২৫ বছরের অভিযাত্রা পূর্ণতা পাচ্ছে তাঁর বিশ্বকাপে

বৃহস্পতিবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২২ | ১২:৪৮ অপরাহ্ণ

২৫ বছরের অভিযাত্রা পূর্ণতা পাচ্ছে তাঁর বিশ্বকাপে
apps

মাত্র ১৩ বছর বয়স। এই বয়সে মানুষ কেবলই স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। ভবিষ্যৎ নিয়ে বাস্তব ভাবনার চেয়ে অবশ্য আকাশকুসুম কল্পনাই বেশি করা হয়। তবে কেউ কেউ ব্যতিক্রমও হন। স্তেফানি ফ্রাপার তেমনই একজন। যে বয়সে ঘরে বসে স্বপ্ন বোনার কথা, সে বয়সে স্তেফানি এমন এক স্বপ্নের পথে যাত্রা শুরু করেন, যা নিয়ে তাঁর আগে কম নারীই ভাবতে পেরেছিলেন।

হ্যাঁ, ১৩ বছর বয়সে কোনো কিশোরীর রেফারিং ক্যারিয়ার শুরু করাকে রোমাঞ্চকর বললে কমই বলা হয়। এমন কিছু শুরু করা যতটা কঠিন, সেই পথে নিজেকে টিকিয়ে রাখা আরও বেশি কঠিন। সেটি পেরেছিলেন বলেই স্তেফানি এখন ইতিহাস গড়ার অপেক্ষায়।

বিশ্বকাপ ফুটবলে প্রথম নারী রেফারি হিসেবে আজ অভিষেক হবে তাঁর। স্তেফানির নেতৃত্বে যাঁরা থাকবেন, সেই অন্য রেফারিরাও নারী। তাঁর সঙ্গী হবেন ব্রাজিলের নাউজা ব্যাক এবং মেক্সিকোর কারেন দিয়াজ মেদিনা।

কঠিন এক পথে যাত্রা শুরু করলেও স্তেফানি হাল ছাড়ার মানুষ ছিলেন না। বাবার কাছ থেকেই তিনি ফুটবলের নেশাটা পেয়েছিলেন। খেলা ও রেফারিং—দুটোই শুরু করেছিলেন একসঙ্গে। শনিবার নিজে খেলতেন, রোববার ম্যাচ পরিচালনা করতেন। অবশ্য একটা সময় তাঁকে রেফারিং ছাড়া নিয়েও ভাবতে হয়েছিল। স্তেফানির বয়স তখন ১৮ বছর।

তত দিনে তাঁর জাতীয় পর্যায়ে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের খেলাও পরিচালনা করা হয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পর খেলা ও রেফারিংয়ের মধ্যে একটাকে বেছে নিতে হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত স্তেফানির সিদ্ধান্ত কী ছিল, তা আর না বললেও চলছে। ক্যারিয়ারের গুরুত্বপূর্ণ এ সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘সে সময় নারীদের ফুটবল এতটা বিকশিত হয়নি। তাই আমি খেলা থামিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। তবে বিশ্বকাপে প্রথম নারী রেফারি হব, এমন কিছু ভাবিনি।

স্তেফানির ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় মোড়গুলোর একটি আসে ২০১১ সালে, যখন তিনি ফ্রান্সের পুরুষদের ফুটবলে তৃতীয় বিভাগের খেলা পরিচালনা করতে শুরু করেন। তিন বছর পর ২০১৪ সালে লিগ ২-এর প্রথম নারী রেফারি হন স্তেফানি। পরের বছর কানাডায় অনুষ্ঠিত নারী বিশ্বকাপে ম্যাচ পরিচালনা করেন। ২০১৯ সালে স্তেফানির রেফারিং নিয়ে ইউএস অরলান্সের মিডফিল্ডার পিয়েরে বোদি বলেছিলেন, ‘লিগ ২–এ সে সেরা রেফারি। তার স্বর শান্ত, তবে সে দারুণ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন। তার শব্দচয়নও নিঁখুত।

২০১৯ সালের এপ্রিলেই লিগ আঁর প্রথম নারী রেফারি হিসেবে ইতিহাস গড়েন স্তেফানি। উয়েফাও সে সময় তাঁর ওপর চোখ রাখে। সে বছইর ইস্তাম্বুলে উয়েফা সুপার কাপে লিভারপুল-চেলসি ম্যাচ পরিচালনার সুযোগ পান স্তেফানি।

পরের বছরের ডিসেম্বরে তিনি প্রথম নারী রেফারি হিসেবে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের দায়িত্ব পালন করার মধ্য দিয়ে কাতারে তাঁর আগমনটা এক রকম নিশ্চিত হয়েই ছিল। আর এখন তো মাঠে নেমে ইতিহাস গড়ার অপেক্ষায়। ফুটবলের সবচেয়ে বড় মঞ্চে ৯২ বছরের ইতিহাসে প্রথম নারী রেফারি হিসেবে অভিষেক হবে তাঁর। যার পেছনে রয়েছে ২৫ বছরের লম্বা এক যাত্রার গল্প, যা এখন ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থে’ গিয়ে পূর্ণতা পাওয়ার অপেক্ষায়।

নিজের ম্যাচ পরিচালনার কৌশল নিয়ে স্তেফানি বলেন, ‘আপনি সারাক্ষণ খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না। আপনাকে ভারসাম্য খুঁজে বের করতে হবে। আমি তাদের সঙ্গে কথা বলতে পছন্দ করি। তবে বেশির ভাগ সময় তারা উত্তেজিত থাকে। সে সময় আপনি তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন না। কখনো আপনাকে হাসতে হয়, কখনো সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা দিতে হয়। পাশাপাশি শরীরী ভাষার বিকাশও জরুরি, যা খেলোয়াড়েরা শব্দের চেয়েও ভালো বুঝতে পারে।

আজ রাতে আল বায়ত স্টেডিয়ামে জার্মানির বাঁচা-মরার ম্যাচে চোখ থাকবে স্তেফানির ওপরও। তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপেই যে থাকবে নতুন ইতিহাস গড়ার গৌরব!

Development by: webnewsdesign.com