১৯৬০ এর দশক আগের মস্তিষ্কে ‘অক্ষত কোষ’ পেলেন গবেষক

মঙ্গলবার, ০৬ অক্টোবর ২০২০ | ৮:৩৬ অপরাহ্ণ

১৯৬০ এর দশক আগের মস্তিষ্কে ‘অক্ষত কোষ’ পেলেন গবেষক
১৯৬০ এর দশকে এখানেই পাওয়া যায় তরুণের মরদেহ
apps

হাজার বছর ধরে মানুষের মস্তিষ্ক কখনো এক জায়গায় বসে কাজ করেনি। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত ছিল। মগজ যেমন কাজ করছিল, কোষগুলোও সেই সঙ্গে ব্যস্ত ছিল। দিন গিয়ে বছর পেরিয়েছে। হাজার বছর পর হাজার বছর আগের মানুষের মগজ বা তার কোষের চিন্তা কেউ করতে যাবে না, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ইতালি মাউন্ট ভিসুভিয়াসের একদল গবেষক হেঁটেছেন অন্যপথে। তারা ২ হাজার বছর আগে অর্থাৎ ১৯৬০ দশকের এক যুবকের মস্তিষ্কের কোষ অক্ষত অবস্থায় পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন।

ইতালি মাউন্ট ভিসুভিয়াসে ২ হাজার বছর আগে অগ্ন্যুৎপাতে মারা গিয়েছিল এক তরুণ। তিনি খ্রিষ্টপূর্ব ৭৯ সালে অগ্ন্যুৎপাতের কারণে ছাইয়ের নিচে ছাপা পড়েছিলেন। হারকিউলানিয়াম শহরে ১৯৬০ এর দশকে খননকালে মরদেহটি পাওয়া যায়। তার দেহটি একটি কাঠের বিছানায় উপুড় হয়ে শোয়া অবস্থায় পাওয়া যায়। গবেষকেরা বলছেন, মৃত্যুকালে এই তরুণের বয়স ছিল ২৫ এর মতো।

ধারণা করা হচ্ছে, সম্রাট আগাস্টাসের উপাসনায় ভবনটি নিবেদিত ছিল। ইউনিভার্সিটি অব নেপলস ফেডরিকো টু’র ফরেনসিক নৃবিজ্ঞানী পিয়ের পাওলো পেট্রোন এই গবেষণায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি সিএনএনকে জানান, ২০১৮ সালে গবেষণাকালে একটি খুলির মধ্যে ‘কাচের মতো চকচকে কিছু’ দেখতে পান। চলতি বছরের শুরুতে নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে এক গবেষণাপত্রে এ বিষয়ে বিস্তারিত লেখেন।
তিনি জানান, আগ্নেয়গিরির গরম ছাইয়ে দ্রুতই তরুণের মস্তিষ্ক তরলে পরিণত হয়, এরপর আবার দ্রুত ঠান্ডা হয়। এ কারণে চমৎকারভাবে সংরক্ষিত হয়ে আছে দুই হাজার বছর ধরে। পেট্রোন বৈদ্যুতিক অণুবীক্ষণের যন্ত্রের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে জানান, এত ভালোভাবে সংরক্ষণ অসম্ভব, যা আগে কোথাও দেখা যায়নি। এমনকি মস্তিষ্কের মতোই মেরুদণ্ডের স্নায়ু কোষ একদম অবিকৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে রোমা ট্রি ইউনিভার্সিটির আগ্নেয়গিরিবিদ গিডো জিওর্ডানো জানান, ওই স্থানে থাকা কাঠ বিশ্লেষণ করে দেখেছেন অগ্ন্যুৎপাতের পর ওই স্থানের তাপমাত্রা ছিল ৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি। যা ‘নিখুঁত সংরক্ষণের’ জন্য উপযুক্ত ও ‘অভূতপূর্ব’ ঘটনা। প্রাচীন যুগের মানুষ সম্পর্কে অনেক কিছু জানার পথ খুলে গেল বলেও তার মন্তব্য। অথচ একসময় একে অসম্ভব মনে করা হতো।
গবেষকদের মাঝে নানা শাস্ত্রের লোক রয়েছে। নৃবিজ্ঞানী থেকে শুরু করে প্রত্নতাত্ত্বিক, জীববিজ্ঞানী, ফরেনসিক বিজ্ঞানী, নিউরোজেনটিক বিশেষজ্ঞ ও গণিতবিদ-কে নেই! পেট্রোন জানান, নির্দিষ্ট তাপমাত্রার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি আগ্নেয়গিরির ছাইয়ের শীতলতার হারসহ নানান জটিলতা প্রক্রিয়া সম্পর্কে আরও জানতে চান তারা। সেখানে পাওয়া দেহাবশেষ ও তাদের জিন থেকে প্রোটিন বিশ্লেষণ করারও আশা করছেন।

এ ছাড়া ভিসুভিয়াসের ভবিষ্যৎ ঝুঁকি নিয়ে গবেষণার পথ খুলে দেবে। নেপলসসহ এ অঞ্চলে প্রায় ৩ কোটি মানুষ এর উপকার পাবে।

Development by: webnewsdesign.com