ডা. গুলজার হোসেন উজ্জল :
ব্লাড ক্যানসার ও তার চিকিৎসা নিয়ে অনেকের অনেক রকম জিজ্ঞাসা থাকে। অনেক ভুল ধারণা, মিথ্যা, গুজবও থাকে।
ব্লাড ক্যানসার কী?
ব্লাড ক্যানসার হলো রক্ত কোষের ক্যানসার। লিউকেমিয়া, লিম্ফোমা ও মায়োলোমা প্রধানত এই তিনটি ক্যানসারই হলো ব্লাড ক্যানসার। রক্ত কোষ তৈরি হয় বোন ম্যারো বা অস্থিমজ্জায়। তৈরির পর কয়েকটি ধাপে কোষগুলো পরিণত হয়ে তারপর রক্ত প্রবাহে আসে।
যদি কোনো কারণে এই কোষগুলো অতিমাত্রায় বিভাজিত হয় এবং ঠিকভাবে পরিপক্ক না হয়ে রক্তপ্রবাহে চলে আসে, তখন এরা শরীরের কোনো কাজে তো আসেই না, উল্টো নানারকম উপসর্গ তৈরি করে। মূলত নানারকম শ্বেত রক্তকণিকাই এতে আক্রান্ত হয় বেশি।
ব্লাড ক্যানসার কেন হয়?
কারণ নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। দীর্ঘদিন দীর্ঘসময় ধরে উচ্চমাত্রার রেডিয়েশন খেলে ব্লাড ক্যানসার হতে পারে।
কেমিকেল বর্জ্য, রঙের কারখানা, ধূমপান, কীটনাশক ইত্যাদি কারণ হিসেবে কাজ করে। বিশেষ এক ধরনের ভাইরাসের কারণেও হতে পারে।
এসবের প্রভাবে শরীরের কোষাভ্যন্তরে যে জিন থাকে সেগুলোর মিউটেশন হয়, ক্রোমজমের বাহুগুলোতে কিছু ওলট-পালট হয়। তখন কোষ বিভাজনে কিছু উল্টাপাল্টা সিগন্যাল যায়। ফলশ্রুতিতে রক্ত কোষ ব্যাপক হারে উৎপাদিত হয় এবং সেগুলো পরিণত না হয়েই রক্তপ্রবাহে চলে আসে।
ব্লাড ক্যানসার ছোঁয়াচে?
একদমই না। এটা রক্তবাহিত, যৌনবাহিত, পানিবাহিত এমন কিছুই না। রোগীর সঙ্গে থাকলে, তাকে স্পর্শ করলে, খাবার খেলে, তার রক্ত গায়ে লাগলে, তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করলে এই রোগ ছড়াবে না।
লক্ষণ কী? কীভাবে বুঝব?
জ্বর, রক্তশূন্যতা, ত্বকে র্যাশ, হাড়ে ব্যথা, দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত যাওয়া এসব লক্ষণগুলো একসঙ্গে দেখা দিলে সাবধান হয়ে যাবেন। সন্দেহ করতে পারেন যে আপনার ব্লাড ক্যানসার হয়েছে।
কনফার্ম করব কী করে?
রক্তের ফিল্ম বা PBF পরীক্ষা করলেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগ বোঝা যায়। তবে নিশ্চিত হতে হলে বোনম্যারো পরীক্ষা করতে হবে। ফ্লো সাইটোমেট্রি বা ইমিউনোফেনোটাইপ সরকারি হাসপাতালে করা যায়। এগুলো হলো নিশ্চিতকরণ পরীক্ষা।
সাইটোজেনেটিক্স করা হয় রিস্ক অ্যাসেসমেন্টের জন্য। ট্রিটমেন্টের ক্ষেত্রেও সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। রোগীর ভালো হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু, কী চিকিৎসা তার জন্য ভালো হবে এসব।
লেখক : রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল।
Development by: webnewsdesign.com