অবৈধ সরকারের পতনের জন্য প্রশস্ত রাজপথে আন্দোলন : রিজভী

শনিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ৩:৫১ অপরাহ্ণ

অবৈধ সরকারের পতনের জন্য প্রশস্ত রাজপথে আন্দোলন : রিজভী
apps

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের সমালোচনা করে করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার অলি-গলি খুঁজছে।বিএনপি অলি-গলি খুঁজবে কেন? বিএনপি তো অবৈধ সরকারের পতনের জন্য প্রশস্ত রাজপথেই আন্দোলন করছে।

তিনি বলেন, ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের মাধ্যমে রাজোচিত জীবন নির্বাহ যাতে ব্যাহত না হয় সেজন্যই ওবায়দুল কাদের সাহেবরা কানাগলি দিয়ে কখনো বিনা ভোটে কখনো নিশিরাতের ভোটে ক্ষমতায় আছে। অলি-গলি ওবায়দুল কাদের সাহেবদেরকেই অবলম্বন করতে হয়, কারণ তারা ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে জনগণকে দুঃসহ জীবনযাপনে বাধ্য করে অবৈধভাবে ক্ষমতা ধরে রেখেছেন।

শনিবার পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন,ওবায়দুল কাদের সাহেবদেরকে চক্রান্তের জন্য অলি-গলি পথ অবলম্বন করতে হয় এজন্য যে, সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় এখন দুর্নীতির জয়জয়কার। রাজরোষে বিরোধী মত ও ব্যক্তিরা কারাগারে, নারকীয় উল্লাসে চলছে গুম-খুন-ক্রসফায়ার। ক্ষমতাসীনদের আশকারায় পৈশাচিক আনন্দে নারী-শিশু নির্যাতনের হিড়িক চলছে। বিচার বিভাগকে করা হয়েছে সরকারের হাতের খেলনা, প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে শুধুমাত্র সরকার ও সরকারপ্রধানের নিজস্ব বরকন্দজে পরিণত করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ এখন জনগণের আতঙ্কের নাম মন্তব্য করে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, শান্তিবিনাশী সমাজবিরোধীদের দাপট বৃদ্ধি পেয়েছে, কারণ এরা সরকারি দলের লোক। এই দুঃশাসনে জনগণের মধ্যে ক্রোধবহ্নি দাউদাউ করে জ্বলছে। এটা ইতিহাসে প্রমাণিত- অবৈধ শাসনের অবসান ঘটাতে জনগণের প্রতিজ্ঞা কখনোই নিষ্ফল হয়নি। অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকা ওবায়দুল কাদের সাহেবরা মাঝে মাঝে দুঃস্বপ্ন দেখে লাফ দিয়ে উঠে আবোল-তাবোল বকতে থাকে। কারণ আওয়ামী লীগের ঐতিহ্যই হচ্ছে গণতন্ত্র ও জনগণের সাথে প্রতারণা করা। ওবায়দুল কাদের সাহেবের হুংকারসর্বস্ব বক্তব্য যেন অন্ধকার রাতে ভুতের ভয়ে আর্তচিৎকার করা।

পাকিস্তানী গোয়েন্দাদের সাথে বিএনপি’র দহরম-মহররম বহু পুরনো তথ্যমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে রিজভী বলেন, হঠাৎ করে তথ্যমন্ত্রীর এধরণের উদ্ভট বক্তব্য জনগণের মনে ঘোরতর সন্দেহের সৃষ্টি করেছে। মনে হয় তার মন্ত্রীত্ব এখন টালমাটাল অবস্থায় আছে। আওয়ামী মন্ত্রীদের বিচারবুদ্ধি নিয়ে জনগণের মাঝে নানা কথা প্রচলিত আছে। তারা যখন খুব বিচলিত ও বেকায়দায় পড়ে তখনই তারা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব আবিষ্কার করে।

তিনি বলেন,বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আওয়ামী মন্ত্রীদের কপালে দুঃশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। বেশ কিছুদিন ধরে দেশী-বিদেশী গণমাধ্যমে আওয়ামী লীগের মুরুব্বী পরিবর্তন নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। সুতরাং সব কুল হারিয়ে সরকার মনে হয় স্বস্তিতে নেই। বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা এড়াতেই তথ্যমন্ত্রী বিদেশে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব আবিষ্কার করেছেন। আওয়ামী তথ্যমন্ত্রী হাওয়া থেকে পাওয়া তথ্য দিতেই পারঙ্গম।

আওয়ামী লীগের জন্ম ও বিকাশ দেশী-বিদেশী গোয়েন্দাদের ল্যাবরেটরিতে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, হাসান মাহমুদ সাহেব আপনি ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জীর রচিত বইটি পড়ে দেখুন, কিভাবে তিনি জেনারেল মঈনউদ্দিকে ম্যানেজ করেছিলেন শেখ হাসিনার পক্ষে। ভিন্ন দেশের রাজনৈতিক নেতা কিভাবে বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় বসাতে সহযোগিতা করতে পারে? আপনার নিশ্চয়ই মনে আছে, আপনার প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য। তিনি বলেছিলেন- আমি ভারতকে যা দিয়েছি তা সারাজীবন মনে রাখবে। কিন্তু তিনি দেশের কি কি জিনিস দিয়েছেন তা কিন্তু বলেননি।

রিজভী বলেন,আজ জাতীয় সংসদ পাবনা-৪ আসনের উপ-নির্বাচন চলছে। নির্বাচনকে ঘিরে কয়েকদিন থেকেই চলছে ধানের শীষের প্রার্থীর সমর্থক ও নেতাকর্মীদের ওপর আওয়ামী সন্ত্রাসীদের জুলুম-নির্যাতন। পাশাপাশি চলছে পুলিশী ধরপাকড়। আজ নির্বাচন চলাকালে বিএনপি’র কোনো এজেন্টকে ভোটকেন্দ্রে ঢুকুতে দেয়া হচ্ছে না। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ভোটকেন্দ্রের বাইরে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ভোটারদেরকেও ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে দিচ্ছে না। শুধুমাত্র আওয়ামী সন্ত্রাসীরা কেন্দ্রে ঢুকে ভোট দিচ্ছে। এর দু’দিন আগে থেকেই বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার শুরু হয়েছে। আটঘরিয়া থানায় তিনটি এবং ঈশ্বরদি থানায় তিনটি গায়েবী মিথ্যা মামলা দায়ের করে পুলিশী অভিযানের নামে বিএনপি নেতাকর্মীদের এলাকাছাড়া করা হয়েছে। মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে ঈশ্বরদি থানা বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক কল্লোল, পাকশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের ভাই বিএনপি নেতা বিপ্লব, সলিমপুর ইউনিয়ন বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক অহিদুল এবং সেনাবাহিনীর সাবেক সদস্য ও বিএনপি নেতা আব্দুল হাইসহ ১৫/২০ জন নেতাকর্মীকে।

তিনি আরো বলেন, চাঁদপুর সদর পৌরসভার আসন্ন মেয়র নির্বাচনে গতকাল নির্বাচনী প্রতীক আনার জন্য ধানের শীষের প্রার্থী ও তার সমর্থকরা রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে গেলে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা তাদের ওপর আকস্মিক হামলা চালায়। এই হামলায় বিএনপি’র ৪০/৫০ জন নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়। রিটার্নিং অফিসার ইভিএম এর ডেমনেস্ট্রশনের সময় দেখা যায় গ বাটন চাপ দিলে ঘ-তে চলে যায়।
এই জলজ্যান্ত জালিয়তি ইতোমধ্যে ইউটিউব-এ ছড়িয়ে গেছে। আমরা এজন্যই বলে থাকি, বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা একজন বিবেকশূন্য মানুষ। সরকারের নির্দেশ মতো তিনি দেশ থেকে সুষ্ঠু নির্বাচনের ইতিহাসকে মুছে দিতে চাচ্ছেন এবং সেই নমুনাই এখন জোরালোভাবে ফুটে উঠতে শুরু করেছে।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আইন শৃঙ্খলাবাহিনী এবং আওয়ামী সন্ত্রাসীদের এই ধরণের ন্যাক্কাজনক আচরণের আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি এবং হামলায় আহত নেতাকর্মীদের আশু সুস্থতা কামনা করছি’বলেন রিজভী।

Development by: webnewsdesign.com