শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ দানবীর সিলেটের ড. সৈয়দ রাগীব আলী

বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | ৩:২৩ অপরাহ্ণ

শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ দানবীর সিলেটের ড. সৈয়দ রাগীব আলী
apps

শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ দানবীর এক অনন্যসাধারণ ব্যতিক্রমধর্মী শিল্পপুরুষ ও কর্মবীর ড. সৈয়দ রাগীব আলী। এই নশ্বর পৃথিবীতে আপন মহিমায় ভাস্বর রাগীব আলী এক কৃতিবান মানুষের নাম। যার উজ্জ্বল পরিচিতি আজ শুধু সিলেট বিভাগে নয়, সারা বাংলাদেশে এমনকি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বিস্তৃত।
দেশের কৃতি শিল্পপতি ও যুগশ্রেষ্ঠ দানবীর আলহাজ্ব ড. সৈয়দ রাগীব আলী। তাঁর রয়েছে এক বৈচিত্র ও বর্ণিল জীবন। ১৯৩৮ সালের ১০ অক্টোবর সিলেট জেলার বিশ্বনাথ থানার বর্তমান রাগীবনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ড. সৈয়দ রাগীব আলী পিতার নাম আলহাজ্ব সৈয়দ রশিদ আলী এবং মাতার নাম রাবেয়া বানু। আট ভাইয়ের মধ্যে তিনি পঞ্চম। রাগীব আলীর পূর্বপুরুষ আফগানিস্তান থেকে আগত। খাজা ওসমান খান লোহানীর সেনাধ্যক্ষ পদ নিয়ে সৈয়দ রাগীব আলীর পূর্বপুরুষ সৈয়দ মোহাম্মদ ইয়াকুব এর আগমন ঘটে বর্তমান বাংলাদেশের সিলেটে।
বিদ্যোৎসাহী পিতার অতি আগ্রহে সৈয়দ রাগীব আলী নিজ বাড়ি থেকে দু’মাইল দূরে লক্ষ্মীপাশা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে পড়াশোনা করেন। এরপর সিলেট নগরীর প্রাণকেন্দ্র বন্দবাজারস্থ রাজা জি.সি হাইস্কুলে ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯৫৬ সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। এর পর থেকে পাল্টে যায় সৈয়দ রাগীব আলীর জীবনের দৃশ্যপট।
তেজোদীপ্ত উচ্চাভিলাষী তরুণ সাত সমুদ্দুর তের নদী পাড়ি দিয়ে ১৯৫৭ সালের ৪ এপ্রিল যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে চলে যান। সেখানে গিয়ে অতি পরিশ্রমের জীবনের সূচনা করেছিলেন তিনি।
শিক্ষার্জনে ভর্তি হলেন ল্যংগুয়েজ কোর্সে। সেখান থেকে কলেজে। এর পর রাগীব আলীর জীবনে আবারও দৃশ্যপটের পরিবর্তন ঘটে।

 

 

মেধা ও পরিশ্রম দিয়ে প্রতিষ্ঠা লাভের আশায় সৈয়দ রাগীব আলী লন্ডনে কঠোর পরিশ্রম করে নিজের অবস্থা একটি স্থিতিশীল পরিবর্তনের দিকে নিয়ে যান রাগীব আলী। ব্যক্তিগত উদ্যোগে ১৯৬১ সালের জুলাই মাসে লন্ডনের স্ট্রেথাম হিলে “তাজমহল” নামে একটি রেস্টুরেন্ট খোলেন। সে সময় লন্ডনে বৃটিশ এবং প্রবাসী বাঙ্গালীদের মধ্যে ইন্ডিয়ান ফুডের বেশ চাহিদা ছিল। নতুন আঙ্গিকে “তাজমহল” রেস্টুরেন্ট’ চালু হলে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং বেশ প্রসার লাভ করে রেস্টুরেন্টটি।
ছাত্রাবস্থায় তিনি লন্ডনের বিখ্যাত পত্রিকা ফ্যাইন্যস টাইম অন্যান্য পত্রিকা পড়তেন। এইসব পত্রিকার কোনোমিক্সফ্যাক্টরী গুলোই তিনি অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে দেখতেন এবং লন্ডনের ব্যবসা-বাণিজ্যের, অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের খোঁজ-খবর রাখতেন। বৃটিশ সমাজ সম্পর্কে বাঙ্গালীরা যেসময় তেমন লক্ষ্য রাখতো না। কিন্তু রাগীব আলী নিজ উদ্যোগে এবং চেষ্টায় পড়াশোনার মাধ্যমে ও বাস্তবভাবে তাদের বোঝার চেষ্টা করতেন। গভীর মনোযোগের সাথে বৃটিশ এবং বিশ্বের অন্যান্য উন্নত ও অনুন্নত দেশের আর্থ-সামাজিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সম্বন্ধে জানবার চেষ্টা করতেন। এসময় লন্ডন ষ্টক এক্সেঞ্জে লয়েডস ও মিডল্যান্ড ব্যাংকের মাধ্যমে শেয়ার কেনাবেচা ব্যবসা শুরু করেন। প্রখর মেধ্যা ও দূরদৃষ্টি দিয়ে ক্রমান্বয়ে এই ব্যবসা একের পর এক সাফল্য লাভ করেন এবং অনেক টাকা উপার্জন করতে সক্ষম হন।
রাগীব আলী ১৯৬৩ সালে দেশে ফিরে ২৬ বছর বয়সে সিলেটের অম্বরখানা পাক্কাবাড়ী মাহফিজ হাউজ নিবাসী ইরফান আলী চৌধুরীর মেয়ে রাবেয়া খাতুন চৌধুরীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং স্ত্রীকে লন্ডনে নিয়ে যান। স্বামী ও সংসারের প্রতি আন্তরিক ও দায়িত্বশীল এবং শ্রমদানে অকুণ্ঠ এক মার্জিত রুচির অধিকারী রাবেয়া চৌধুরী এবার নতুন উদ্যমে নিজেকে সংযুক্ত করেন স্বামীর প্রতিষ্ঠানকে আরো সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নেবার জন্য। স্বামীকে সর্বাত্মক সহায়তা দেন রাবেয়া খাতুন চৌধুরী। ব্যবসার ভাল আয় এবং শেয়ার মার্কেটের আশাতীত লাভ রাগীব আলীর জীবনে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেয়। একে একে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও ভাইদের ইংল্যান্ড নিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেন, দেশে জমিজমা, সম্পত্তি ক্রয় করতে থাকেন। এই সময় ইংলিশ কোম্পানীর পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলংকা ও লন্ডনে যেসব প্রতিষ্ঠান ছিল সৈয়দ রাগীব আলী সেগুলোর শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করতেন। সেই মুনাফা থেকে সে সময় ডানকান ব্রাদার্স, জেমস, ফিনলে, শা-ওয়ালেস ইত্যাদি কোম্পানীর শেয়ার কিনে নেন। ঊাবহরহম ঝঃধহফধৎফ পত্রিকার একটি আর্টিকেল পড়ে বর্তমান হবিগঞ্জ নোয়াপাড়া চা-বাগানের ২% শেয়ার খরিদ করেন। এরপর একের পর এক অগ্রযাত্রার পদক্ষেপ ফেলেন রাগীব আলী। তিনি দেশের বিভিন্ন রুগ্ন চা-বাগান ক্রয় করে সেগুলো নতুনভাবে গড়ে তুলে দেশের চা শিল্পকে সমৃদ্ধ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। দেশের চা শিল্পের উন্নতি ও সমৃদ্ধি ঘটিয়ে উপমহাদেশে বিশিষ্ট চা-কর খেতাবে ভূসিত হয়েছেন।

 

 

 

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ইংল্যান্ড প্রবাসী রাগীব আলী মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সমর্থন ও সহযোগিতা দানে এগিয়ে আসেন। ২৪কেমব্রিজ গার্ডেনে মহান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে প্রথম “বাংলাদেশ সেন্টার” স্থাপনে সৈয়দ রাগীব আলী বিশেষ অবদান রাখেন। তিনি ঐ সেন্টারের জন্য একটি নতুন টাইপরাইটার মেশিন, টেবিল, পর্যাপÍ সংখ্যক চেয়ার ও কার্পেট কিনে দিয়ে সেন্টারের কাজে সূচনা করেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রয়োজনে অর্থ ও সমর্থনের জন্য তিনি বাঙ্গালীদের সঙ্গে নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরেন এবং প্রচুর পরিমান অর্থ সংগ্রহ করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ইংল্যন্ডে বাংলাদেশ হাই কমিশন বিল্ডিং ক্রয় করার সময় সৈয়দ রাগীব আলীর আর্থিক সহায়তা ছিল উল্লেখযোগ্য। লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনের তৎকালীন ডেপুটি হাই কমিশনার ফারুক চৌধুরী এ জন্য রাগীব আলীকে একটি ধন্যবাদপত্র পাঠান। এভাবে রাগীব আলী লন্ডনে কেবল নিজেকেই প্রতিষ্ঠা করেননি, সেখান থেকে তিনি দেশের, জাতির বিপদের মুহূর্তেও সক্রিয় সহায়তা নিয়ে এগিয়ে এসে কর্তব্যবোধ ও দেশপ্রেমের পরিচয় রেখে ইংল্যন্ডে মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রবাসী সংগঠক হিসেবে আভির্ভুত হয়েছিলেন।
দেশ স্বাধীন হবার পর রাগীব আলীর মন স্বাধীন দেশে ফেরার জন্য চঞ্চল হয়ে ওঠে। বিদেশের মাটিতে অর্জিত অর্থ স্বদেশে বিনিয়োগ করে সদ্য স্বাধীন দেশের নতুন অর্থনৈতিক ভিত গড়ে তোলা নিজের আশু কর্তব্য বলে মনে করেন। হানাদার পাকবাহিনী দ্বারা ধ্বংসপ্রাপ্ত দেশের অর্থনীতি বিনির্মানে নিজেকে উৎসর্গ করার মহান ব্রতী হয়ে তিনি মাতৃৃভূমি বাংলাদেশে ফিরেন। প্রথমে সিলেটে এবং পরে ঢাকার সিদ্ধেশ্বরীতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন এবং দেশ ও জাতি পুণর্গঠনে বিশেষ অবদান রাখেন।

 

 

দেশে ফিরে রাগীব আলী ব্যাংক, বীমা, মার্কেট, শিল্প প্রতিষ্ঠান, বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান, চা-বাগান ইত্যাদি বহু কিছু প্রতিষ্ঠা করেছেন, কিনে নিজে মালিকও হয়েছেন। তিনি কোহিনুর সিলিকেট, কোহিনুর ডিটারজেন্ট, সিলেট টি কোম্পানী, স্টার টি এস্টেট, রাজনগর টি এস্টেট, কর্ণফুলী টি এস্টেট, বাঁশখালী টি এস্টেটসহ বহু শিল্প প্রতিষ্ঠান, চা বাগান, প্রিন্টিং প্রেস, পত্রিকা, হাসপাতাল, হোটেল ফেব্রিক্স শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক হন।
শিল্পে, বাণিজ্যে, শেয়ার মার্কেটে, ব্যাংক বীমায় রাগীব আলী অত্যন্ত সফল হয়েছেন। সিলেট ও চট্টগ্রামে প্লøান্টেশনেও এনেছেন বিরাট সাফল্য। চায়ের সবুজ সা¤্রাজ্য গড়ে তুলেছেন তিনি। রুগ্ন চা বাগানগুলো কিনে, ধার-দেনা শোধ করে সেগুলোকে অত্যন্ত লাভজনক করে গড়ে তুলেছেন।
রাগীব আলীর সমাজসেবা জনকল্যাণমূলক কর্মকান্ড অবিশ্বাস্য ও কিংবদন্তীতুল্য। ইংল্যান্ডের কর্মজীবন থেকেই যার শুরু। বৃটেনে প্রবাসী বাঙ্গালী ও বৃটিশ নাগরিকদের সাথে তিনি গড়ে তোলেন বহু সমাজসেবা ও জনকল্যাণমুখী প্রতিষ্ঠান। তৎকালে প্রবাসী বাঙ্গালীদের আশ্রয়, চাকরী, শিক্ষা ও চিকিৎসা ইত্যাদি ক্ষেত্রে সৈয়দ রাগীব আলী এক অনন্য ভূমিকা পালন করেন।
আন্তর্জাতিক মহলে সৈয়দ রাগীব আলীর সুমহান কীর্তিকলাপের প্রশংসা ও স্বীকৃতি আমাদের দেশের অনেককেই উৎসাহিত করে। রাগীব আলীকে ভাল করে জানতে, বুঝতে তার অসাধারণত্বকে সম্যক উপলব্ধি করতে জনহিতৈষী মানব কল্যাণমুখী সমাজসেবার ক্ষেত্রে উপমহাদেশের খুব কম লোকই এ ধরনের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও প্রশংসা অর্জন করেছেন।
ড. সৈয়দ রাগীব আলীর জীবন বৃত্তান্ত থেকে দেখা যায়, তিনি ১৮০টিরও বেশী শিক্ষা ও সমাজকল্যাণ মূলক প্রতিষ্ঠানে মোটা অংকের অর্থ দান করেছেন। আর এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সমাজসেবা মূলক সংস্থা, যুবসংস্থা, মসজিদ, মন্দির, ঈদগাহ, মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজ, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, হোস্টেল, মিলনায়ন, এতিমখানা, পুস্তক প্রকাশনা, মুক্তিযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্থ সদস্যদের পুনর্বাসন, হাজারো মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য গৃহ নির্মান, সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ, স্কুল-কলেজের দালান নির্মাণ ইত্যাদি। তিনি যাকাতের অর্থ দিয়ে গরীব-দুঃখীদের বাসস্থান তৈরী ও তাদের কর্মসংস্থান ও আয় বৃদ্ধির ব্যবস্থা করেছেন। ড, সৈয়দ রাগীব আলী উল্লেখযোগ্য বেশ ক’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও উদ্যাক্তা। তিনি সিলেটে প্রথম বেসরকারী মালিকানায় মেডিক্যাল কলেজ জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং প্রথম বেসরকারী মালিকানায় বিশ্ববিদ্যালয় লিডিং ইউনিভার্সিটি’র প্রতিষ্ঠাতা। তিনি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়-এর একজন উদ্যোক্তা এবং ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য, সাউথ ইষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়-এরও তিনি অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তার পিতার নামে সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় রয়েছে হাজি রাশিদ আলী হাই স্কুল এবং বিশ্বনাথে রয়েছে রাগীব রাবেয়া ডিগ্রি কলেজ। সিলেট শহরতলী তারাপুর এলাকায় জামেয়া ইসলামিয়া রাগীবিয়া নামে একটি কওমী মাদ্রাসাও রয়েছে তাঁর।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য কল্যাণধর্মী প্রতিষ্ঠান যাতে সুচারুরূপে পরিচালিত হয় সেজন্য তিনি অনেকগুলো ট্রাস্ট গঠন করে দিয়েছেন। তিনি যেসব প্রতিষ্ঠানে তার সম্পদ ব্যয় করেছেন সেসব প্রতিষ্ঠানের তিনি প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, প্রতিষ্ঠাতা পৃপোষক ও দাতা, প্রধান পৃষ্ঠপোষক, সদস্য, উপদেষ্টা, আজীবন সদস্য, সভাপতি ও সদস্য হিসেবে সম্পৃক্ত ছিলেন এবং এখনো আছেন।

 

 

দানবীর ড.সৈয়দ রাগীব আলীর দান বিশেষ কোন এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যথা সিলেটের বিশ্বনাথ, সিলেট নগরী, হবিগঞ্জ, নবীগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, জকিগঞ্জ, নবীনগর, চাঁদপুর, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, মুন্সিগঞ্জ, কালীগঞ্জ, গফরগাঁও, টাঙ্গাইল, টঙ্গী, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, শেরপুর, ঢাকা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম, যশোর, বাগেরহাট, পাবনা, কুষ্টিয়া, দিনাজপুর প্রভৃৃতি এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সমাজকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান সমূহে তিনি অকাতরে দান করেছেন ও তার কর্ম প্রচেষ্টায় অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এভাবে ইংল্যান্ডে যাওয়া সিলেটের সংগ্রামী যুবক সৈয়দ রাগীব আলী নিজের প্রখর মেধা ও অক্লান্ত পরিশ্রম দিয়ে শতাব্দির দাতাশ্রেষ্ঠ সমাজসেবী আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন দানবীর ও শিল্পপতি হয়ে ওঠেন।
শতাব্দির শ্রেষ্ঠ দানবীর ড. সৈয়দ রাগীব আলী শিক্ষা ও সমাজ সেবায় অসংখ্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। এই প্রতিষ্ঠানগুলো দেশ ও জাতির উন্নয়নের বিরাট একটি অঙ্গ। এসব প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুনাম কুড়িয়েছে দেশের, ভাবমূর্তি উজ্জল করছে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের। বেসরকারী উদ্যোগে তাঁর উন্নয়নের একটি উজ্জল দৃষ্ঠান্ত দেশের প্রথম বেসরকারী মেডিকেল কলেজ জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটাল। এই মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটাল কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও স্বাস্থ্য সেবায় এক অনন্য অবদান রখে চলেছে।

 

 

 

শিল্পপতি ড. সৈয়দ রাগীব আলী এবং তার সহধর্মিণী, রাবেয়া খাতুন চৌধুরী ১৯৯৫ সালে জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ স্থাপন করেন। তারাপুর টি এস্টেট-এর মধ্যে মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটালের অবস্থান। এর ভূ মির পরিমান ৮.২২ একর (৩.৩৩ হেক্টর)। এর পাশেই রয়েছে জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া নাসিং ইন্সটিটিউট ও সিলেট মদন মোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ব্যবসায় শিক্ষার একাডেমিক ভবন, যা ড. সৈয়দ রাগীব আলীর অবদানে প্রতিষ্ঠিত।
উপমহাদেশের প্রখ্যাত দানবীর দানবীর ড. সৈয়দ রাগীব আলী জাতির সেবা উন্নয়নের লক্ষ্যে স্থায়ী আরেকটি স্বতন্ত্র সেবামূলক ও কল্যাণকর প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন। যেটির প্রতিষ্ঠানের নাম রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশন। সিলেট মহনগরীর বন্দরবাজারস্থ মধুবন সুপার মার্কেটের ৬ষ্ঠ তলায় রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশনের কার্যালয় ও অবস্থান। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ড. সৈয়দ রাগীব আলী দেশের মানুষের আর্থসামজিক উন্নয়ন এবং ধর্মীয় ও সমাজসেবামূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করে থাকেন।
মানবতার কল্যাণে নিবেদিত প্রতিষ্ঠান রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে অনেক অসহায় ও গরীর শিক্ষণার্থী উচ্চশিক্ষা লাভ করেছে এবং এখনো করছে। শিক্ষাকল্যাণে তাঁর এ ফাউন্ডেশনের দ্বার সব সময় উন্মুক্ত। বিভিন্ন কলেজ ভার্সিটির শিক্ষার্থীরা তাঁর এ ফাউন্ডেশন থেকে আর্থিক অনুদান পেয়ে থাকেন। ড.সৈয়দ রাগীব আলী তাঁর এ ফাউন্ডেশনের আওতায় সিলেট বিভাগের প্রত্যন্ত অঞ্চলে জাতির সূর্যসৈনিক মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য শত শত পাকা-আধাপাকা গৃহ নির্মান করে মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসিকভাবে পুনর্বাসনে বেসরকারী প্রথম ভুমিকা রখেন।
মসজিদ-মন্দির মাদ্রসার উন্নয়ন ও ধর্মীয় কাজে এ ফাউন্ডেশন উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছে। তাঁর প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে সিলেটে বেশ কয়েকটি হিন্দু ও বৌদ্ধ মন্দির গড়ে ওঠে। ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনায় প্রতিবছর একটি হজ্জকাফেলা হজ্জব্রত পালনে মক্কা মদীনায় গিয়ে থাকেন । ড. সৈয়দ রাগীব আলী সমাজ উন্নয়নে কাজ করে শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ দানবীর হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছেন।

Development by: webnewsdesign.com