রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নতুন করে যুক্ত হবে ১২০০ শয্যা। এতে হাসপাতালটিতে মোট শয্যা সংখ্যা দাঁড়াবে ২৪০০টিতে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শয্যা আর জনবল সংকট কাটলে সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত হবে উত্তরের সবচেয়ে বড় এই হাসপাতালটিতে। হাসপাতালটিতে ১২০০ শয্যা বাড়লে রোগীদের মেঝেতে থাকার সমস্যা অনেকটাই সমাধান হবে। ওয়ার্ডগুলোতে অতিরিক্ত রোগীর চাপ কমবে ভিন্ন ভিন্ন ওয়ার্ড হওয়ার কারণে। একই সঙ্গে চিকিৎসা সংশিষ্ট চিকিৎসক, নার্সসহ অন্য জনবল বাড়বে। এতে করে চিকিৎসকরা বেশি সময় নিয়ে রোগীদের চিকিৎসা দিতে পারবেন। একই সঙ্গে ভোগান্তি করবে চিকিৎসাসেবা প্রত্যাশীদের।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রামেক হাসপাতালের শয্যা ৫৫০ থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১২০০। ওয়ার্ড প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। সেই অনুপাতে বাড়েনি জনবল। ফলে হিমশিম অবস্থায় ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ রোগীর চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে গেল কয়েক বছরে চিকিৎসাসেবা সহজ করতে ব্যাপক উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে হাসপাতালটিতে। আউটডোর-ইনডোর প্যাথলজি, ব্লাড ব্যাংকের সক্ষমতা বৃদ্ধি ছাড়াও টিকেট কাউন্টার ৬টি থেকে ১৫টিতে উন্নীত করা হয়েছে। এতে রোগীদের ভোগান্তির সঙ্গে সঙ্গে কমেছে অপেক্ষার পালা। এছাড়া সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে হাসপাতালে মডার্ন লেবার রুম বাড়ানো, হাসপাতাল পরিচ্ছন্ন রাখতে নানা রকম উদ্যোগ, দালাল দূরীকরণ, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও রোগীর ভোগান্তিদূর করতে নানা রকম সাইনবোর্ডের মাধ্যমে দিকনির্দেশনা, প্যাথলজির সক্ষমতা বৃদ্ধি, করোনা ওয়ার্ড, হাসপাতালের নিজস্ব অক্সিজেন সিলিন্ডার স্থাপন করা হয়েছে।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা মোজ্জামেল হক নামে এক রোগী বলেন, আমরা আগে এটাকে সদর হাসপাতাল বা বড় মেডিকেল নামে চিনতাম। এখনও অনেকেই এই নামে চেনে। তবে তিন বছর আগে যে মানুষ চিকিৎসা সেবা নিতে এসেছেন, তিনি এখন আসলে ঠিকঠাক চিন্তে পারবে না। কারণ অনেক সুন্দর হয়েছে হাসপাতালটা। এখন অনেক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। তার সঙ্গে থাকা রহিম বলেন, হাসপাতালে রোগীদের জায়গা হয় না। অনেক রোগীদের মেঝেতে থাকতে হয়। তবে শয্যা বাড়লে অনেক ভালো হবে। শয্যা বাড়লে তো ডাক্তার, নার্স বাড়বে। এতে করে রোগীরা আরও ভালো চিকিৎসা সেবা পাবে।
জানা যায়, হাসপাতালের বেশি কিছু কাজ চলমান ও শেষ পর্যায়ে। তারমধ্যে হাপাতালের ইমারজেন্সি ও ক্যাজুয়ালিটির সক্ষমতা বৃদ্ধি, মডার্ন মরচ্যুয়ারি, গাইনি আউটডোর, দর্শনার্থী গোসলখানার সঙ্গে টয়লেট (২টি নারী, ২টি পুরুষ) ৪০ শয্যাবিশিষ্ট আইসিইউ, বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ভবন দুই তলা আছে যা ছয়তলা করা হচ্ছে, হাসপাতালের সৌন্দর্য বর্ধন, ১০ তলা বিশিষ্ট ক্যান্সার, কিডনি, হৃদরোগ ডিপার্টমেন্ট, রেডিওলজি এক্সটেনশন, স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সাব স্টেশন (৫৫০ কঠঅ), পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য অ্যাপ্রোন ড্রেন। তিন তলা বিশিষ্ট গাইনি ওটি।
রামেক হাসপাতালের নার্সিং সুপারেনটেনডেন্ট সুফিয়া খাতুন বলেন, শয্যা বাড়লে অনেক সুবিধা বাড়বে। চিকিৎসক বাড়বে, নার্স বাড়বে, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী বাড়বে। সেবার মান বাড়বে। সবচেয়ে বেশি সার্পট পাবে রোগীরা। তাদের আরও ভালো চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত হবে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলী বলেন, শয্যা বাড়লে অনেক ভালো হবে। চিকিৎসক বাড়বে। সেবা বাড়বে। বর্তমানে হাসপাতালে ৯০ শতাংশ রোগের পরীক্ষা হয়। হাসপাতালে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। কিছু বাকি আছে। কিছু চলামান রয়েছে।
হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিজে এফএম শামীম আহাম্মদ জানান, আমাদের প্রশাসনিকভাবে ১২০০ শয্যা রয়েছে। কিন্তু তার কয়েকগুলো বেশি রোগীরা সেবা নিয়ে তাকে। হাসপাতালের শয্যা বাড়ানোর বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছি। সম্ভাবতই ১২০০ শয্যা বাড়বে। আগামী দুই বছরের মধ্যে হবে। হাসপাতালের মিডিল ক্লাব ১০ তলা ফাউন্ডেশন। সেখানে পাঁচ তলা সম্পন্ন। এই ভবন বাড়ানো হবে। সবমিলে ১২০০ শয্যার জায়গা হয়ে যাবে।
রাজশাহী সিভিল সার্জন ডা. আবু সাইদ মোহাম্মদ ফারুক বলেন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজে (রামেক) হাসপাতালে খুব ভালো চিকিৎসা হয়। এখানে প্রতিদিন অনেক রোগী চিকিৎসা সেবা নেয়। হাসপাতালে ১২০০ শয্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে বিষয়টি আমিও শুনেছি। তবে অফিসিয়ালী কোন চিঠি পাইনি। আশা করছি অল্প সময়ের মধ্যে চিঠি পাব।
Development by: webnewsdesign.com