্য বেশ কয়েকটি প্রাণঘাতী ভাইরাসের মুখোমুখি হতে পারে। আফ্রিকার ক্রান্তীয় রেইনফরেস্ট থেকে এসব ভাইরাস ছড়াতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।

ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর দুর্গম একটি গ্রামে রক্তক্ষরণকারী জ্বরের লক্ষণে এক নারী আক্রান্ত হওয়ার পর ভীতি ছড়িয়ে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই সতর্কতা উচ্চারণ করেন তিনি। সম্প্রতি আফ্রিকার দেশ রিপাবলিকান অব কঙ্গোর প্রান্তিক শহর ইনগেন্ডেতে এক নারীর শরীরে দেখা দিয়েছে অজানা জ্বর ও রক্তক্ষরণের উপসর্গ। এ নিয়ে গত মাসের শেষ দিকে (২৩ ডিসেম্বর) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে সিএনএন। মঙ্গলবার নতুন করে প্রতিবেদনটির আপডেট ভার্সন প্রকাশিত হয়।

প্রতিবেদন মতে, অসুস্থ হওয়ার পর একাধিক রোগের আশঙ্কায় ওই নারীকে ইবোলাসহ নানা ভাইরাসের খোঁজে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পরও কোনো নির্দিষ্ট জীবাণুকে চিহ্নিত করা যায়নি। এ কারণে অজানা এই উপসর্গকে ‘ডিজিজ এক্স’ বা এক্স অসুখ নামে চিহ্নিত করেছেন চিকিৎসকরা। চিকিৎসকরা তার ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখছেন। ওই নারীর পরিচয়ও আপাতত গোপন রাখা হয়েছে। তবে ভালো খবর হলো, এ রোগের চিকিৎসায় ইবোলার ভ্যাকসিনকেই প্রধান চিকিৎসার ওষুধ হিসেবে প্রয়োগ করা হয়েছে এবং তাতে আপাতত এই রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে।

তার চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা ডা. দাদিন বোঙ্কোলে জানিয়েছেন, ‘যে কোনো সংক্রমণ আমাদের কাছে প্রথমে নতুন থাকে। সেটি করোনাভাইরাস হোক বা ইবোলা। এই অজানা রোগটিও আমাদের কাছে এখন নতুন। এ নিয়ে আমরা আতঙ্কিত’। বিশেষজ্ঞদের দাবি, অজ্ঞাতপরিচয় এই রোগ কোভিড-১৯ এর মতোই দ্রুত ছড়িয়ে যেতে পারে। কিন্তু তার মারণ ক্ষমতা প্রায় ইবোলার মতো অর্থাৎ ৫০ থেকে ৯০ শতাংশ। যদিও ইবোলা সদৃশ উপসর্গে ভোগা ওই নারী আপাতত সুস্থ হয়ে উঠেছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, অপ্রত্যাশিত ডিজিজ এক্স এই মুহূর্তে ধারণাভিত্তিক হলেও ব্যাপক সংক্রমণ ঘটলে বিশ্বজুড়ে ভয়াবহ মহামারি দেখা দিতে পারে।

এ ব্যাপারে অধ্যাপক মুয়েম্বে বলেছেন, ‘আমরা এমন এক পৃথিবীতে এখন বাস করছি, যেখানে নিত্যনতুন জীবাণু দেখা দিতে পারে। আর সেটাই মানব সভ্যতার পক্ষে আতঙ্কের।’ এই সব জীবাণু যে কোভিড-১৯ এর চেয়েও ভয়ংকর সংক্রমণ ঘটাতে সক্ষম হবে, তা-ও জানিয়েছেন এই অধ্যাপক। মুয়েম্বের মতে, ভবিষ্যতে পশুদেহবাহিত বেশ কিছু ভাইরাস মানব শরীরে সংক্রমিত হয়ে ভয়াবহ রোগ ছড়াবে। বর্তমানে আমেরিকার ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তায় কিনশাসা শহরে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিকেল রিসার্চ সংস্থা চালান মুয়েম্বে।

সিএনএনকে তিনি বলেন, ‘যদি আফ্রিকা থেকে কোনো জীবাণু আত্মপ্রকাশ করে, তাহলে তা গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে সময় নেবে। নতুন ভাইরাস যদি তাড়াতাড়ি ধরা পড়ে, তাহলে ইউরোপ ও সমগ্র বিশ্বে তার মোকাবিলায় নতুন কৌশল উদ্ভাবন করার সম্ভাবনা থাকবে।’ করোনা সংক্রমণ সৃষ্টিকারী সার্স কভ-২ ভাইরাস চীন থেকে উৎপন্ন হয় বলে মনে করা হয়। এই ভাইরাস আদতে বাদুড়বাহিত বলে মত বিশ্বের অধিকাংশ বিজ্ঞানীর। পশুদেহবাহিত ভাইরাস মানব শরীরে ছড়িয়ে পড়ার কারণ হিসাবে তারা অরণ্য উচ্ছেদ ব্যবস্থাকে দায়ী করেছেন।

দক্ষিণ আফ্রিকায় ভাইরাসের নতুন ভেরিয়ান্ট মোকাবিলায় ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় বিজ্ঞানীদের : এদিকে দক্ষিণ আফ্রিকায় পাওয়া করোনাভাইরাসের নতুন ভেরিয়ান্ট মোকাবিলায় প্রচলিত ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা। দক্ষিণ আফ্রিকার বিজ্ঞানীরা বলছেন, ব্রিটেনে পাওয়া করোনার স্ট্রেন বি.১.১.৭ প্রজাতিকে ভ্যাকসিনে কাবু করা সম্ভব হলেও দক্ষিণ আফ্রিকার নতুন ভাইরাসের ধরনের ওপর তা কতটা কার্যকরী হবে সে নিয়ে সংশয় রয়েছে।

নতুন ভাইরাস ভ্যাকসিন রেজিস্ট্যান্ট হয়ে উঠতে পারে জানিয়ে এ নিয়ে উদ্বেগও জানিয়েছেন তারা। দক্ষিণ আফ্রিকায় অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন ট্রায়ালে নেতৃত্ব দিচ্ছেন অধ্যাপক সাবির মাঝি। তিনি বিবিসিকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আমাদের এই উদ্বেগের পেছনে নির্দিষ্ট কারণ রয়েছে।’ এ নিয়ে ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে এবং শিগগিরই এর ফলাফল জানা যাবে বলেও জানান সাবির মাঝি। করোনার নতুন প্রজাতির নাম ‘৫০১.ভি২’।

Development by: webnewsdesign.com