শৈলকুপায় ধর্ষণের পর কিশোরী গর্ভবতী: পাইনি ন্যায়বিচার

বৃহস্পতিবার, ০৮ অক্টোবর ২০২০ | ৯:০৩ অপরাহ্ণ

শৈলকুপায় ধর্ষণের পর কিশোরী গর্ভবতী: পাইনি ন্যায়বিচার
apps

গর্ভে চার মাসের বাচ্চা নিয়ে এক কিশোরী যখন নিজ ঘরে মুখ লুকিয়ে রেখেছে, তখন ধর্ষক ও তার সহযোগীরা মামলার আসামি হয়েও বীরদর্পে এলাকা চষে বেড়াচ্ছে। মাঝে-মাঝে তারা ধর্ষণের শিকার পরিবারের ওপর চড়াও হয়ে মামলা মিটিয়ে নিতে চাপ দিচ্ছে। এতে রাজি না হওয়ায় দফায় দফায় লাঠিসোঁটা দিয়ে বাড়ি-ঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনা ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার এক গ্রামের।

সরেজমিনে ওই কিশোরীর বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার মায়ের (৫৪) সঙ্গে। তিনি জানান, এই গ্রামের মেয়ে তিনি। পার্শ্ববর্তী গ্রামে তার বিয়ে হয়। তার দুইটি কন্যা সন্তান রয়েছে। বড় মেয়ে (২২) বিয়ে হয়েছে। ছোট মেয়ে (১৩) পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ালেখা করে।

তিনি জানান, বড় মেয়ে জন্ম হওয়ার পর তার স্বামী আরেকটি বিয়ে করেন। এরপর তিনি রাগ করে বাবার বাড়ি চলে আসেন। এখানে আসার পরও স্বামীর সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। স্বামী এখানে আসতেন এবং খোঁজ-খবর রাখতেন। এখানেই জন্ম হয় ছোট মেয়ের।

তিনি বলেন, তিনি খুবই কষ্ট করে সংসার চালান। মাসে পাঁচ শ টাকার চুক্তিতে এক প্রতিবন্ধী নারীর (৫৫) দেখভাল করেন।

তিনি জানান, অন্যদিনের মতো গত জুলাই মাসের ৫ তারিখ ওই নারীর বাড়ি যান তিনি। তার বাড়িতে ছোট মেয়ে একাই ছিল। কাজ শেষে তিনি বাড়ি ফেরেন। বাড়িতে এসে তার মেয়েকে ঘরেই দেখতে পান। তবে তার আচরণ ভালো ছিল না। সবকিছুতে কেন যেন ভয় পাচ্ছিল। এভাবে এক মাস পেরিয়ে যায়। হঠাৎ একদিন দেখতে পান মেয়ে বারবার বমি করছে। এটা দেখে তার সন্দেহ হয়।

তখন মেয়েকে প্রশ্ন করলে মেয়ে ভয়ে কিছু বলতে চাননি। পরে চাপাচাপি করলে বলেন, তাদের বাড়ির পাশের সামায়াত মোল্লার ছেলে মিলন মোল্লা (৩৫) জুলাই মাসের ৫ তারিখ ঘরে একা পেয়ে তাকে ধর্ষণ করেছে। এই কথা বলে সে কান্নায় ভেঙে পড়ে এবং জানায় এ কথা জানাজানি হলে তাদের মেরে ফেলবে। যে ভয়ে সে এত দিন মুখ বন্ধ করে ছিল। তবে সারাক্ষণ চিন্তিত ও ভীত ছিল।

ওই কিশোরী জানায়, ঘটনার দিন সে ঘরের মধ্যে একা ঘুমিয়ে ছিল। এমন সময় মিলন মোল্লা তার ঘরের মধ্যে আসে। তাকে দেখে চিৎকার দিতে গেলে মুখ চেপে ধরে। এরপর তকে ধর্ষণ করে।

সে আরো জানায়, মিলন মোল্লা যাওয়ার সময় হুমকি দিয়ে যায় এ কথা কাউকে বললে মা-মেয়ে দু’জনকেই জবাই করে ফেলবে। যে ভয়ে সে কাউকে কিছু বলেনি। এখন মিলন মোল্লা বিয়ে করতে চাচ্ছে, কিন্তু এই বিয়েতে সে রাজি নয়। সে এই ধর্ষকের উপযুক্ত বিচার দাবি করে।

তার মা জানান, এই ঘটনা জানার পর তিনি মেয়েকে নিয়ে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। সেখানে পরীক্ষা শেষে তার গর্ভের বাচ্চা নিশ্চিত হন। মেয়ের বয়স মাত্র ১৩ বছর হওয়ায় তিনি মেয়েকে নিয়ে চিন্তিত। গর্ভের বাচ্চাটি নিয়ে আছেন আরো বেশি চিন্তায়। কখন কী ঘটে তা নিয়ে সারাক্ষণ আতঙ্কে থাকেন।

এই অবস্থায় সেপ্টেম্বর মাসের ১৩ তারিখ তিনি ঝিনাইদহ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা করেন। যে মামলায় মিলন মোল্লাকে প্রধান এবং যারা তাকে সহযোগিতা করেছে এমন আরো চারজনকে আসামি করা হয়।

আদালত তার আরজিটি এজাহার হিসেবে থানায় নথিভুক্ত করতে শৈলকুপা থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন। পুলিশ এই নির্দেশ পেয়ে মামলাটি নথিভুক্ত করলেও আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি। উল্টো আসামিরা তাদের বাড়িতে এসে নানাভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। মামলা মিটিয়ে না নিলে আরো বড় ক্ষতি হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন।

কিশোরীকে ধর্ষণের মামলার প্রধান আসামি মিলন মোল্লা মেয়েটিকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে আসছেন জানিয়ে বলেন, প্রস্তাবে রাজি না হয়ে ঘটনাটিকে সামাজিক দ্বন্দ্বে রূপ দেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমার স্ত্রী মিতা মোল্লা মারা গেছেন আনুমানিক দুই মাস হয়েছে। ১৪ বছর বয়সের একমাত্র ছেলেকে নিয়ে আমি এখন পথে পথে। আমি এ ঘটনার একটা সমাধান চাই।

এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আরেক আসামি স্থানীয় বড়বাড়ী বগুড়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার ফরিদ মুন্সি জানান, তাকে সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে এ মামলা দেওয়া হয়েছে। তিনি এই ঘটনার কিছুই জানেন না।

এ বিষয়ে শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, আদালতের নির্দেশ পেয়ে তারা মামলাটি নথিভুক্ত করেন। এরপর আসামি গ্রেপ্তারে জোর চেষ্টা করছি। আশা করছি দ্রুত তাদের গ্রেপ্তার সম্ভব হবে।

Development by: webnewsdesign.com