অর্থমন্ত্রীর মেয়ে জামাই পরিচয়ে রাস্তা দখলের চেষ্টা: বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী

শনিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২০ | ৭:০৫ অপরাহ্ণ

অর্থমন্ত্রীর মেয়ে জামাই পরিচয়ে রাস্তা দখলের চেষ্টা: বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী
apps

চট্টগ্রামের নগরের উত্তর কুলগাঁও এলাকায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তাফা কামালের মেয়ের জামাই পরিচয়ে আবদুর রাজ্জাক নামে এক ব্যক্তি চলাচলের রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এর প্রতিবাদে শনিবার (১৪ নভেম্বর) সকাল ১১টার দিকে ভুক্তভোগীরা সোবহান সোসাইটির সেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করেছেন। এসময় ঘটনাস্থলে পুলিশের উপস্থিতিও দেখা গেছে।

মানববন্ধনে সোসাইটির বাসিন্দা দেলোয়ারা বেগম, মোঃ নিজামুল হক, মোঃ আবদুল আউয়াল, মোঃ শাহিদ আলম ও হাফেজ মোঃ ইসমাঈল বক্তব্য দেন।

মানববন্ধনে বক্তারা জানান, দীর্ঘ ১৩ বছর বন্ধ থাকার পর এ রাস্তাটি গত ৯ নভেম্বর প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে জনসাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযোগ আছে, স্থানীয় আবদুল গাফফারের ছেলে আবদুর রাজ্জাক নিজেকে অর্থমন্ত্রীর মেয়ের জামাই পরিচয় দিয়ে রাস্তাটি দিয়ে চলাচলকারী সোবহান সোসাইটির বাসিন্দাদের প্রতিবন্ধকতা তৈরির চেষ্টা করছেন। এই আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন স্থানীয় তজু মিয়ার ছেলে নুরুল ইনলাম চৌধুরী, মোরশেদ ভুঁইয়ার ছেলে শামসুল হক ভুঁইয়া।

সোবহান সোসাইটির বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, চসিকের ভ্রাম্যমাণ আদালত রাস্তাটি উন্মুক্ত করে দেয়ার পর থেকে ফের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন আবদুর রাজ্জাকসহ অন্যরা। তাদের নির্দেশে প্রতিদিন রাস্তার মুখে পাহারা দিচ্ছে কিশোর গ্যাং এর সন্ত্রাসীরা। পাশ্ববর্তী চিকনদন্ডী ইউনিয়নের জনৈক আবদুস ছোবহানের ছেলে আবদুল হাকিম এবং তার সহযোগী রহিম, করিম ও রহমানের নেতৃত্বে একদল কিশোর সন্ত্রাসী লাঠিসোটা নিয়ে রাস্তার মুখে অবস্থান করছে। তারা নারীদের ইভটিজিং করছেন। তাদের উৎপাতে সোবাহান সোসাইটির মানুষ অতিষ্ঠ। এ ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসন কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। বিষয়টি

জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রীর মেয়ের জামাই পরিচয় দেয়ার বিষয়টি এড়িয়ে যান আবদুর রাজ্জাক। সোসাইটির রাস্তায় ফের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অভিযোগ প্রসঙ্গে রাজ্জাক বলেন, আমরা আদালতে ১৪৫ ধারায় অভিযোগ দিয়েছি। এখন আদালত যেটা সিদ্ধান্ত দেয় সেটা মেনে নেব।

নগরের বায়েজিদ বোস্তামি থানার ওসি প্রিটন সরকার বলেন, যারা মানববন্ধন করেছেন তাদের প্রতিপক্ষের দুইজন (আবদুর রাজ্জাক ও আবদুস ছোবহান) আদালতে ১৪৫ ধারায় অভিযোগ দিয়েছেন। সেটি এখন তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। আপাতত দুই পক্ষকে শান্ত থাকতে বলা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী পরিচয়ে সোবহান সোসাইটির বাসিন্দাদের উপর আবদুর রাজ্জাকের প্রভাব বিস্তারের বিষয়টি জানা নেই বলে জানান ওসি।

জানা গেছে, দীর্ঘ ১৩ বছর বন্ধ থাকার পর গত ৯ নভেম্বর ব্যক্তি মালিকানাধীন সোবহান সোসাইটির রাস্তায় নুরুল ইসলাম গং কর্তৃক প্রতিবন্ধকতা হিসেবে গড়ে তোলা পাকা দেওয়ালটি অপসারণ করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। পাশপাশি রাস্তার প্রবেশ পথে গড়ে তোলা দোকান পাটও গুড়িয়ে দেয় চসিকের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, অর্থমন্ত্রীর মেয়ের জামাই পরিচয়দানকারী আবদুর রাজ্জাক কয়েকবছর আগে সোবাহান সোসাইটির পাশে ১২ গণ্ডা জায়গা কিনেন। তিনি অবৈধভাবে আশপাশে আরও অন্তত ২০০ শতক জায়গা দখল করে নিয়েছেন। রাজ্জাক নিজেকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামালের মেয়ের জামাই বলে পরিচয় দিয়ে সোসাইটির বাসিন্দাদের উপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন।

জানা গেছে, মূলত এ জায়গার মালিক ছিলেন উত্তর কুলগাঁও নতুন পাড়ার বাসিন্দা সোবহান কোম্পানি। সেখানে একটি ইটভাটা গড়ে তুলেছিলেন তিনি। পাশে একটি নিজের নামে সোসাইটিও গড়ে তুলেন। লোকজন চলাচলের জন্য তৈরি করেছিলেন একটি রাস্তাও। সেটি সোবহান সোসাইটি সড়ক নামে পরিচিত। ১৯৮৬ সালে ওই সোসাইটিতে জায়গা কিনেন জনৈকা দেলোয়ারা বেগম। তখনও রাস্তাটি বিদ্যমান ছিল। সোসাইটির পাশে অধূনালপ্ত ইব্রাহিম কটন মিল লিমিটেডের কর্মচারী সংসদের নেতা হওয়ায় এলাকায় বেশ দাপট ছিল নুরুল ইসলাম ও শামসুল হক। একসময় অন্যায়ভাবে সোসাইটির জায়গা দখলে নিতে ব্যর্থ হওয়ায় সোবহান কোম্পানির পায়ে গুলি করেছিলেন বলেও অভিযোগ আছে।

জানা যায়, অন্যায়ভাবে সোবাহান সোসাইটির জায়গা দখলের প্রতিবাদ করায় ২০০৬ সালে তৎকালীন বিএনপি জোট সরকারের আমলে সমিতির সেক্রেটারিসহ একাধিক গণ্যমান্য ব্যক্তিদের বিভিন্ন হয়রানিমূলক মামলা মোকদ্দমায় জড়িয়ে দেন তারা। এরপর তারা সোবহান কোম্পানির জায়গা দখলে নিয়ে চারিদিকে সীমানা দেয়াল নির্মাণ করে দেন। ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে সোসাইটিতে চলাচলের একমাত্র রাস্তাটি বন্ধ করে দিয়ে সেখানে পাকা দেওয়াল তুলে দেন নুরুল ইসলাম গং। রাস্তার জায়গায় আবদুস সোবহান নামে এক ব্যক্তি দোকানও গড়ে তুলেন। একমাত্র চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দেয়ায় সোসাইটির বিপুল সংখ্যক পরিবার অবরুদ্ধ হয়ে পড়।

Development by: webnewsdesign.com