পাহাড়ি ঢল, বৃষ্টিপাত ও নদ-নদীর পানি কমায় সিলেটের আটটি উপজেলায় শুক্রবার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে সিলেট নগরে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে পানি ঢুকছে। এতে পানিবন্দি হয়েছে কয়েক হাজার মানুষ। আর উপজেলাগুলোতে বন্যায় পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ছয় লাখ।
এদিকে হবিগঞ্জের বাহুবলে গতকাল সকালে ভারি বর্ষণে ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে করাঙ্গী নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। সিলেট নগরের তালতলা, মেন্দিবাগ, মাছিমপুর, তেররতন, যতরপুর, শাহজালাল উপশহরসহ বিভিন্ন এলাকা এবং সিলেট ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কার্যালয় জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। ডুবে গেছে সড়ক। বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে।
জানতে চাইলে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, ‘বৃষ্টিপাত বেশি এবং নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নগরে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের ড্রেন সব পরিষ্কার আছে।
নগরের পানি খাল বা ছড়া হয়ে নদীতে যায়। কিন্তু এখন উল্টো নদীর পানি শহরে ঢুকে পড়েছে। বৃষ্টি না হলে এ অবস্থা থাকবে না।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন পয়েন্টে সিলেটের নদ-নদীর পানি কমেছে। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার রেকর্ড অনুযায়ী, সিলেটের কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৯২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এই পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ১৩৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় জকিগঞ্জের অমলসিদে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ২০৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। আর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নদীর পানি বিপৎসীমার ২১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বিয়ানীবাজারের শেওলায় কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল শুক্রবার সন্ধ্যায়, যা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় ছিল বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর। গোয়াইনঘাট উপজেলায় শুক্রবার সন্ধ্যায় সারি গোয়াইন নদীর পানি বিপৎসীমার ২৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। অথচ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় সেটি বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল। তবে সিলেট পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বেড়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় নদীর পানি বিপৎসীমার ৪সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যা বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
আবহাওয়া কার্যালয় সিলেট সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সিলেটে বৃষ্টি হয়েছে ৫.৫ মিলিমিটার। এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ৬১ মিলিমিটার।
পাউবো বলছে, বৃষ্টি কম থাকার পূর্বাভাস থাকায় আজ শনিবার সকাল পর্যন্ত সিলেট অঞ্চলের প্রধান নদ-নদীর পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে। আজ ও আগামীকাল রবিবারের মধ্যে জেলার বন্যা পরিস্থিতিরও উন্নতি হতে পারে।
পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বলেন, ‘বৃষ্টিপাত অনেকটা কমে এসেছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামীকালও (আজ) বৃষ্টি কম থাকতে পারে। আশা করছি, পানি বিপৎসীমার ওপরে থাকলেও আগামীকালের মধ্যেই নদ-নদীর পানি একটা স্থিতিশীল অবস্থায় চলে আসবে। দুই-তিন দিনের মধ্যে সিলেট বন্যামুক্ত হয়ে যাবে। এ ছাড়া দেশের উত্তরাঞ্চলে আপাতত কিছুদিন আমরা বন্যার আশঙ্কা করছি না।’
সিলেট জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলায় সবচেয়ে বেশি প্লাবিত হয়েছে জকিগঞ্জ, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলা। বিয়ানীবাজারের পাঁচটি, গোলাপগঞ্জের একটি এবং দক্ষিণ সুরমা উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের আংশিক প্লাবিত হয়েছে। আট উপজেলায় পানিবন্দি ছয় লাখ ৪৩ হাজার ৪৭০ জন। গোয়াইনঘাটে পানিবন্দি দুই লাখ ৪৫ হাজার ৭৫০ জন। বন্যা মোকাবেলায় প্রস্তুত ৫৪৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে এ পর্যন্ত উঠেছে তিন হাজার ৭৩৯ জন। সরকারি-বেসরকারিভাবে খাবার ও বিশুদ্ধ পানি বিতরণ করা হচ্ছে।
উপজেলাগুলোতে বন্যার পানি যত কমছে সড়ক, ব্রিজ-কালভার্ট, মাছের ঘেরের ক্ষয়ক্ষতির চিত্র ততই ভেসে উঠছে। অনেক রাস্তাঘাটে কাদা-জলে একাকার হয়ে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে।
Development by: webnewsdesign.com