রাজশাহীতে পুলিশের এসআই এর বিরুদ্ধে ৫০ লাখ টাকার চাঁদাবাজির মামলা

শনিবার, ২০ নভেম্বর ২০২১ | ৬:১৯ অপরাহ্ণ

রাজশাহীতে পুলিশের এসআই এর বিরুদ্ধে ৫০ লাখ টাকার চাঁদাবাজির মামলা
apps

রাজশাহীতে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে আদালতে মামলা হয়েছে। বুধবার বোয়ালিয়া মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নাদিমসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে নগরীর শিরোইল এলাকার ব্যবসায়ী ড. তানবীর হাবিব আদালতে এই মামলা করেন।

আমলি আদালত মামলা আমলে নিয়ে তা তদন্তে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দিয়েছেন।

এছাড়া এসআই নাদিমের বিরুদ্ধে তানবীরের ম্যানেজারকে আটকে রেখে ও মামলা দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টারও অভিযোগ আনা হয়েছে মামলায়। এসব ব্যাপারে আইজিপি বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন তানবীর।

জানা যায়, ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে ব্যবসায়ী ড. তানবীর প্রথমে বোয়ালিয়া থানায় মামলা করতে যান। কিন্তু থানা মামলা গ্রহন না কারায় বুধবার বোয়ালিয়া থানার আমলি আদালতে তিনি মামলা করেন।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন- নগরীর শিরোইল এলাকার বাসিন্দা শারমিন, স্বামী মজিবর রহমান খোকন, একই এলাকার এমাজউদ্দিনের ছেলে ওবাইদুল ইসলাম এবং নূর ইসলামের ছেলে রাজু আহম্মেদ।

মামলার এজাহার এবং আইজিপি বরাবর লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, শিরোইল এলাকায় ব্যবসায়ী তানবীরদের ছয়তলা বাড়ির পাশে আটতলা ভবন নির্মাণ করেন শারমিন ও খোকন। রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) অনুমোদন ছাড়াই গত বছরের জানুয়ারিতে নির্মিত আটতলা ভবনটি নির্মাণের পরপরই তানবীরদের বাড়ির দিকে হেলে পড়ে। এ ঘটনায় তানবীরের বাবা আবদুল হাই চলতি বছরের জুনে আদালতে মামলা করেন। এরপর থেকে তানবীরকে এসআই নাদিম মামলাটি আপস করে নেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন।
এ ঘটনার পর ৯ নভেম্বর শ্রমিক দিয়ে হেলে যাওয়া ভবনের কার্নিশের অংশ ভেঙে ফেলতে শুরু করেন শারমিন ও খোকন। এ সময় তানবীর হেলে যাওয়ার আলামত নষ্ট যেন না হয় সেজন্য মৌখিকভাবে অনুরোধ করেন। সে সময় সেখানে এসআই নাদিম এবং শারমিন ও খোকনের ১২-১৪ জন ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী ছিল।

একপর্যায়ে পোশাক ও পিস্তুল দেখিয়ে তানবীরকে এসআই নাদিম বলেন, ‘তোর মতো লোককে মারার জন্য এগুলো সরকার আমাকে দিয়েছে।’ এ সময় তানবীরের কাছে এসআই নাদিম ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।

শারমিন ও খোকন বলেন, ‘৫০ লাখ টাকা না দিলে আজ তোর বাড়ি ভেঙে চুরমার করে দেব।’ একই সময় সন্ত্রাসীরা তানবীরের ওপর হামলা করে।

এ ঘটনার পর ১৫ নভেম্বর দুপুর ১টার দিকে মামলার দুই নম্বর সাক্ষী তানবীরের ম্যানেজার পারভেজ হোসেন সোহাগের বাড়িতে সাদা পোশাকে যান এসআই নাদিম। তার মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে বাড়িতে তাকে দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। এ সময় সোহাগের কাছে এসআই নাদিম ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে তাকে মামলায় ফাঁসানোর এবং এলাকা ছাড়ার হুমকি দেন নাদিম।

ব্যবসায়ী তানবীর বলেন, শারমিন ও খোকনের নিকটাত্মীয় এসআই নাদিম। আমার বাবা মামলা করার পর থেকে নাদিম আপস করার জন্য চাপ দিচ্ছেন। সর্বশেষ ৯ নভেম্বর নাদিমের উপস্থিতিতে আমার ওপর হামলা হয়েছে। এছাড়া বিষয়টি সমাধানের জন্য আমার কাছে তিনি ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। আমি বর্তমানে চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। পুলিশি হয়রানির আতঙ্কে রয়েছি।

এ বিষয়ে শারমিন অস্বীকার করে বলেন, সন্ত্রাসী হামলার অভিযোগ সঠিক নয়। বরং আমরাই হামলার শিকার হয়েছি। নিরাপত্তাহীনতায়
রয়েছি। এ ঘটনায় আমরাও মামলা করেছি। আরডিএ থেকে ভবন নির্মাণের জন্য অনুমোদন না নেওয়ার অভিযোগও সঠিক নয়। আর নাদিম আমাদের আত্মীয় নন। এছাড়া আমরা নিজেরাই প্রতিনিয়ত নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছি।

চাঁদা দাবির অভিযোগ অস্বীকার কওে বোয়ালিয়া থানার এসআই নাদিম উদ্দিন বলেন, ব্যবসায়ী তানবীরের বিরুদ্ধে মজিবর রহমান খোকনের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আমি। এ কারণে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে তানবীর আমার বিরুদ্ধে আদালতে চাঁদাবাজির মামলা করেছেন। চাঁদা দাবির অভিযোগ ভিত্তিহীন। এছাড়া তানবীরের ম্যানেজার সোহাগও মামলার আসামি। তাকে গ্রেফতারের জন্য তার বাড়িতে অভিযান চালিয়েছি। তাকে অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগও ভিত্তিহীন।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) অতিরিক্ত উপকমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, এসআই নাদিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা এবং চাঁদা দাবির অভিযোগ সম্পর্কে মামলার বিষয়টি জানিনা। এ ব্যাপারে বিধিবিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Development by: webnewsdesign.com