সোহানা সাবা ‘সবকিছু এখনও ফুরিয়ে যায়নি’

বৃহস্পতিবার, ০৮ অক্টোবর ২০২০ | ৩:৩৫ অপরাহ্ণ

সোহানা সাবা ‘সবকিছু এখনও ফুরিয়ে যায়নি’
apps

মুক্ত বিহঙ্গের মতোই তার চলাফেরা। কোনো গণ্ডির মধ্যে নিজেকে আটকে রাখতে চান না। তার পরও সোহানা সাবা কখনও স্রোতের জোয়ারে গা ভাসাননি। কাঙ্ক্ষিত চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে কুড়িয়ে নিতে চেয়েছেন দর্শকের ভালোবাসা। সে চেষ্টায় ব্যর্থ হননি বলেই তিনি হয়ে উঠেছেন সময়ের অন্যতম একজন অভিনেত্রী।

পর্দার প্রিয়মুখের দিকে তাকিয়ে সোহানা সাবাও ভাবতেন, কী করে তারা এমন অনবদ্য অভিনয় করেন? কীভাবে তারা অভিনীত চরিত্রের মধ্য দিয়ে অন্য এক মানুষে রূপান্তরিত হন? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে অবশ্য তাকে বেশি দিন অপেক্ষা করতে হয়নি। কারণ কৈশোরের গণ্ডি পেরোতে না পেরোতেই তার সুযোগ পেয়েছিলেন সেলুলয়েডের দুনিয়ায় পা রাখার। সারাহ বেগম কবরী পরিচালিত ‘আয়না’ ছবির মাধ্যমে অভিষেক হয়েছিল তার। এরপর মোরশেদুল ইসলাম পরিচালিত ‘খেলাঘর’, ‘প্রিয়তমেষু’, মুরাদ পারভেজের ‘চন্দ্রগ্রহণ’, ‘বৃহন্নলা’ থেকে শুরু করে কলকাতার ‘ষড়রিপু’সহ বেশ কিছু ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ হয়েছে তার। অভিনয়ের জন্য স্বীকৃতিও পেয়েছেন একাধিকবার। ছোটপর্দাতেও তার পথচলা থেমে থাকেনি। অভিনয় গুণে অগণিত দর্শকের মনোযোগ কেড়েছেন সাবা। এসব অবশ্য সবারই জানা। তবু অনেকের জানার ইচ্ছা, একাধিক ছবির আলোচিত এই অভিনেত্রীর পর্দায় উপস্থিতি অন্যদের তুলনায় এত কম কেন? অনেকের এই প্রশ্নের উত্তর সোহানা সাবার কাছে তুলে ধরতেই, তিনি মিষ্টি হেসে বলেন, ”প্রথম দুটি ছবি আমার ভাবনার জগৎ বদলে দিয়েছিল। এমন না যে, অভিনয় করে আমি দর্শক প্রশংসা কুড়াতে চাইনি। চেয়েছি, কিন্তু ‘আয়না’ ও ‘খেলাঘর’ ছবিতে অভিনয়ের পর দর্শক আমাকে অন্য সবার চেয়ে আলাদা করে দেখা শুরু করেছিল। তাদের কাছে আমার আলাদা এক ইমেজ তৈরি হয়ে গিয়েছিল। আমার লোভ হয়ে গিয়েছিল এমন সব ছবির প্রতি, যার চরিত্রগুলো দর্শক মনে নাড়া দেবে। তাই দর্শকের কাছে আমার যে ইমেজ তৈরি হয়েছে, সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে চাইনি। আরেকটা ভয় ছিল, বাণিজ্যিক ধারার ছবিতে আমাকে কীভাবে উপস্থাপন করা হবে তা নিয়ে। কারণ দর্শকও অন্যসব ছবির অভিনয়শিল্পীদের সঙ্গে আমার তুলনা করেননি। সেসব দেখেই বুঝেছি, দর্শক হৃদয় জয় করতে হলে সংখ্যা নয়, কাজের মান নিয়েই ভাবতে হবে। আমি ভাগ্যবান, ক্যারিয়ারের শুরু থেকে গুণী কিছু নির্মাতার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পাওয়ায়। তাদের কাছে যা কিছু শিখেছি, তা আমাকে পথচলার দিকনির্দেশনা তৈরি করে দিয়েছি। বুঝিয়ে দিয়েছে, দিনশেষে দর্শক ভালো কাজের কথাই মনে রাখে। তাই সেই কাজগুলোই করতে চাই, যেগুলো আমার শিল্পীসত্তাকে খুশি করবে।”

সোহানা সাবার এ কথায় স্পষ্ট যে, কাজের সংখ্যা বাড়ানোর চেয়ে মান নিয়ে তিনি বেশি ভাবেন। তাই জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে স্রোতার জোয়ারে গা ভাসাতে চাননি কখনও। কিন্তু চলচ্চিত্রের মতো নাটকেও কেন তাকে কম দেখা যায়? নাটকের বিষয়েও কি তার একই রকম ভাবনা? এর উত্তরে তিনি বলেন, ‘এদেশে পে চ্যানেল নেই বলেই হয়তো নির্মাতাদের নির্দিষ্ট বাজেটে কাজ করতে হয়। অবাক হই এটা দেখে যে, শিল্পী সম্মানি দেওয়ার পর যা থাকে, তা দিয়ে কীভাবে নাটক নির্মাণ করছেন নির্মাতারা। এ এক বিস্ময়কর কাজ, জানি না দিনের পর দিন কীভাবে এত অল্প বাজেটে নাটক নির্মিত হচ্ছে! এই বাজেট স্বল্পতার কারণে ভালো কাজের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে।

দেশে তো প্রতিভাবান নির্মাতা, নাট্যকার, শিল্পীর অভাব নেই। তারপরও বাজেট কমিয়ে ভালো কাজের প্রত্যাশাই বা কেন? এসব দেখেই খুব একটা কাজ করার ইচ্ছা হয় না। তারপরও কাজ যে একেবারেই করছি না, তা নয়। করছি, যেখানে পেশাদারি মনোভাব নিয়ে কাজ হচ্ছে, দর্শককে ভালো কিছু উপহার দেওয়ার চেষ্টা আছে- সেসব কাজ করছি।’ ‘মধ্যবর্তিনী’ নাটকে অভিনয় করতে গিয়েই এ বিষয়গুলো বিচার করে দেখেছেন? এর জবাবে সোহানা সাবা বলেন, ‘মধ্যবর্তিনী’ নাটকের নির্মাণ পরিকল্পনা যেভাবে সাজানো হয়েছে, তা আমাকে মুগ্ধ করেছে। এ নাটকে অভিনয় করে দর্শক সাড়া পাচ্ছি। দর্শক চরিত্রের সঙ্গে বাস্তবের আমাকে মেলানোর চেষ্টা করছেন। এটাই তো চেয়েছি, নইলে কাজের সার্থকতা কোথায়? দর্শক নাটক দেখে বাস্তব জীবনের সঙ্গে মেলানোর চেষ্টা যদি না করেন, তাহলে আমাদেরই বা দিনের পর দিন একটা কাজে ডুবে থাকা কেন? এ প্রশ্নের উত্তর অবশ্যই খুঁজে দেখতে হবে। শুধু নাটক নির্মাণ করলেই হবে না, তা দর্শকের মনে কতটা ছাপ ফেলছে, সেটাও ভেবে দেখতে হবে। এখনও সবকিছু ফুরিয়ে যায়নি। বরং এখনই সময়, আমরা যা হারিয়ে ফেলেছি, তা নতুন করে ফিরিয়ে আনার। না হলে ভিনদেশি আগ্রাসনে আমাদের ঐতিহ্য চিরতরে হারিয়ে যাবে। এই ভাবনা থেকেই কী প্রযোজনায় আসা? অনেকটা তাই। কারণ যে ভাবনা নিয়ে কাজ করব, তার পরিপূর্ণতা দেওয়া চাই। তবে টিভির জন্য কাজ করা সত্যি কঠিন। এ জন্য ওটিটি প্রযোজক হিসেবে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম বেছে নিয়েছি। নিজের প্রযোজনার ‘টুইন রিটার্নস’ নামের ছয় পর্বের সিরিজটি বিঞ্জ প্ল্যাটফর্মে দর্শক দেখতে পাবেন।’ অনলাইন প্ল্যাটফর্ম কতটা সম্ভাবনাময় বলে মনে হচ্ছে? এর জবাবে সাবা বলেন, ”এখন বিশ্বজুড়ে অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো প্রতিযোগিতা করছে। কে কতটা ভালো কাজ তুলে ধরতে পারে, তা নিয়েই চলছে প্রতিযোগিতা। কারণে ভালো কিছু করে দেখানোর জন্য নানা ধরনের নিরীক্ষা হচ্ছে। ওটিটি প্ল্যাটফর্মে দর্শক টাকা খরচ করে সিনেমা, সিরিজসহ বিভিন্ন আয়োজন দেখছেন। তাই কেউ চাইবেন না, টাকা খরচ করে সাধারণ মানের কাজ দেখতে। এজন্য বড় বাজেটে বেশির ভাগ কাজ হচ্ছে। এতে কাজের মান যেমন বাড়ছে, তেমনি সম্ভাবনার পথও তৈরি হয়েছে।

আমিও তাই ‘টুইন রিটানর্স’ নির্মাণের সময় ওটিটি প্ল্যাটফর্মের কথাই ভেবেছি।” প্রযোজনার পাশাপাশি গল্পকার হিসেবেও কাজ করার ইচ্ছা হলো কেন- জানতে চাইলে সাবা বলেন, লেখালেখি আমার জন্য নতুন কিছু নয়। আগেও এনটিভির জন্য নাটক লিখেছি। তবে ‘টুইন রিটার্নস’-এর গল্প কিন্তু নতুন নয়। কয়েক বছর আগে লেখা। আসলে আমার মাথায় সারাক্ষণ নানা ধরনের গল্প ঘোরাফেরা করে। যখন সুযোগ পাই লেখার চেষ্টা করি। যখন সিদ্ধান্ত নিলাম প্রযোজনায় আসব, তখনই মনে হয়েছে ‘টুইন রিটার্নস’ নিয়ে কাজ করা যেতে পারে। করোনায় অনেক দিন ঘরবন্দি ছিলাম, সে সময়টা কাজে লাগিয়েছি পুরোনো এই গল্পকে সময়োপযোগী করে সাজানোর। পরিচালনা নিয়ে কী কখনও ভেবেছেন? ‘টুইন রিটার্নস’ সিরিজটি নিজেই পরিচালনা করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু নিজে যেহেতু অভিনয় করছি, তাই পরিচালনার দায়িত্বটা আলোক হাসানের কাঁধে তুলে দিয়েছি। আসলে একসঙ্গে অনেক কাজ আমি করতে পারি না। এ যেমন পরিচিতরা অনেকে বলেন, তুই এত ভালো ডিজাইন করতে পারিস, করছিস না কেন? তাদেরও এই একই কথাই বলি যে, একসঙ্গে নানা কাজে মনোযোগ ধরে রাখতে পারি না। ‘সাবাশ কনফেশন বক্স’ অনুষ্ঠানটিও এখন করতে পারছি না অভিনয়ে সময় দেওয়ার কারণে। যখন কিছুটা সময় পাব, তখন অন্যসব কাজ নিয়ে ভাবব।’ অনেক কথাই হলো সাবার সঙ্গে। সবশেষে তার কাছে জানতে চাইলাম, নানা ধরনের কাজ করেন, কিন্তু ক্যারিয়ার গড়ার বিষয়ে কোন বিষয়টা প্রাধান্য দেন? এর উত্তরে সাবা বলেন, অভিনয় নিয়ে বেশি ভাবি। অভিনয়ের ভুবনেই ভালো কিছু কাজের মাধ্যমে দর্শক মনে স্থায়ী আসন করে নিতে চাই। এর বেশি কিছু চাওয়ার নেই। আমি স্বাধীনচেতা মানুষ, তাই একান্ত নিজের জন্য কিছু সময় রাখতে চাই, যে সময়টা এই শরতের মতোই সুন্দর হয়ে ধরা দেবে।’

 

Development by: webnewsdesign.com