আততায়ীর হামলার শিকার কে এই মহসেন ফখরিজাদেহ?

রবিবার, ২৯ নভেম্বর ২০২০ | ১:৪৫ অপরাহ্ণ

আততায়ীর হামলার শিকার কে এই মহসেন ফখরিজাদেহ?
apps

ইরানের শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মহসেন ফখরিজাদেহ আততায়ীর হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন। শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) তেহরান থেকে ৭০ কিলোমিটার পূর্বে আবসার্দ নামে একটি শহরে হামলার শিকার হন তিনি। এ সময় তার গাড়িতে প্রথমে বোমা নিক্ষেপ, এরপর মেশিনগান দিয়ে গুলি করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিলেও শেষ পর্যন্ত বাঁচানো সম্ভব হয়নি এ বিজ্ঞানীকে। এখন পর্যন্ত কেউ হত্যাকাণ্ডটির দায় স্বীকার করেনি। তবে ইরানের দাবি, এর পেছনে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলের হাত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তাও একই কথা বলেছেন। গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞানীকে হত্যার যোগ্য প্রতিশোধ নেয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন ইরানি কর্মকর্তারা।
কে এই মহসেন ফখরিজাদেহ?
পশ্চিমা কর্মকর্তা এবং বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচির আড়ালে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির উপায় নির্ধারণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতেন বিজ্ঞানী ফখরিজাদেহ। যদিও ইরান বরাবরই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন ফখরিজাদেহ। খুব একটা প্রকাশ্যে আসতেন না। সব সময় কড়া নিরাপত্তার মধ্যে অনেকটা অন্তরালেই বাস করতেন তিনি। এমনকি এ বিজ্ঞানীকে জাতিসংঘের পারমাণবিক তদন্ত কর্মকর্তাদের সামনেও কখনও আনেনি ইরান।মহসেন ফখরিজাদেহ কখনও বাইরে বেরোলেও তার মুখ চিনতেন, এমন মানুষ খুব কমই ছিলেন।

২০১৫ সালে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি বিষয়ে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) চূড়ান্ত মূল্যায়নে এক মাত্র ইরানি বিজ্ঞানী হিসেবে তার নাম পাওয়া যায়। জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সামরিক খাতে ব্যবহারের অংশটি দেখাশোনা করতেন ফখরিজাদেহ। ২০১১ সালে আইএইএ’র এক প্রতিবেদনে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ‘আমাদ’ পরিকল্পনার নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে তার নাম উল্লেখ করা হয়। ইসরায়েল ইরানের আমাদ পরিকল্পনাকে গোপন পারমাণবিক অস্ত্র প্রকল্প হিসেবে বর্ণনা করেছে। ২০১৮ সালে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু আমাদ পরিকল্পনার অন্যতম প্রধান হিসেবে মহসেন ফখরিজাদেহর নাম উল্লেখ করেন এবং বলেন, ‘তার নামটি মনে রাখবেন।’
নেতানিয়াহুর দাবি অনুসারে, আমাদ বন্ধ হয়ে যাওয়া পর ফখরিজাদেহ ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি সংস্থার ‘বিশেষ প্রকল্পে’ কাজ করতেন। ২০১৮ সালে ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্ট একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, ইরানের শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যা করা যেতে পারে।
ইরান কী বলছে?
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির বিষয়ে ফখরিহজাদেহকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে বহুদিন অপেক্ষা করেছে আইএইএ। ২০১০ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে ইরানের চারজন পরমাণু বিজ্ঞানী হত্যার শিকার হওয়াটাই সম্ভবত তেহরানের এত গোপনীয়তা মেনে চলার অন্যতম কারণ। তাদের শঙ্কা ছিল, আইএইএ’র সঙ্গে আলাপ হলে ফখরিজাদেহর গোপন ঠিকানা ফাঁস হয়ে যেতে পারে। বিশিষ্ট এ বিজ্ঞানী ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্পের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছে একটি সূত্র। তাকে এ প্রকল্পের জনক বলেন অনেকে।
প্রাথমিক জীবন-
২০১১ সালে ন্যাশনাল কাউন্সিল অব রেজিস্ট্যান্স অব ইরান (এনসিআরআই) নামে একটি গ্রুপ ফখরিজাদেহর ছবিসহ তার প্রাথমিক জীবনের বিষয়ে কিছু তথ্য প্রকাশ করে। যদিও এসব তথ্য এবং ছবি কোনোটারই সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি
এনসিআরআইয়ের তথ্যমতে, ১৯৫৮ সালে কোম শহরে এক শিয়া মুসলিম পরিবারে জন্ম মহসেন ফখরিজাদেহর। পড়াশোনা করেছেন ইরানের ইমাম হুসেইন ইউনিভার্সিটিতে। নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি রয়েছে তার।

ফখরিজাদেহ ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ছিলেন। একসময় উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী দায়িত্বও সামলেছেন। তার প্রতি ইরানের শীর্ষ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির পূর্ণ সমর্থন ছিল বলে জানা যায়।গোপন সূত্রের মতে, মহসেন ফখরিজাদেহর তিনটি পাসপোর্ট ছিল এবং তিনি প্রচুর ভ্রমণ করতেন। বিশেষ করে, ‘সর্বশেষ তথ্য সংগ্রহে’ এ বিজ্ঞানী এশিয়ার বিভিন্ন যেতেন বলে দাবি করা হয়েছে। সূত্র : আল-জাজিরা

Development by: webnewsdesign.com