রমিতা বেগম বগুড়ার শেরপুর উপজেলার পল্লী উন্নয়ন একাডেমির বাংড়া এলাকার সুরুজ আলী বাদশার স্ত্রী। তিনি একই জেলার ধুনট উপজেলার সুরক গ্রামের অফের পরামাণিকের মেয়ে। ৫/৬ মাস আগে বাসযোগে টাঙ্গাইল থেকে শেরপুর যাওয়ার সময় পথ ভুল করে লালমনিরহাটে চলে যান রমিতা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, চার মাস আগে লালমনিরহাট হাসপাতালের ভেতরের গেটের সামনে পলিথিন বিছিয়ে তার ওপর শুয়ে থাকা অজ্ঞাতপরিচয় এক নারীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন সিনিয়র স্টাফ নার্স চামেলী বেগম। পরে কয়েক দিন চিকিৎসার পরে নিরুদ্দেশ হলেও পুনরায় সদর হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তি হলে তাকে চিকিৎসা দেয়া হয়।
পরীক্ষা নিরীক্ষা করে চিকিৎসকরা নিশ্চিত হয়েছেন ওই নারী আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। হাসপাতালে কর্মরত নার্স ও চিকিৎসকরা অনেকভাবে তার পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। এ ঘটনায় সদর থানায় একটি জিডিও করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
রোববার সকালে হাসপাতালের গাইনী ওয়ার্ডে চার মাস ধরে চিকিৎসা নেয়া ‘কে এই অন্তঃসত্ত্বা’ শিরোনামে প্রথম একটি সচিত্র সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর দেশের প্রায় সব গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রকাশিত হয়। ফলে তার গ্রামের লোকজনের দৃষ্ঠিগোচর হলে স্ত্রীর খোঁজে মঙ্গলবার রাতে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ছুটে আসেন তার স্বামী সুরুজ আলী বাদশা। স্বামী ও একমাত্র সন্তান রতন মিয়াকে কাছে পেয়ে বেজায় খুশি রমিতা বেগম।
স্বামী সুরুজ আলী বাদশা জানান, প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে বাবা মা হারা রমিতা বেগমকে বিয়ে করেন চার বছর আগে। কাজের সন্ধানে স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে টাঙ্গাইলে বসবাস করতেন তিনি।
দীর্ঘ ৫/৬ মাস আগে খালার বাড়ি শেরপুরের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়ে ভুল করে বাস করে লালমনিরহাট চলে যান। নিখোঁজ হন দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রমিতা। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় খোঁজাখুঁজি করে ব্যর্থ হন তিনি। অর্ধশিক্ষিত সুরুজ আলী স্ত্রীর নিখোঁজের জন্য টাঙ্গাইল থানায় জিডি করতে গিয়ে ছবি না থাকায় জিডি নেয়নি পুলিশ।
অবশেষে স্ত্রীর আশা ছেড়ে দিয়ে সন্তানকে নিয়ে নিদারুন কষ্টে জীবন যাপন করেন। অবশেষে স্থানীয়দের মাধ্যমে অনলাইনে স্ত্রীর ছবিসহ সংবাদ দেখে সন্তান রতনকে নিয়ে ছুটে আসেন হাসপাতালে। স্ত্রীকে পেয়ে আনন্দিত সুরুজ আলী বাদশা।
সুরুজ আলী বাদশা বলেন, ছোট বেলায় বাবা মাকে হারিয়ে দাদা জিল্লুর রহমানের কাছে বড় হন রমিতা। তার বাবার রেখে যাওয়া তিন একর জমির মালিক হতে চাচারা নির্যাতন করে তাকে মানসিক ভাবে অসুস্থ করে তুলে। পায়ে শিকল বেঁধে রাখেন চাচারা। বিয়ের পরেও স্বামী স্ত্রী রমিতার চাচা আবুল কালামের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ফলশ্রুতিতে জীবন বাঁচাতে স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে টাঙ্গাইলে বসবাস শুরু করেন বলেও জানান সুরুজ আলী বাদশা।
ছয় মাস পর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রমিতাকে খুঁজে পেয়ে সব গণমাধ্যমকর্মী ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন সুরুজ আলী। স্বামীকে কাছে পেয়ে নিজের ঠিকানা বলতে শুরু করেন রমিতা বেগম। একমাত্র সন্তানকে কোলে নিয়ে পরম যত্ন শুরু করেন।
রমিতাও দাবি করেন সুরুজ আলী বাদশা তার স্বামী ও রতন মিয়া তার একমাত্র সন্তান। এখন স্বামীর সঙ্গে চলে যেতে বেশ আগ্রহ দেখাচ্ছে রমিতা। কিন্তু সদর থানায় জিডি থাকায় পুলিশের কিছু আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাকে ছাড়পত্র দিয়ে স্বামী সন্তানের সঙ্গে পাঠাবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।হাসপাতালে সরকারি সহায়তার পাশাপাশি রমিতা বেগমকে আর্থিকভাবে ওষুধ ক্রয়সহ অন্য সহায়তা করছে সমাজসেবা অধিদফতর।
সদর হাসপাতালের সমাজসেবা অফিসার এরশাদ আলী কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, অজ্ঞাত রমিতার পরিচয় সনাক্তের জন্য মানবিকতার পরিচয় দিয়ে সর্বপ্রথম সচিত্র সংবাদ প্রকাশ করে। এরপর অনেক গণমাধ্যমে বেশ ফলাও করে প্রচার করায় রমিতার পরিচয় সনাক্ত করা এবং তার পরিবারের কাছে পৌছে দেয়া সম্ভব হচ্ছে। রমিতাকে একটি নতুন পোশাক ও যাতায়াতের খরচ বহন করবে সমাজসেবা অধিদফতর।
লালমনিরহাট সদর থানার ওসি মাহফুজ আলম বলেন, রমিতা বেগম ও তার স্বামীর পুরো ঠিকানার সঠিকতা যাচাইসহ জিডি মূলে কিছু আনুষ্ঠানিকতা শেষে স্বামীর কাছে রমিতাকে হস্তান্তর করা হবে।
Development by: webnewsdesign.com