সিলেটের মোগলাবাজারে গ্রামীণ রাস্তার অবস্থা বেহাল, দুর্ভোগ  চরমে

সোমবার, ১৬ আগস্ট ২০২১ | ২:৫৪ অপরাহ্ণ

সিলেটের মোগলাবাজারে গ্রামীণ রাস্তার অবস্থা বেহাল, দুর্ভোগ  চরমে
apps

সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কে সংযুক্ত মোগলাবাজার ইউনিয়নের হাজীগঞ্জবাজার-চিছরাকান্দি-চাঁনপুর পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার রাস্তায় বড় বড় গর্ত, খানাখন্দ আর কর্দমাক্ত হয়ে রাস্তার অবস্থা বেহাল রূপ ধারণ করেছে। যেন দেখার কেউ নেই। প্রায় ৫টি গ্রামের যাতাযাতের এই রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে চরম দুর্ভোগ ও ভোক্তান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষজন।

জানা যায়, হাজীগঞ্জবাজার-চিছরাকান্দি-চাঁনপুর পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার রাস্তাটি সিলেট-৩ আসন এলাকার হওয়ায় ২০২০ সালের ১৪ নভেম্বর রাস্তাটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রায়াত এমপি মাহমুদ সামাদ চৌধুরী। এর পর ঢাকার মেসার্স আইটিসি-সিবি (জেভি:) নামের প্রতিষ্ঠান এই রাস্তার সংস্কার কাজ শুরু করে।

প্রতিষ্ঠানটি রাস্তা খুঁড়ে ড্রেনের মতো করে হাজীগঞ্জবাজার-চিছরাকান্দি-চাঁনপুর পর্যন্ত আড়া কিলোমিটার রাস্তাটির কাজ না করেই চলে যায়। এর পর থেকে একটু বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতায় গ্রামীণ এই কাঁচা রাস্তাটি বেহাল অবস্থায় পড়ে। দীর্ঘদিন সংস্কার কাজ না হওয়ায় বর্তমানে পথচারীরা চরম দুর্ভোগে এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করছেন।

এ সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে বিকল হয়ে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। সবচেয়ে বেশী দুভোর্গে পড়ছেন অসুস্থ্য ও অন্ত:সত্ত্বা রোগীরা।

সূত্র জানিয়েছে, এ সড়কে চলাচল করতে গিয়ে গত এক বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় ও হাসপাতালে না নেয়ার কারণে অন্তত ৫ থেকে ৬ জনের জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অনন্ত আরো ৫০ জনের মতো। আবার অনেকেই দুঘর্টনার শিকার হয়ে পঙ্গত্ববরণ করে কর্মহীন হয়ে দিনযাপন করছেন।

ব্যবসায়ী, কলেজ ছাত্র, চাকরিজীবীরা জানান, মোগলাবাজারের হাজীগঞ্জবাজার-চিছরাকান্দি-চাঁনপুর এই রাস্তাটির বেহাল অবস্থায় রয়েছে। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় প্রতিনিয়তই বিভিন্ন ধরনের যানবাহন বিকল ও মানুষজন দুঘর্টনার শিকার হচ্ছেন। প্রায়ই যানবাহন উল্টে হতাহতের ঘটনা ঘটছে। সংশ্লিষ্টদের গুরুত্বহীনতার কারণে করুণ অবস্থা এই রাস্তাটির। ফলে এ রাস্তাটি এখন চাষাবাদের মতো ধান রোপন করার মতো উপক্রম হয়েছে।

সরজমিন গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে মোগলাবাজার। সেখান থেকে পূর্বে সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়ক, পশ্চিমে ৫ম গ্রামের মানুষ, উত্তরে উপজেলা ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, এসএমপি মোগলাবাজার থানা ও দক্ষিণে কুশিয়ারা নদী হাজীগঞ্জ-চিচরাকান্দি-চাঁনপুর গুরত্বপূর্ণ সড়ক হিসেবেই পরিচিত।

সংস্কার কাজের জন্য করা ড্রেনের মতো হলে রাস্তাটিতে দীর্ঘদিন ফেলে থাকায় এখন সামান্য বৃষ্টি হলেই জমে থাকছে পানি, হচ্ছে কাদা ও কর্দমাক্ত।

হাজীগঞ্জ প্রাইমারী স্কুলের সভাপতি দিলওয়ার হোসেন বলেন, কি বলবো ভাই! দীর্ঘদিন ধরে হাজীগঞ্জবাজার-চিছরাকান্দি-চাঁনপুর সড়কের অবস্থা বেহাল। এ রাস্তা দিয়ে প্রতিনিয়ত লোকজন দুঘর্টনার শিকার হচ্ছেন। এক কথায় বলতে গেলে আসলে এ রাস্তা দিয়ে বর্তমানে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা খুবই দুর্ভোগ পায়াচ্ছে।

এখন রাস্তায় কাদা জমে ধান রোপনের উপযোগী হয়েছে। রাস্তার গর্তে সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি জমে থাকে। যানবাহন যাওয়া মাত্রই গর্তের সেই পানি ছিটকে চলাচল করা ভদ্র লোকদের কাপড়ে এসে পড়ে কাপড়চোপড় নষ্ট করে দিচ্ছে। তাই এ রাস্তাটি যত দ্রুত সম্ভব সংস্কার হওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবী জানাচ্ছি।

চিছরাকান্দি গ্রামের বিশিষ্ট মুরব্বী নজির উদ্দিন জানান, হাজীগঞ্জবাজার-চিছরাকান্দি-চাঁনপুর সড়কের প্রায় আড়াই কিলোমিটার রাস্তার অবস্থা বেহাল। রাস্তায় ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। খানাখন্দে রাস্তাগুলোর বেহাল দশা। ফলে গ্রামীণ জনপথের এই কাঁচা রাস্তা বৃষ্টির পানিতে কাঁদার সৃষ্টি হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় গ্রামের মানুষের অসুবিধার পাশাপাশি প্রতিনিয়ত দুঘর্টনার শিকার হচ্ছেন।

এ রাস্তা দিয়ে ৩ গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ প্রতিদিন চলাচল করে থাকেন। তাই এই রাস্তাটি দ্রুত সংস্কার হওয়া প্রয়োজন।

চাঁনপুর পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি হাজী আনোয়ার আলী বলেন, হাজীগঞ্জবাজার-চিছরাকান্দি-চাঁনপুর সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে বেহাল অবস্থা। এ রাস্তাটি দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ১৫ হাজারের বেশী মানুষ চলাচল করেন।

তখন অনেক মানুষ দুঘর্টনার শিকার হচ্ছেন। এক বছর ধরে রাস্তাটির এই অবস্থা। তবুও হয়নি রাস্তাটির সংস্কার কাজ। তাই রাস্তাটি যত দ্রুত সম্ভব সংস্কার হওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবী জানাচ্ছি।

মোগলাবাজার ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার সাইফুল ইসলাম বলেন, হাজীগঞ্জবাজার-চিছরাকান্দি-চাঁনপুর সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে বেহাল অবস্থা। এ রাস্তাটি সংস্কার হওয়ার জন্য সাবেক এমপি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে হাটতে হাটতে জুতার তল খেয়ে গেছে। তবুও হয়নি রাস্তাটির সংস্কার। তাই রাস্তাটি এখন যত দ্রুত সম্ভব সংস্কার হওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবী জানাচ্ছি।

হাজীগঞ্জবাজার-চিছরাকান্দি-চাঁনপুর সড়কের ব্যাপারে মোগলাবাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইস্তা মিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে তার কোন সৎত্তর পাওয়া যায়নি।

মোগলাবাজারের হাজীগঞ্জবাজার-চিছরাকান্দি-চাঁনপুর রাস্তা সংস্কার কাজের ব্যাপারে ঠিকাদার চন্দন বাবুর সাথে যোগযোগ করা হলে তিনি বলেন, গত এক বছর আগে এ রাস্তাটি সংস্কারের কাজ পায় ঢাকার ঢাকার মেসার্স আইটিসি-সিবি (জেভি:) নামের একটি প্রতিষ্ঠান। পরে ওই প্রতিষ্ঠানটি এ রাস্তাটি কাজ না করে চলে যায়।

পরে গত দুই থেকে আড়াই মাস আগে এ রাস্তরার জন্য এলজিইডি রি-ট্রেন্ডার আহবান করে। তিনি বলেন, আমি ওই রি-ট্রেন্ডার পাই। আজ ৬ মাস ধরে এলজিইডি আমার ট্রেন্ডারের সময় দুই লক্ষাধিক টাকা পে-অর্ডারও দিচ্ছে না আবার রাস্তা কাজের অনুমতিও দিচ্ছে না। ফলে আমি বিশেষ দুচিস্তায় আছি।


এ ব্যাপারে সিলেট এলজিইডি’র সহকারী প্রকৌশলী ইমতিয়াজ হোসেনের সাথে যোগযোগ করা হলে তিনি দৈনিক বাংলাদেশ মিডিয়া পত্রিকাকে বলেন, সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কের মোগলাবাজার ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের হাজীগঞ্জবাজার-চিছরাকান্দি-চাঁনপুর সড়কটির সংস্কার কাজের ট্রেন্ডার হয় গত এক বছর আগে।

এই ট্রেন্ডারটির কাজ পেয়েছিলো ঢাকার মেসার্স আইটিসি-সিবি (জেভি:) নামের একটি প্রতিষ্ঠান। পরে করোনা ও লকডাউনের কারনে ওই প্রতিষ্ঠানটি কাজ না করে চলে যায়।

তিনি বলেন, এর পর গত ছয় মাস আগে ওই রাস্তাটির রি-ট্রেন্ডার আহবান করা হয়। এ ট্রেন্ডারটিতে যে যে ঠিকাদার ট্রেন্ডার ড্রপ করেছেন তাদের কাগজপত্র ঠিক পাওয়া যায়নি। তাই কাজটি আর করা হয়নি।

তিনি আরো বলেন, গত সপ্তাহে ওই রাস্তাটি আমরা পরিদর্শন করে এসেছি। রাস্তার ট্রেন্ডার দেওয়ার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আশাকরি আগামী শীত মৌসমে রাস্তাটি সংস্কার কর হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

দৈনিক বাংলাদেশ মিডিয়ায় আজকের প্রিন্ট ভার্সনে প্রকাশিত/এসআরসি-১৬

Development by: webnewsdesign.com