আজ বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল ২০২৫) বিশ্ব হোমিওপ্যাথি দিবস। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক ডা. স্যামুয়েল হ্যানিম্যানের জন্মদিনে পৃথিবীব্যাপী এই দিবসটি পালন করা হয়। ২০০৩ সালে বিশ্বব্যাপী হোমিওপ্যাথি দিবস পালন শুরু হলেও বাংলাদেশে হচ্ছে ২০১৪ সাল থেকে।
জানা যায়, হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক হ্যানিম্যান ১৭৯৬ সালে ‘হোমিওপ্যাথি’ নামক একটি চিকিৎসা পদ্ধতি বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেন। হ্যানিম্যানই প্রথম বলেন, ভেষজ বস্তুকে ওষুধ হতে হবে তার অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার গুণে। সাধারণ ভেষজ গুণাবলি থাকলেই কোনো বস্তু ওষুধ হিসেবে স্বীকৃত হবে না, যতোক্ষণ না তার অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার বিকাশ ঘটানো হয়।
একটি বস্তুর অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার উন্নয়ন ঘটিয়ে যখন তা সুস্থ মানবদেহে প্রয়োগ করা হবে এবং তার ঔষধি গুণাবলির প্রকাশ দেখা যাবে, তখন তাকে ওষুধ হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এভাবে কোনো বস্তুর অভ্যন্তরীণ ক্ষমতা উন্নয়নের প্রক্রিয়াকে বলা হয় ডাইনামাইজেশন বা পোটেন্টাইজেশন। হোমিওপ্যাথিতে ওষুধ হচ্ছে শক্তির আধার। কোনো ওষুধ বস্তুর অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার উন্নয়ন ঘটিয়ে যখন শক্তিকরণ করা হবে, তখন তা ওষুধে রূপান্তরিত হবে। এ ওষুধ যখন রোগীর দেহে প্রয়োগ করা হবে, তখন তা আরোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবে। এভাবে অনেক সাধারণ ভেষজ গুণাবলিহীন বস্তুও হোমিওপ্যাথিতে ওষুধে রূপান্তরিত হয়ে রোগীর জন্য আরোগ্য হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
বর্তমানে বাংলাদেশে অ্যালোপ্যাথিক ওষুধে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আমাদের দেশীয় ওষুধ শিল্পে বিপ্লব চলমান রয়েছে। দেশের চাহিদার প্রায় ৯৮ শতাংশ ওষুধ দেশেই উৎপাদন হয় এবং বিশ্বের প্রায় ১১৩টি দেশে রফতানি হয়। এতো কিছুর পরও দেশে প্রচলিত চিকিৎসাব্যবস্থার পাশাপাশি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাপদ্ধতি জনপ্রিয় হচ্ছে। বিবিসি বাংলা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বর্তমানে ৪০ ভাগ মানুষই হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা নেন।
এই চিকিৎসাপদ্ধতির চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশের অনেক মানুষ এখনও দরিদ্র। বিভিন্ন রোগ, যেমন- কিডনির সমস্যা দূর করতে সর্বশেষ পদ্ধতি অপারেশনের মাধ্যমে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করা। যা অনেক ব্যয়বহুল। কিন্তু হোমিওপ্যাথিতে শুধুমাত্র ওষুধ দিয়ে তা দূর করা সম্ভব হয়েছে। এই চিকিৎসার খরচও খুব কম। সব মিলিয়ে দেশের এই দরিদ্র জনগোষ্ঠী মূলত অ্যালোপ্যাথি বাদ দিয়ে হোমিওপ্যাথিসহ অন্যান্য চিকিৎসার প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। আর চিকিৎসকদের মতে, রোগী চিকিৎসা নিয়ে মানসিকভাবে সন্তুষ্ট থাকলে রোগমুক্তির পথ অত্যন্ত সহজ হয়। শুধুমাত্র কম খরচের দরুণ এই চিকিৎসা নিয়ে মানসিক প্রশান্তির মাধ্যমে রোগমুক্তি হচ্ছে।
এছাড়া মানুষের গোপনাঙ্গের সমস্যা বা যৌন সমস্যা দূরীকরণে হোমিওপ্যাথি ও হারবাল-ইউনানির সাফল্য অ্যালোপ্যাথির চেয়ে বেশি। এক্ষেত্রে মানসিক প্রশান্তির কথা উল্লেখ করে চিকিৎসকরা বলেন, যৌন সমস্যার বেশিরভাগই মানসিক সমস্যা। এক্ষেত্রে রোগীরা লজ্জাবোধ করে চিকিৎসকদের কাছে আসতে চান না। তারা হয় নিজে জেনে ওষুধ কিনে খান বা এসব হোমিওপ্যাথি ও হারবাল-ইউনানি কেন্দ্রে উপস্থিত হয়। এক্ষেত্রে অজস্র হয়রানির স্বীকারও হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
২৭১তম জন্মদিন পালনে ডিএইচএমএস ডক্টরস্ এ্যাসোসিয়েশন রাজশাহী জেলার উদ্দ্যোগে সকাল ১০টায় রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। প্রধান অতিথি ছিলেন জনাব টুকটুক তালুকদার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিক্ষা ও আইসিটি, রাজশাহী, সভাপতিত্ব করেন, ডা. মো. মহিদুজ্জামান ফারুক সভাপতি, ডিএইচএমএস ডক্টরস্ এ্যাসোসিয়েশন রাজশাহী জেলা। স্বাগতম বক্তব্য রাখেন ডা.মোতাহার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ডিএইচএমএস ডক্টরস্ এ্যাসোসিয়েশন রাজশাহী জেলা।
এ সময় রাজশাহী হোমিওপ্যাথি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ আনিসুর রহমান, ডা. মো.সালেহ হামিম টুটুল, যুগ্ন সাধান সম্পাদক, ডিএইচএমএস ডক্টরস্ এ্যাসোসিয়েশন রাজশাহী জেলা, ডা. মো. হাফিজুর রহমান (পান্না), ডা. ফাইজুল ইসলাম, ডা. ডলি, ডা. জুলফিগার, ডা. মোরশেদ, শিক্ষক ও শিক্ষর্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
Development by: webnewsdesign.com