সঠিক উদ্যোগের অভাবে উন্নতি নেই কমলগঞ্জের পর্যটন গুলোর

সোমবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ৫:০৫ অপরাহ্ণ

সঠিক উদ্যোগের অভাবে উন্নতি নেই কমলগঞ্জের পর্যটন গুলোর
apps

চারদিকে সবুজের সমারোহ, বনের ফাঁকে ফাঁকে মায়া হরিণের দুরন্তপনা, মণিপুরী ও খাসিয়া নৃগোষ্ঠীর বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবনচিত্র, চা-শ্রমিকের জীবনযুদ্ধ আর লাউয়াছড়া, হামহাম ও মাধবপুর লেকের অপরূপ দৃশ্য যে কাউকে মুগ্ধ করে তোলে। চায়ের রাজধানী খ্যাত জেলা মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মতো প্রকৃতির এমন বাহারি সৌন্দর্যের সমাহার খুব কম জায়গায়ই মেলে।

কমলগঞ্জ উপজেলার আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে প্রকৃতির সৌন্দর্য। যাকে ঘিরে গড়ে উঠতে পারে সম্ভাবনামর‌্য। রয়েছে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত বিমান বন্ধর, চাবাগানসহ অসংখ্য। কিন্তু বেশির ভার‌্য কাছে তা শ্রীমঙ্গলের হিসেবে পরিচিত।

অবহেলিত উপজেলা কমলগঞ্জের পর্যটন উন্নয়নে সরকারি বা বেসরকারিভাবে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। নেই আবাসনের সুবিধা, রাস্তাঘাট জরাজীর্ণ।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এই উপজেলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে ঘিরে দেশের পর্যটনশিল্পের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে। কিন্তু সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের অভাবে তার বিকাশ ঘটছে না।

উপজেলার পর্যটন কেন্দ্রগুলোকে সঠিকভাবে ব্র্যান্ডিং না করা এবং পর্যটকদের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা না থাকায় তা বিস্তৃত হচ্ছে না বলে জানিয়েছে পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।

কমলগঞ্জের মাধবপুর ইউনিয়নের পদ্মছড়া চা বাগানে রয়েছে অসাধারণ একটি লেক। চারদিকে পাহাড়ি টিলার মধ্যে অবস্থিত এ জায়গাটি পর্যটকদের ভিন্নভাবে মোহিত করে। লেকের চারদিকের টিলার উপরে উঠলে যে দিকে চোখ যায় সেদিকেই শুধু সবুজের সমারোহ।

অন্যদিকে উপজেলার পাত্রখোলা চা বাগানের লেকে গেলে দেখা মিলে অতিথি পাখির। বিশেষ করে শীত মৌসুমে পাখিদের কলকাকলীতে মুখরিত থাকে চারপাশ। প্রতিবছর শীতে নানা জায়গা থেকে মানুষজন ভিড় করেন এখানে পাখি দেখতে।

(কমলগঞ্জের মণিপুরী সম্প্রদায়)

ভাষাগত এবং ধর্মীয় ভিন্নতার কারণে মণিপুরীরা তিনটি শাখায় বিভক্ত এবং স্থানীয়ভাবে তারা মৈতৈ, মণিপুরি মুসলমান বা পাঙাল ও বিষ্ণুপ্রিয়া নামে পরিচিত। এর মধ্যে মৈতৈ ও বিষ্ণুপ্রিয়া সম্প্রদায়ের লোকেরা হিন্দুধর্মে বিশ্বাসী এবং পাঙালরা মুসলমান। মণিপুরীদের সংস্কৃতি অত্যন্ত সমৃদ্ধ ও ঐতিহ্যবাহী।

মণিপুরী সংস্কৃতির উজ্জ্বলতম দিক হলো মণিপুরী নৃত্য যা বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। কার্তিক মাসে মাসব্যাপী চলে মৈতৈ ও বিষ্ণুপ্রিয়া সম্প্রদায়ের ধর্মীয় নানান গ্রন্থের পঠন-শ্রবন। এরপর আসে মণিপুরীদের বৃহত্তম উৎসব রাসপূর্ণিমা।

অষ্টাদশ শতাব্দীতে মণিপুরের রাজা মহারাজ ভাগ্যচন্দ্র প্রবর্তিত শ্রীকৃষ্ণের রাসলীলানুকরন বা রাসপুর্ণিমা নামের মণিপুরীদের সর্ববৃহৎ অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশে প্রায় দেড়শত বছর ধরে পালিত হয়ে আসছে। কার্তিকের পূর্ণিমা তিথিতে দূরদূরান্তের লাখ লাখ ভক্ত-দর্শক কমলগঞ্জের মাধবপুর জোড়া মণ্ডপের ও আদমপুরের সানাঠাকুর মণ্ডপে এই বিশাল ও বর্ণাঢ্য উৎসবের আকর্ষণে ছুটে আসেন। তা ছাড়া মণিপুরী নারীদের সুখ্যাতি রয়েছে হাতে বোনা তাঁতের কাপড়ের জন্য। কমলগঞ্জের প্রায় ২০টি গ্রাম বিখ্যাত মণিপুরী তাঁতশিল্পের জন্য।

(কমলগঞ্জের খাসি সম্প্রদায়)

কমলগঞ্জ উপজেলার আরেকটি আকর্ষণ খাসি পল্লি বা পুঞ্জি। খাসি মেয়েরাই সংসারের প্রধান ও সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়। তাদের মূল জীবিকা পান চাষ।

ডবলছড়া, মাগুরছড়া, লাউয়াছড়া ও পাত্রখোলা পুঞ্জি রয়েছে কমলগঞ্জে কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল সড়কের পাশে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের মধ্যে অবস্থিত লাউয়াছড়া ও মাগুরছড়া পুঞ্জি। লাউয়াছড়া উদ্যানের অন্তর্ভুক্ত দুইটি পুঞ্জির মধ্যে মাগুরছড়া বৃহত্তম।

অন্যদিকে ভারতের ত্রিপুরা থেকে উৎপত্তি হওয়া একটি পাহাড়ি ছড়ার নামে হলেও খাসিয়াপল্লি ডবলছড়ার অবস্থান কমলগঞ্জের আলীনগর ইউনিয়নভুক্ত আর ছড়ার এপারের ডবলছড়া চা বাগান এলাকাটি শমশেরনগর ইউনিয়নে।
এ খাসিয়াপল্লি যেতে হলে পাহাড়ি উঁচু নিচু কাঁচা ১২ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিয়ে যেতে হয়। তবে শুরুতেই পথে শমশেরনগর চা বাগানের প্রাকৃতিক লেক, একটি বিশাল খেলার মাঠ ও ক্যামেলিয়া ডানকান ফাউন্ডেশন হাসপাতালটি যেকোনো পর্যটকের মন ও দৃষ্টি কেড়ে নেয়।

(কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান)

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের অন্যতম জাতীয় উদ্যান এবং অবশিষ্ট চিরহরিৎ বনের একটি উল্লেখযোগ্য নমুনা। এটি একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল। বাংলাদেশের ১০টি জাতীয় উদ্যানের মধ্যে এটি অন্যতম।

কমলগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত ১২৫০ হেক্টর আয়তনের এ বন জীববৈচিত্র্যে ভরপুর। বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৭ সালে এই বনকে ‘জাতীয় উদ্যান’ হিসেবে ঘোষণা করে। বিলুপ্তপ্রায় উল্লুকের জন্য এ বন বিখ্যাত। উল্লূক ছাড়াও এখানে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির দুর্লভ জীবজন্তু, কীটপতঙ্গ এবং উদ্ভিদ।

(কমলগঞ্জের মাধবপুর লেক)

মাধবপুর লেক কমলগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত একটি কৃত্রিম জলাধার। বাংলাদেশের পর্যটন আকর্ষণগুলোর মধ্যে এই লেকটি অন্যতম। সিলেট অঞ্চলে বৃষ্টির পরিমাণ অধিক হলেও ঢালু ভূমির কারণে পানি অধিক সময় অবস্থান করে না বিধায় পানির প্রয়োজনে চা বাগান কর্তৃপক্ষ একাধিক জলাধার তৈরি করেন।

স্থানীয় চা শ্রমিকেরা এসব জলাধারকে “ডাম্প” বলে থাকে।। এরই ধারাবাহিকতায়, মাধবপুর চা বাগান কর্তৃপক্ষ ১৯৬৫ সালে বাগানের মধ্যস্থিত তিনটি টিলাকে বাঁধ দিয়ে পানি জমিয়ে রেখে গড়ে তোলেন মাধবপুর লেক।

(কমলগঞ্জের হামহাম জলপ্রপাত)

কমলগঞ্জের রাজকান্দি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গভীরে কুরমা বনবিট এলাকায় অবস্থিত একটি প্রাকৃতিক জলপ্রপাত বা ঝরনা হামহাম। জলপ্রপাতটি ২০১০ সালের শেষাংশে দুর্গম জঙ্গলে ঘোরা একদল পর্যটক আবিষ্কার করেন। তবে ঝরনার উচ্চতা বিষয়ে কোনো প্রতিষ্ঠিত কিংবা পরীক্ষিত মত নেই।

উপজেলার পর্যটনের সম্ভাবনার বিষয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশেকুর হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশের অন্যতম সৌন্দর্যময় এক উপজেলা কমলগঞ্জ। কমলগঞ্জের পর্যটন উন্নয়নে সরকারি বা বেসরকারিভাবে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তবে পর্যটন উন্নয়নে বর্তমানে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।

Development by: webnewsdesign.com