উগান্ডা দেশটি সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারনা নেই। অনেককেই দেখেছি দেশটিকে নিয়ে হাসাহাসি করতে। আমাদের মতোন উগান্ডাও মুসলিম রাষ্ট্র। খুব সুন্দর একটি দেশ এবং জনগন খুব ভালো ভদ্র-অমায়িক। ওদের মুদ্রার সাম সিলিং। আফ্রিকার একটি রাষ্ট্র উগান্ডা। রাজধানী হচ্ছে কাম্পালা। উন্নয়নশীল একটি দেশ। উগান্ডার পূর্বে কেনিয়া, উত্তরে সুদান, পশ্চিমে কঙ্গো, দক্ষিণ রুয়ান্ডা। ১৯২৬ সালে দেশটির সীমানা নির্ধারিত হয় এবং এটি ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। ২ লাখ ৪২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ভূখন্ডের প্রায় ২৬ শতাংশ জলাধার। জনসংখ্যা : চার কোটি ১৪ লাখ ৮৭ হাজার ৯৬৫ জন । ঘনত্ব : প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১৫৭.১ জন।
উগান্ডার জনগণ জাতিগতভাবেই বিচিত্র। আমাদের দেশের মতোই রাষ্ট্রটি কৃষি প্রধান। উগান্ডার সাথে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক রয়েছে। বিভিন্ন বাংলাদেশি কোম্পানি বাণিজ্যিক কৃষিকাজের উদ্দেশ্যে উগান্ডায় জমি ইজারা নিয়েছে। উইন্সটন চার্চিল তার ‘মাই জার্নি টু আফ্রিকা’ বইয়ে উগান্ডাকে বলেছেন, ‘আফ্রিকার মুক্তা’। বাংলাদেশের এক টাকা উগান্ডার ৩২ টাকা। উগান্ডাতে বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া, পাকিস্তান এবং নেপালোর লোক অনেক দেখা যায়। তারা এখানে কাজ করেন।
উগান্ডার ৭০% এলাকা বনভূমি। সামরিক বাহিনীর নাম ‘’উগান্ডা পিপল্স ডিফেন্স ফোর্স’’। এই বাহিনীতে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার সদস্য সক্রিয় আছে। দেশটির আইন শৃঙ্খলা খুব কড়া। দেশটির লোকজন খুব কালো। কিন্তু সবার মন মানসিকতা খুব নরম। খুব অল্প সময়ে তারা বন্ধুত্ব করে ফেলে। প্রচন্ড রসিক একটা জাতি। উগান্ডার মানুষের খবর শোনা কিংবা বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম এফএম রেডিও। দেশটিতে প্রায় ৪৭টি রেডিও স্টেশন রয়েছে। এসব রেডিও স্টেশনের মাঝে রেডিও বেলাল অন্যতম জনপ্রিয়।
উগান্ডার জাতীয় খাবার কলা এবং ভূট্রা। বেশির ভাগ মানুষই তিনবেলা কলা ভূট্রা খেয়ে থাকে। তবে সাথে অন্যান্য খাবারও থাকে। এই দেশে যৌন ব্যবসা খুব জমজমাট। খুব খোলামেলা দেশ। এই দেশের সরকার আগ্রহ করে প্রতিটা পরিবারকে কনডম ফ্রি দেয়।
উগান্ডা এবং বাংলাদেশের স্থায়ী রাষ্ট্রদূত নেই। উগান্ডার প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি ২০০৯ সালে গিলবার্ট বুকেনিয়া ঢাকায় সফর করেছেন। উগান্ডায় সাপ্তাহিক ছুটি শনিবার। ছুটির দিন তারা খুব আনন্দ করে কাটায়। নাচ গান করে। আপনি তাদের এলাকায় বেড়াতে গেলে আপনাকে খুব খাতির যত্ন করবে। মনে হবে দীর্ঘ দিনের পরিচিত। বিশেষ অতিথিকে তারা তেলে ভাজা ফড়িং খেতে দেয়। এটা তাদের স্পেশাল ডিশ।
উগান্ডায় একটা গাছ কাটলে তিনটা গাছ লাগাতে হয়। কলা আর আনারস উৎপাদনে তারা বিশ্বে সেরা। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি গরিলা আছে তাদের দেশে ৭৪৫টি। আমস্টারডাম শহরের লোকদের মতোন উগান্ডার জনগন সাইকেল চালাতে ভীষণ পছন্দ করে। উগান্ডার অর্ধেক জনগনই ১৮ বছরের নিচে।
রাজধানী কামপালা’তেই তাদের জাতীয় মসজিদ গাদ্দাফি। লিবিয়ার প্রেসিডেন্টের নামে। আর গাদ্দাফির পতনের পর এ মসজিদকে বলা হয় ন্যাশনাল মসজিদ। এ মসজিদে একসাথে ১৫ হাজার মানুষ নামাজ পড়তে পারে। ২০০৬ সালে মসজিদের নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এই দেশে আপনি ইচ্ছা করলেই যেখানে-সেখানে ধূমপান করতে পারবেন না। করলে অনেক টাকা জরিমানা। আবার ২১ বছরের নিচে কারো কাছে সিগারেট বিক্রি করা যাবে না।
বর্তমান উগান্ডায় প্রাচীনতম মানব বসতি স্থাপন করেছিল আদিম শিকারী মানুষেরা। ডওয়ার্ড হ্রদ, আলবার্ট হ্রদ এবং ভিক্টোরিয়া হ্রদ দেশটিকে ঘিরে রেখেছে। দেশটিতে এখন মাত্র দেড়শটির মত এই প্রজাতির পাখি রয়েছে। পাখি দেখা শিল্পকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর দেশটির আয় ৬০ লাখ মার্কিন ডলার।
উগান্ডার যেতে চাইলে উগান্ডা বিমানবন্দরে পৌঁছে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে, আর ভিসা ফি মাত্র পঞ্চাশ মার্কিন মুদ্রা। আপনি উগান্ডা দেখে যত টা না মুগ্ধ হবেন, ঠিক তার থেকে অনেক বেশি মুগ্ধ হবেন মানুষের ব্যবহারে । সদা হাস্যময় মুখ আর পরোপকারী মনোভাব আসলেই প্রশংসনীয়।
Development by: webnewsdesign.com