নীলফামারীর সৈয়দপুরে খড়খড়িয়া ও ঘৃণাই করতোয়া নদীর বাঁধের মাটি চুরি করছে স্থানীয় একটি চক্র। ওই দুই নদীর চার থেকে পাঁচ কিলোমিটারজুড়ে কমপক্ষে ৫০টি স্থানে মাটি চুরির ঘটনা ঘটছে। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে শহর রক্ষা বাঁধ। এ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে ট্রাক্টর, ট্রলি ও ড্রাম ট্রাক। বাঁধের চোরাই মাটি ইটভাটায় ও শহরের বিভিন্ন স্থাপনার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এভাবেই অপরাধ জগতের হোতারা কামিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। মাটি চুরি ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড সৈয়দপুর বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. রাইফুল হাসান রনি বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা উল্লেখ করে সৈয়দপুর থানায় মামলা করেছেন। কিন্তু তারপরও মাটি চুরি ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না।
মামলায় উল্লেখ করা হয় খড়খড়িয়া নদীটি নীলফামারী সদরের সিংদই বিল হতে উৎপন্ন হয়ে দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ীর ছোট যমুনা নদীতে মিলিত হয়েছে। এ নদীর বাম তীরটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। কারণ এই অংশে বিমানবন্দর, সেনা নিবাস, দেশের বৃহৎ রেলওয়ে কারখানাসহ সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। মাটি চুরির কারণে বর্ষাকালে বাঁধটি বন্যার তোড়ে ভেঙে গেলে ওই অংশ পানিতে তলিয়ে যাবে। বিশেষ করে ভৌগোলিক কারণে খড়খড়িয়া নদীর বন্যার পানির স্তর থেকে সৈয়দপুর শহরটি প্রায় এক মিটার নিচু। এ অবস্থা ঘৃণাই করতোয়া নদীর বেলায়ও ঘটেছে। এ নদীটিরও ডান তীরটি বেশ স্পর্শকাতর। স্থানীয়রা জানান, এই নদীর এক কিলোমিটারের মধ্যে সৈয়দপুর বিমানবন্দর ও সেনানিবাসের অবস্থান। বর্ষাকালে নদীটি টইটুম্বুর হয়ে যায়। বাঁধে মাটি না থাকলে পানির তীব্র স্রোতে বাঁধ ভেঙে পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়বে। এতে করে শহর ও গ্রাম মিলিয়ে কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে যেতে পারে। হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি পানিতে নিমজ্জিত হবে। ফলে ফসল, মানুষ আর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা পড়বে হুমকিতে। এজন্য বাঁধের মাটি চোরের হাত থেকে রক্ষা করতে স্থানীয়রা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ গ্রাম পুলিশের টহলদারি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সৈয়দপুর বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আমিনুর রশিদের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, বাঁধের মাটি পাহারা দেয়ার মতো আমাদের লোকবল নেই। তাছাড়াও স্থানীয় সমাজহিতৈষী ব্যক্তিরা জনস্বার্থে সরকারের সম্পদ রক্ষার্থে ভূমিকা না নিলে বাঁধের মাটি চোরের হাত থেকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। এজন্য তিনি ঘটনাস্থলে পুলিশি টহল বাড়ানোসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অনুরোধ করেছেন। একইসঙ্গে তিনি গ্রাম পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিদেরও ভূমিকা রাখতে সহযোগিতা কামনা করেন। এ ব্যাপারে সৈয়দপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসনাত থানায় অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বাঁধের মাটি চোরের হাত থেকে রক্ষা করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করা হচ্ছে।
Development by: webnewsdesign.com