সিলেটের গোলাপগঞ্জে স্ত্রীর বিরুদ্ধে ডিআইজি বরাবরে প্রবাসী স্বামী অভিযোগ দায়ের করেছেন। ৭ সেপ্টেম্বর গোলাপগঞ্জ থানার ফুলবাড়ী পূর্বপাড়ার মৃত আব্দুল হামিদের পুত্র প্রবাসী মো: আকলিছ উদ্দিন স্ত্রীসহ ৭ জনকে আসামী করে এই অভিযোগটি দায়ের করেন।
আসামীরা হচ্ছে, সিলেট এয়ারপোর্ট থানার বাদাম বাগিচা সেতু বন্ধন ৩২/৪ নং বাসার মৃত আরব আলী কন্যা ও প্রবাসী আকলিছ উদ্দিনের স্ত্রী মোচ্ছা: বেদানা বেগম (৩২), তার ভাই সামাদ আহমদ (২৮), আব্দুল আহাদ (৩০), তার মা রিনা বেগম (৫০), গোলাপগঞ্জ ফুলবাড়ী পূর্বপাড়ার সুর মিয়ার পুত্র জায়েদ আহমদ (৩০), একই এলাকার আমিন আলীর পুত্র খালেদ আহমদ (৫০) ও খালেদ আহমদের পুত্র রাসেল আহমদ (২৪)।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০০০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারী শুক্রবার আখলিছ উদ্দিন ও বেদানা বেগম পরস্পরের নিজ সিন্ধান্তে প্রেমের সম্পর্কে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এরআগে ১৯৮৫ সালে তাদের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এরপর ১৯৯৪ সালে আকলিছ উদ্দিন কুয়েত চলে যান। কুয়েত থেকে তিনি বেদানা বেগমের সাথে চিঠির মাধ্যমে প্রেমের সম্পর্ক চালিয়ে যেতেন।
চিঠিগুলো তিনি কুয়েত থেকে বেদানা বেগম এর কাছে আরবআলী কেয়ার অফ কালা মিয়ার চায়ের দোকান, বাসা নং ৩২, সিলেট ৩১০০ ঠিকানায় পাঠাতেন। চিঠি আদান-প্রদানের মাধ্যমে বেদানা বেগম এর পারিবারিক আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ার কারনে ১৯৯৭ সালে প্রেমিকার বাবাকে ২টি রিকশা ক্রয় করে দেন প্রবাসী আকলিছ উদ্দিন। তারপর তাদের মধ্যে চিঠির মাধ্যমে প্রেমিকার পুরো পরিবারের সবার সাথে তার সু-সম্পর্ক গড়ে উঠে প্রবাসী আকলিছ উদ্দিনের।
এরপর থেকে প্রেমিকা বেদানার পরিবারকে প্রবাস থেকে অনেক অর্থ সহায়তা দিয়ে পরিবারকে চালিয়ে নিতেন প্রেমিক আকলিছ উদ্দিন। তারপর ২০০০ সালে ১৮ ফেব্রুয়ারী আকলিছ উদ্দিনের পরিবারের অসমর্থনে বেদানা বেগমকে বিবাহ করেন। বিবাহ করার পর থেকে আকলিছ উদ্দিনের মানিব্যাগ থেকে প্রতিনিয়ত টাকা চুরি করতেন বেদানা বেগম। এসব সহ্য করেও এই অবস্থায় তাদের সংসার সুখেই চলছিল। বিবাহের ১০ বছর পর ২০১১ সালে তাদের সংসারে প্রথম একটি কন্যা সন্তান জন্ম নেয়, যার নাম ইয়াসমিন বেগম বর্তমান বয়স ১০ এবং ২০১৫ সালে দ্বিতীয় সন্তান পুত্র রোহান মিয়া জন্ম হয় যার বর্তমান বয়স ৬ বছর।
প্রবাসী আকলিছ উদ্দিন কুয়েতের সরকারী চাকুরী করতেন এবং সরকারী নিয়ম অনুযায়ী প্রতি দু’বছর অন্তর অন্তর দেশে ছুটিতে আসতেন। প্রবাসে যা রোজগার করেছেন তা সবই বেদানার এ্যাকাউন্টে পাঠাতেন। প্রবাসাী আকলিছ উদ্দিন বেদানার প্রেমে অন্ধ হয়ে বেদানাকে বিবাহ করে এবং বিশ^াস করে জীবনের সব উপার্জনকৃত অর্থ সম্পদ তার কাছেই রেখে দিতেন। কিন্তু বেদানা বেগম ছিলেন তার উল্টো।
বেদানা বেগমের এ্যাকাউন্টে রক্ষিত অর্থ যাতে তিনি মারা যাওয়ার পরেও প্রবাসী আকলিছ মিয়া দাবী না করতে পারেন সে জন্য কৌশলে এ্যাকাউন্টের নমিনি বেদানা বেগমের মা রিনা বেগমকে কৌশলে দিয়ে দেন। অর্থ্যা আকলিছ উদ্দিন বিশ^াস করে বেদানা বেগমকে সব কিছু দিয়ে গেলেও বেদানা বেগমের মনে ছিলো তার ঠিক বিপরিত।
প্রবাসী আখলিছ উদ্দিন ২০০৬ সালে বেদানা বেগমের বোন রোকসানা বেগমকে নিজ খরচে বিবাহ দিয়ে দেন এবং তারপরবর্তী ২০০৭ সালে বেদানার ভাই আহাদকে ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে একটি সিএনজি অটোরিকশা ক্রয় করে দেন।
২০১২ সালে বেদানা বেগমের বাড়ীতে দু’তলা একটি বিল্ডিং তৈরী করে দেন। যার খরচ হয়েছে ৩০ লক্ষ টাকা। শুধু বেদানা বেগমের ভালোবাসায় এতো কিছু করেছেন আকলিছ উদ্দিন। বেদানা বেগমের বোন রোকসানা বেগমের স্বামীর ঘর বানানোর জন্য ৬০ হাজার টাকা আর্থিকভাবে সহযোগীতা করেন প্রবাসী আকলিছ উদ্দিন।
এরকমভাবে আকলিছ উদ্দিন তার স্ত্রী বেদানা বেগমের পুরো পরিবারকে আর্থিক ও মানবিক সহায়তা দিয়ে আসছিলেন আকলিছ উদ্দিন। প্রবাসী আকলিছ উদ্দিন প্রবাসে রোজগারকৃত সব অর্থ সম্পদ দেশে পাঠাতেন। তার কোন হিসাব বেদানা বেগমের কাছে চাননি তিনি। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বেদানা বাবার বাড়ীতে তার সম্পদের মজুত রাখতে থাকেন।
হঠাৎ করে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারীর ২০ তারিখ প্রথম কুয়েতে করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। আখলিছ উদ্দিন পাশের রুমের দু’জন লোক করোনায় মারা যায়। মারা যাওয়ার পরে আকলিছ উদ্দিনসহ রুমের সবাইকে কুয়েতের হাসপাতালে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয় ৩দিন। ৩দিন পর হঠাৎ করে আকলিছ উদ্দিন অসুস্থ হয়ে পড়েন। ডাক্তারী পরিক্ষা নিরিক্ষা করে বলে আপনার হার্নিয়া রোগ হয়েছে।
আপনাকে দেশে যেতে হবে। অপারেশন লাগবে। তখন আকলিছ উদ্দিন বেদানা বেগমতে বলেন, কোম্পানী আমাকে দেশে পাঠাইয়া দিতেছে। আমি তোমার নামে এত বছর ধরে যে কুয়েত থেকে টাকা পাঠাইলাম আমাকে একটু হিসাব দাও। তখন বেদানা কোন হিসাব দেয় না। তখন আখলিছ উদ্দিনকে জানে মেরে ফেলার হুমকী-দামকী ও তালাক দিয়ে দিবে বলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। তখন আকলিছ উদ্দিনকে তালাক দিতে বলে। আকলিছ উদ্দিন খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারেন বেদানা বেগম পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে ব্যস্ত।
তখন বেদানা বেগমের সাথে কথাকাটাকাটি হয়। আকলিছ উদ্দিনকে টেলিফোনে হুমকি দেয় দেশে আসলে মেরে ফেলবে। যদি আকলিছ উদ্দিন টাকার হিসাব চায়। এক পর্যায়ে আকলিছ উদ্দিন ২০২০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর তারিখে ডিভোর্স বা তালাকের নোটিশ পাঠান। একটি সিটি মেয়র আরিফুল হকের কাছে এবং আরো একটি বেদানা বেগমের কাছে প্রায় ১ লক্ষ টাকা খরচ করে কুয়েত থেকে পাঠান আকলিছ উদ্দিন। তালাক নোটিশ দেওয়ার পরে আখলিছ উদ্দিন খুব বেশী অসুস্থ হয়ে যায়। পরবর্তীতে তালাক নোটিশ পাওয়ার পর বেদানা বেগম গ্রামে পঞ্চায়েত নিয়ে বৈঠক ডাকেন।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন গোলাপগঞ্জ পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জামিল আহমদ চৌধুরী এবং গ্রামের অন্যান্য মুরব্বীগণ। সবাই সিন্ধান্ত করেন বেদানা বেগমকে তাদের বাড়ি সিলেট বাদাম বাগিচায় পাঠাইয়া দেওয়া হবে এবং আখলিছ উদ্দিন বাচ্চাদের জন্য প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা দিতে হবে। আকলিছ উদ্দিন সালিশের সিন্ধান্ত অনুযায়ী প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা বাচ্চাদের জন্য খরচ পাঠান।
গত ০৭ জুলাই ২০২১ ইং তারিখে কুয়েত থেকে দেশের আসার পর ২/৩ বার গ্রামের পাঞ্চায়েত বসে বিষয়টির আপোষ করার জন্য বৈঠকে বসেন। আকলিছ উদ্দিন বৈঠকে বা আপোষ করতে রাজী থাকলেও বেদানা বেগম বলে আমাকে ২/৩ দিন সময় দেন। বেদানা বেগম ২/৩ দিন সময় চাওয়ার পরে আর বৈঠক বসেনি। উল্টো প্রবাসী আকলিছ উদ্দিনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে।
এদিকে, গোলাপগঞ্জ থানার মামলা নং-২০, জি.আর নং-২২৭, তারিখ-১৯-০৮-২০২১ ইং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ সালের ৩ এর ১১(গ)/৩০। মামলা’টি সম্পূর্ন মিথ্যা বলে এলাকাবাসী দৈনিক বাংলাদেশ মিডিয়া’কে জানান।
এলাকাবাসী দাবি করেন, বেদানা বেগম ২ বছর যাবত সিলেটের এয়ারপোর্ট থানাধীন নিজ পৈতৃক বাড়ীতে বসবাস করছেন যেখানে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী ছাড়া কিছুই না। ভুক্তভোগী আকলিছ উদ্দিন এই মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার সহ হয়রানীর বিষয়ে সিলেটের স্থানীয় প্রশাসনসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ও প্রবাসী কল্যান মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
এ ব্যাপারে আজ ১২ সেপ্টেম্বর রবিবার বিকেলে অভিযুক্ত বেদানার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানি না।
Development by: webnewsdesign.com