বিএনপির ডাকা হরতাল সিলেটে রবিবার (২৯ অক্টোবর) ঢিলেঢালাভাবে শুরু হলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে। সকাল ৮টার পর থেকে বিভিন্ন স্থানে অতর্কিত পিকেটিং করছেন বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সঙ্গে আছে জামায়াতও। তারা ভাঙচুর করছেন যানবাহন। পুলিশের দিকে ছুঁড়ছেন ইট-পাটকেল। তবে পুলিশও তাদের ঠেকাতে কঠোরভাবে রয়েছে মাঠে। যে স্থানেই বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন সেখানেই উপস্থিত হয়ে টিয়ার সেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দিচ্ছে তাদের।
দক্ষিণ সুরমায় সড়কে গাছ ফেলে অবরোধ, টায়ারে আগুন :
রবিবার সকাল ১০টার দিকে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের দক্ষিণ সুরমার লালাবাজারে গাছ ফেলে অবরোধ করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। এতে নেতৃত্ব দেন জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক কোহিনূর আহমদ ও সহ দপ্তর সম্পাদক মাহবুব আলম।
এছাড়া প্রায় একই সময়ে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের দক্ষিণ সুরমার তেতলিতে টায়ারে আগুন দিয়ে বিক্ষোভ করে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা।
সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে যানবাহন ভাঙচুর :
সকাল ৯টার দিকে মহানগরের লন্ডনি রোডের হাজীপাড়ার মুখ থেকে ৩০-৩৫ টি মোটরসাইকেলে করে বিএনপি নেতাকর্মীরা বের হয়ে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে গিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ ১০-১২টি গাড়িতে ভাঙচুর চালান। তাদের অনেকের হাতে ছিলো লাঠি। ১৫-২০ মিনিট ভাঙচুর চালিয়ে তারা চলে যান।
জিন্দাবাজার এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া :
সিলেট মহানগরের জিন্দাবাজার এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। রবিবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এসময় পুলিশের দিকে নেতাকর্মীরা ইট-পাটকেল ও তাদের দিকে পুলিশ রাবার বুলেট, টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ এসময় সাউন্ড গ্রেনেডও ফাটায়।
জেলরোড পয়েন্টে ককটেল বিস্ফোরণ :
সিলেট মহানগরের জেলরোড পয়েন্টে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। রবিবার সকাল সোয়া ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনাস্থল থেকে সিলেটভিউ’র ফটো সাংবাদিক পল্লব ভট্টাচার্য্য জানান- মহাজনপট্টির গলি থেকে ২৫-৩০ জন বিএনপি নেতাকর্মীল মিছিল নিয়ে জেল রোড পয়েন্টে এসে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান। এসময় তারা পিকেটিং শুরু করেন। তবে দ্রুত পুলিশ ঘটনাস্থলে চলে আসে এবং রাবার বুলেট ও টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে বিএনপ নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এসময় পুলিশের দিকে ইট-পাটকের নিক্ষেপ করেন নেতাকর্মীরা। তবে বেশিক্ষণ রাস্তায় দাঁড়াননি তারা। মিছিল নিয়ে জেলরোডের দিকে চলে যান।
জিন্দাবাজার :
সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সিলেট মহানগরের জিন্দাবাজারে বিএনপি নেতাকর্মীরা জড়ো হয়ে পিকেটিং করার চেষ্টা করলে তাদের সরিয়ে দেয় পুলিশ।
ঘটনাস্থল থেকে সিলেটভিউ’র পল্লব ভট্টাচার্য্য ও শহিদুল ইসলাম সবুজ জানান, জিন্দাবাজার পয়েন্ট ও কাজি ইলিয়াস এলাকায় সড়কে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তাঁতিপাড়ার গলি থেকে বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী হঠাৎ বের হয়ে পুলিশের দিকে ইট-পাটকেল ছুঁড়তে থাকে। তবে পুলিশের ধাওয়ায় তারা দাঁড়াতে পারেনি রাস্তায়।
এসময় বিএনপি নেতাকর্মীদের দিকে রাবার বুলেট ও টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। এসময় পিকেটিংকারী একজনের ফেলে যাওয়া মোটরসাইকেল পুলিশ জব্দ করে ।
দরগাহ গেইটে রিকশায় আগুন, সাংবাদিকের মোটরসাইকেল ভাঙচুর :
সিলেট মহানগরে রিকশায় আগুন দিয়ে পিকেটিং করছেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। রবিবার সকাল ১০টার দিকে মহানগরের দরগাহ গেইট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এসময় কয়েকজন সাংবাদিকের মোটরসাইকেলেও ভাঙচুর চালায় তারা। আজ রবিবার সারা দেশে সকাল-ন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছে বিএনপি। শনিবার (২৮ অক্টোবর) নয়াপল্টনে সমাবেশে পুলিশের সাথে সংঘর্ষের পর এ সিদ্ধান্ত নেয় দলটি। শনিবার বিকালে দলীয় কার্যালয়ের নিচে হ্যান্ড মাইকে হরতালের ঘোষণা দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এদিকে, হরতালকে কেন্দ্র করে সিলেটে যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য রবিবার ভোর থেকে সিলেটের গুরুত্বপূর্ণ সকল রাস্তা ও মোড়ে অবস্থান নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। মহানগরের প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা ও মোড়ে পুলিশ অবস্থান নিয়েছে। সব ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঠেকাতে তারা প্রস্তুত।
দেখা গেছে- সিলেটে ভোর থেকে নিয়মিত পুলিশের পাশাপাশি বিশেষ টিম ‘ক্রাইসিস রেন্সপন্স টিম- সিআরটি’ রয়েছে মাঠে। এছাড়া সাদা পোশাকেও পুলিশ বাহিনী রয়েছে মাঠে।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) কমিশনার মো. ইলিয়াস শরীফ বিপিএম (বার) পিপিএম সিলেটভিউ-কে বলেন- সিলেটের জনগণের সার্বিক নিরাপত্তায় আমরা মাঠে রয়েছি। হরতালকে কেন্দ্র করে কেউ নাশকতার চেষ্টা করলে আমরা কঠোরভাবে তা দমন করবো। আজ ভোর থেকে আমাদের মোবাইল টিম, সিআরটি ও সাদা পোশাকে একাধিক টিম মাঠে রয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে পুলিশের সাজোয়া যান পিসিআর।
এদিকে, স্থানে স্থানে পিকেটিংয়ের কারণে সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক যানশূণ্য হয়ে পড়েছে। নিরাপত্তার অজুহাতে পরিবহন শ্রমিকরাও সকাল থেকে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন। সিলেট থেকে ছেড়ে যায়নি দূরপাল্লার বাস।
Development by: webnewsdesign.com