স্টাফ রিপোর্টার
সৌদি আরবে নারী শ্রমিক পাঠানো বন্ধে জাতীয় সংসদসহ বিভিন্ন ফোরাম থেকে দাবির বিপক্ষে মত দিয়েছে সংসদীয় কমিটি। সংসদীয় কমিটি সৌদি আরবসহ বিদেশে নারী শ্রমিক পাঠানো অব্যাহত রাখতে চায়। তবে, তারা অধিকতর সুরক্ষা নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছে। সোমবার (২৫ নভেম্বর) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে বিদেশে নারী শ্রমিক পাঠানো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
প্রসঙ্গত: বিদেশে বিশেষ করে সৌদি আরবে বাংলাদেশি নারী শ্রমিকদের ওপর যৌন নির্যাতনের খবরে সম্প্রতি জাতীয় সংসদ থেকে সৌদি আরবে নারী গৃহকর্মী না পাঠানোর দাবি ওঠে। সরকারি ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা এ দাবি তোলেন। সংসদের বাইরেও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও সংশ্লিষ্টরাও সম্প্রতি একই ধরনের দাবি তুলেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংসদীয় কমিটির সভাপতি ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘নারী শ্রমিক পাঠানোর বন্ধের পক্ষে আমরা নই। আমরা মনে করি তাদের পাঠানো অব্যাহত রাখতে হবে। তবে, যেসব অভিযোগ আছে সেগুলো গুরত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। নারী শ্রমিকদের নিরাপত্তার ওপর জোর দিতে হবে। সৌদি সরকারের সঙ্গে চুক্তি করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’
প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘বিদেশে নারী শ্রমিকদের বিষয়টি নিয়ে আমরা খুবই চিন্তিত। তবে, বিষয়টি ওই পর্যায়ে নয়, যে পাঠানো বন্ধ করে দিতে হবে। বিদেশে নারী শ্রমিকরা যেন নিরাপদে কাজ করতে পারেন, আমরা সেজন্য যত ধরনের সুরক্ষা সম্ভব; নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছি।’
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সৌদি আরবে নারী শ্রমিক পাঠানো বন্ধ করা না করার বিষয়ে দুটি পক্ষ রয়েছে। একটি পক্ষ বন্ধ করার পক্ষে। আবার অনেকে এটা চালু রাখতে বলছে। এই ব্যাপক আলোচনার মধ্যেও অনেক নারী শ্রমিক নিজেরাই যাওয়ার আগ্রহের কথা জানাচ্ছেন। যারা নারী শ্রমিক পাঠানো বন্ধ করতে চাচ্ছেন তাদের একটি অংশের অসৎ উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলেও কমিটির বৈঠকে উল্লেখ করা হয়।
বৈঠকে জানানো হয়, সৌদি আরবে কর্মরত গৃহকর্মীদের সংক্রান্ত অভাব-অভিযোগ শুনতে প্রবর্তিত অনলাইন ব্যবস্থা ‘মুসানেদ’ (সহায়তা) ২০১৫ সাল থেকেই কার্যকর রয়েছে। এই ব্যবস্থায় নির্যাতিত গৃহকর্মীরা অনলাইনে আবেদন করতে পারেন। তবে, এই ব্যবস্থা এখনও অধিক প্রচলিত হয়নি। এটা প্রচলিত হলে এখান থেকেও গৃকর্মীরা এক ধরনের সুরক্ষা পেতে পারেন।
সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বিদেশে কর্মরত নির্যাতিত নারী কর্মীদের নির্যাতনরোধে সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে নারী শ্রমিকদের নির্যাতন রোধ করার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কমিটি সুপারিশ করেছে।
বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, গত ১০ বছরে ৪০ হাজার লাশ বিদেশ থেকে আনা হয়েছে। লাশ পরিবহন ও দাফনে ৯৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে এবং তাদের পরিবারকে ৭২০ কোটি ২৮ লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে।
সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বর্তমানে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ৬৩টি শাখা রয়েছে। এরমধ্যে ৫৬টি জেলা পর্যায়ে এবং ৭টি উপজেলা পর্যায়ে অবস্থিত। ঝালকাঠি, মেহেরপুর, নীলফামারী, জয়পুরহাট, ঠাঁকুরগাঁও, পঞ্চগড় শাখা, লালমনিরহাট, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলায় বর্তমানে শাখা নেই। এই জেলাগুলোসহ ২০টি নতুন শাখা খোলার জন্য অর্থ মন্ত্রণালেয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
বৈঠকে জানানো হয়েছে, ব্যাংকের মাধ্যমে এ বছরের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ৩৯ হাজার ২৯০ জন বিদেশগামী ও বিদেশ ফেরত কর্মীকে ৪৫৫ কোটি ৩ লাখ টাকা ঋণ বিতরণ এবং ৩৩১ কোটি ১৪ লাখ টাকা আদায় করা হয়েছে।
বৈঠকে কমিটি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংককে আধুনিক ও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে ব্যাংকের জনবল বৃদ্ধির ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করেছে। বিদেশ ফেরত কর্মীদের বিমান বন্দরে হয়রানি দূর করার বিষয়ে মনিটরিং কার্যক্রম জোরদারসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতেও সুপারিশ করা হয়।
কমিটির সভাপতি আনিসুল ইসলাম মাহমুদের সভাপতিত্বে সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটির সদস্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ, মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, মৃনাল কান্তি দাস, আয়েশা ফেরদাউস, পংকজ নাথ ও ইকবাল হোসেন অংশগ্রহণ করেন।
Development by: webnewsdesign.com