রূপগঞ্জ উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার অনিয়ম দুঃস্থ নারীদের সেলাই মেশিনের টাকায় ভাগ!

মঙ্গলবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২১ | ৩:৪২ অপরাহ্ণ

রূপগঞ্জ উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার অনিয়ম দুঃস্থ নারীদের সেলাই মেশিনের টাকায় ভাগ!
apps

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে দুঃস্থ নারী সেলাই প্রশিক্ষনার্থীদের কাছ থেকে মেশিন ক্রয়ে টাকা কেটে নেয়ার অভিযোগ ওঠেছে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, ওই কার্যালয়ের দুই নারীর সিন্ডিকেটে ভুয়া প্রশিক্ষনার্থী দেখিয়ে সরকারী অনুদানের অর্থ আত্মসাতের রয়েছে অভিযোগ।

বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, প্রতি বছর দুঃস্থ নারী সদস্যদের সাবলম্বি করে অর্থনৈতিক সচ্চলতা আনতে সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া হয় বিভিন্ন কাজের উপর প্রশিক্ষণ। এর আঁওতায় রয়েছে সেলাইকাজের প্রশিক্ষন দিয়ে নারীদের দক্ষ করে গড়ে তোলার লক্ষ্য। এতোদিন বিতরন করা হতো সেলাই মেশিন। অতীতে সেলাই মেশিন বিতরনে নানা কারিগরি ত্রুটি দেখা দিলে সম্প্রতি সেলাই মেশিন বাবদ টাকা বিতরণ কর্মসূচী চালু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বিগত ০৪ মার্চ ২০২১ ইং থেকে ৩ মাস মেয়াদী ৩০জন প্রশিক্ষনার্থীকে জনপ্রতি ৬ হাজার টাকা সরকারী সহায়তার আশ্বাস দিয়ে ভর্তি দেখানো হয়। উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার অধীনে ওই ব্যাচে মূলত ২০জন নিয়মিত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তবে বাকি ১০জন কারা তা অন্য প্রশিক্ষনার্থীরা জানেন না। কিংবা অফিসের কেউ তাদের পরিচয়ও জানেন না বলে রয়েছে অভিযোগ।

তবে প্রশিক্ষনার্থীর তালিকায় ৩০জনের নাম রয়েছে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রশিক্ষনার্থীরা জানায়, সেলাই মেশিনবাবদ ৬ হাজার টাকা আশ্বাসে তাদের প্রশিক্ষন দেয়া শুরু হয়। কভিড-১৯কালীন অযুহাত দেখিয়ে ৩ মাসের স্থলে ১ মাস ক্লাস করে গত ২৫ অক্টোবর শেষ হয় প্রশিক্ষণ। আশ্বাসমতে প্রশিক্ষনার্থী প্রতি ৬ হাজার দেয়ার কথা থাকলেও তাদের কাছ থেকে কেটে রাখা হয় ৯শত টাকা করে। আবার সনদ দেয়ার কথা বলে আরো ১শত টাকা নেয়া হয় তাদের কাছ থেকে। ফলে তারা পায় ৫ হাজার টাকা মাত্র। শুধূ তাই নয়, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে খুশি করতে আরো ৫ শত টাকা করে দাবী করারও রয়েছে অভিযোগ।

এমন অভিযোগকারী মুড়াপাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী দড়িকান্দি এলাকার জান্নাতি বলেন, আমাদের ৬ হাজার টাকা দেয়ার কথা বলে সেলাই প্রশিক্ষণে ভর্তি করায়। প্রশিক্ষন শেষে ৬ হাজার টাকার স্থলে ৫ হাজার ১শত টাকা দেয়া হয়। আবার ওই টাকা থেকে ১শত টাকা সনদ বাবদ কেটে রাখা হয়। করোনাকালীন আমার কিছু অনুপস্থিত থাকায় ম্যাডাম(উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা)কে খুশি করতে আরো ৫শত টাকা রেখে দেয় ওই অফিসের সহায়ক সুমাইয়া। এভাবে প্রতিজন প্রশিক্ষনার্থীর কাছ থেকে তাদের প্রাপ্য থেকে কমিশন রেখে নারীদের ঠকাচ্ছে।
সূত্র জানায়, একই তারিখে ওই প্রশিক্ষণে অংশ নেন, মুড়াপাড়ার পাবৈ এলাকার বাসিন্দা রেশমা, সরকারপাড়ার রাজিয়া, দড়িকান্দির জান্নাতি, সামিয়া, ব্রাহ্মনগাঁও‘র মুক্তা আক্তার, রানু বেগম, নগর এলাকার পলি, সনিয়া, চাঁদনীসহ নিয়মিত ২০জন প্রশিক্ষনার্থী। তবে রেজিষ্ট্রারে আরো কাল্পনিক ১০ জনসহ ৩০ জনের একটি প্রশিক্ষনার্থী টীম দেখানো হয়। এভাবে ২০জনের কাছ থেকে ৯শত টাকা করে ১৮ হাজার টাকা এবং ১০ জনের ৬ হাজার করে আরো ৬০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করার রয়েছে অভিযোগ।

সূত্র আরো জানায়, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কার্যালয়ের সেলাই প্রশিক্ষক হিসেবে কাজী রহিমা আক্তার এবং অফিস সহায়ক হোসনেয়ারা বেগম দীর্ঘ বছর ধরে একই অফিসে কাজ করে আসছেন। ফলে গড়ে তুলেছেন অনিয়মের সিন্ডিকেট। ভুয়া প্রশিক্ষনার্থী কিংবা স্বজনপ্রীতি করে নিজেদের আত্মীয় স্বজনদের তালিকায় নাম লেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করছে তারা। তাদের মধ্যে কাজী রহিমার বাড়ি পাশ্ববর্তি উপজেলায় হলেও জমি ক্রয় করে অফিসের পাশেই বাড়ি করে বসত করছেন । আর হোসনেয়ারা বেগম স্থানীয় হওয়ায় তাদের স্বজনদের নাম প্রশিক্ষণে অন্তর্ভূক্ত দেখিয়ে অনিয়মে জড়িয়ে যায়। যদিও ওই দুই কর্মকর্তা তাদে বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে রূপগঞ্জ উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা হাফিজা বেগম বলেন, সরকার আমাকে যা বরাদ্দ দিয়েছে তাই বিতরণ করেছি। কোন প্রকার অনিয়ম করিনি। তবে কিছু প্রশিক্ষনার্থী করোনাকালীন ও মার্তৃত্বজনিত কারনে অনুপস্থিত ছিলেন। তবে তাদের সেলাই মেশিনের অর্থ দেয়া হয়েছে। এ সময় তিনি আরো বলেন,আমাকে খুশি করার কোন বিষয় নাই। তাছাড়া আমার ভিন্ন স্টেশনে বদলি হয়েছে। ফলে এর বেশি কিছু বলতে পারছি না।

Development by: webnewsdesign.com