শতবছরের কালিদাস ট্যাংক পুকুরের নাম পাল্টে লালমিয়া ঐতিহ্যবাহী কালিদাস ট্যাংকের সৌন্দর্যবর্ধনে কাজ চলছে বিউটিফিকেশনের নামে নড়াইল জেলার সবচেয়ে পুরোনো পুকুর কালিদাস ট্যাংকের নাম পরিবর্তন করে ‘লাল মিয়া’ রাখা হয়েছে। লাল মিয়া নড়াইলের গৌরব বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের ডাক নাম। তবে এ পরিবর্তনে স্থানীয়ভাবে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। কয়েকদিন ধরে বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। পৌরভবনের পেছনে অবস্থিত শতবছরের পুকুরটির সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ হাতে নেয় নড়াইল পৌরসভা।
প্রায় ৬ কোটি টাকার প্রকল্পটি গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর উদ্বোধন করেন নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজা। তখন থেকেই জনমনে বিভ্রান্তি শুরু হয়, অনেকে প্রতিবাদও করেন। নাম পরিবর্তন চান না স্থানীয়দের অনেকে। এ বিষয়ে সমাজসেবক শাহ আলম বলেন, নাম পরিবর্তন করা অন্যায়। এরকম করলে কোনো ভালো মানুষ আর কোনো কাজ করতে আগ্রহ বোধ করবে না। আমরা দ্রুতই নাম পরিবর্তন করে কালিদাস ট্যাংক করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বলেন, যে মানুষটা জনসাধারণের জন্য এতবড় একটা কাজ করে গিয়েছে, আজ তার নাম মুছে দিয়ে কি প্রমাণ করতে চাইছে আমার জানা নেই। পুরাতন জিনিস সংস্কার বা সৌন্দর্যবর্ধন হতে পারে তাই বলে নাম পরিবর্তন করতে হবে? নতুন প্রজন্মের কাছে আমরা ছোট হয়ে যাচ্ছি।
সমাজসেবক ও স্থানীয় সাংবাদিক কাজী হাফিজুর রহমান বলেন, কাউকে বিকৃত করে বা ছোট করে কোনো উন্নয়ন হয় না। যার যা অবদান তা স্বীকার করে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে হবে। জাতীয় পার্টির সাবেক সভাপতি শরিফ মুনীর হোসেন বলেন, এটি খুব ন্যাক্কারজনক ঘটনা। কালিদাস কোনো আমজনতা ছিল না। এটা নড়াইল জমিদারদের একটা ঐতিহ্যর অংশ। ইতিহাস ঐতিহ্য মুছে দিয়ে কোনোদিন উন্নয়ন হয় না। এটা হীন মানসিকতার পরিচয়।
তবে নাম পরিবর্তন হয়নি এবং বিষয়টি ভুল বোঝাবুঝি বলে দাবি করেছেন নড়াইল পৌরমেয়র আঞ্জুমান আরা। এ বিষয়ে তিনি বলেন, প্রকল্পটি পাশ করার জন্য একজন বিখ্যাত ব্যক্তির নাম প্রয়োজন ছিল। তখন লাল মিয়া নাম দিয়ে পাশ করা হয়। তবে কালিদাস ট্যাংক নাম মুছে ফেলা হয়নি। তড়িঘড়ি করে নামফলক করায় ভুল হয়েছে। সে কারণে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। প্রকল্পটির পরিবর্তিত নাম ‘লাল মিয়া পণ্ড অ্যান্ড কালিদাস ট্যাংক বিউটিফিকেশন প্রকল্প’।
তিনি আরও বলেন, ভুলের বিষয়টি জানতে পেরে আমি সঙ্গে সঙ্গে নামফলকটি পরিবর্তন করার কথা জানিয়েছি। সবাইকে আশ্বস্ত করতে চাই কাজ শেষ হলে পুকুরটি অবশ্যই কালিদাস ট্যাংক নামে থাকবে।
এদিকে শুধু নামই নিয়েই নয়; পুকুরের মালিকানা নিয়েও পৌরসভা ও জেলা পরিষদের মধ্যে চলছে দ্বন্দ্ব। যা গড়িয়েছে মন্ত্রণালয় পর্যন্ত। দুপক্ষই নিজেদের জমি বলে দাবি করছে। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের দাবি সিএসআরএস খতিয়ান মূলে জমির মালিকানা জেলা পরিষদের। অন্যদিকে পৌরমেয়র বলছেন ১৯৭২ সালে পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই মালিকানা তাদের।
জানা যায়, নড়াইল শহরের প্রাণকেন্দ্রে কালিদাস ট্যাংক (পুকুর)। ১৯০৭ সালে মহকুমা শহরের সুপেয় পানি সরবরাহের জন্য জমিদার কালিদাস রায়ের ছেলে নরেন্দ্রভূষন রায় পুকুরটি খনন করেন। তৎকালীন যশোর জেলা বোর্ডের আওতায় ২০০ ফুট লম্বা এবং ১০০ ফুট চওড়া ২৫ ফিট গভীর পুকুরটি খনন করা হয়।
ওই সময় মহাকুমা শহরে সুপেয় পানি সরবরাহের একমাত্র উৎস ছিল এই কালিদাস ট্যাংক। মহিষখোলা মৌজার ৫২৮ নং দাগের ২ একর ৫ শতক জমিতে পুকুরটি অবস্থিত। এ পুকুরের বিষয়ে মিথ চালু আছে। স্থানীয় বৃদ্ধরা বলেন, পুকুরের গভীরে পিতলের ট্যাংক রয়েছে যার চিত্রা নদীর সাথে যোগাযোগে জোয়ারভাটা এ ধরনের মিথ চালু আছে।
Development by: webnewsdesign.com