মঙ্গলবার, ২৯ মার্চ ২০২২ | ১:০৯ অপরাহ্ণ
যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটির ছাতিয়ানতলা মল্লিক পাড়ায় ননী ফল নার্সারির আড়ালে যৌন চিকিৎসার নামে প্রতারণার ফাঁদ পাতা খন্দকার কবীর হোসেনের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে। অভিযোগ উঠেছে, তিনি ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে নিজের ক্ষমতা জানান দেয়ার অপচেষ্টা করেন।
তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলে পুলিশ ও ফেসবুক আইডিতে ডাক্তার পদবী লিখেছেন। ফেসবুকে আইডিতে নিজের নাম পাল্টে হয়েছেন মাইন উদ্দিন। স্থানীয়রা বলছেন, প্রতারক কবীরের একই অঙ্গে বহুরুপ। আর তিনি এসব করেন চিকিৎসা প্রতারণা ব্যবসা জোরদার করার জন্য।
জানা গেছে, খন্দকার কবীর হোসেনের ছবি সম্মিলিত একটি ফেসবুক আইডিতে পরিচয় লিখেছেন ডা. মাইন উদ্দিন। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করেছেন। যশোর সদর হাসপাতালের প্রাক্তন ডাক্তার ও ইন্টার্নিশীপ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
সদর হাসপাতালের প্রশাসনিক সূত্র জানিয়েছে, মাইন উদ্দিন নামে কোনো চিকিৎসক কোনো সময় হাসপাতালে ছিলেন না। ১০০ ভাগ ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া মাগুরায় বসবাস বলে লেখা হয়েছে। যা আদৌ সত্য নয়। সূত্র জানায়, খন্দকার কবীর হোসেনের পৈত্রিক বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ার নারকেলবাড়িয়া এলাকায়। তিনি একটি বিশেষ বাহিনীর চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর থেকেই ছাতিয়ানতলা গ্রামে বসবাস শুরু করেন। তার পিতা ওসমান আলী খন্দকার ও মাতার নাম রিজিয়া খাতুন। তিনি কখনোই ডাক্তার ছিলেন না। ছাতিয়ানতলা মল্লিক পাড়ায় ননী ফল নার্সারি করার পর থেকে তিনি ডাক্তার বনে গেছেন। আর যৌন চিকিৎসার নামে মানুষের সাথে মহা প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
সূত্রটি আরও জানায়, খন্দকার কবীর হোসেন পুলিশে চাকরি না করলেও তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলে (যশোর-হ ১৫-৭৫৮৩) নম্বর প্লেটে পুলিশ লিখে রেখেছেন। অভিযোগ উঠেছে, খন্দকার কবীর ভুয়া ডাক্তার ও পুলিশ পরিচয়ে মানুষের সাথে প্রতারণা করেছেন।
কবীরের নিকটতম একটি সূত্র জানায়, ডা. মাইন উদ্দিন ফেসবুক পেজে ননী ফল নার্সারি ও যৌন চিকিৎসার প্রচার চালিয়ে মানুষকে বোকা বানিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন কবীর। ইনবক্সে কোন রোগী যোগাযোগ করলে কুরিয়ারে ওষুধ দেয়ার নাম করে বিকাশ নম্বরে অগ্রিম টাকা হাতিয়ে নেন তিনি। টাকা দেয়ার পর অনেকের ওষুধ পাঠানো হয়না। আর এলাকায় নিজের ক্ষমতা জাহির করতে নিজের মোটরসাইকেলে পুলিশ লিখে চলাফেরা করেন।
এই বিষয়ে খন্দকার কবীর হোসেন জানান, আমার পিতা পুলিশে চাকরি করতেন। আর চাচা শ্বশুর পুলিশের একজন বড় কর্মকর্তা । ফলে তিনিও পুলিশ পরিবারের সদস্য। মোটরসাইকেলের নম্বর প্লেটে পুলিশ লেখা হয়েছে। তবে এটা প্রতারণার উদ্দেশ্যে না। ডা. মাইন উদ্দিন পরিচয়ে ফেসবুক আইডি খোলার বিষয়ে কবীর বলেন, আমার ছবি ব্যবহার করে মোট ৫ টা ভুয়া আইডি খোলা আছে। ভুয়া আইডি খোলার বিষয়ে প্রশাসনকে অবগত করছেন কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি কৌশলে এড়িয়ে যান।
ভুয়া ডাক্তার সেজে প্রতারণার বিষয়ে যশোর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মীর আবু মাউদ জানান, ভুয়া পরিচয়ে মানুষকে ধোকা দেয়ার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। ভুয়া ডাক্তার খন্দকার কবীর হোসেনের যৌন চিকিৎসার নামে প্রতারণার বিষয়ে জানতে পেরেছি। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা তার বিষয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছে।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) জাহাঙ্গীর আলম জানান, কবীর হোসেন পুলিশ না হয়েও মোটরসাইকেলে পুলিশ লেখা অবশ্যই অন্যায়। এই ব্যাপারে খোঁজ নেয়া হবে। আর ভুয়া পুলিশ সেজে প্রতারণার বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ করলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ,খন্দকার কবীর হোসেনের প্রাতিষ্ঠানিক কোনো ডিগ্রি না থাকার পরও সকল রোগ নিরাময়ের শতভাগ গ্যারান্টি দিয়ে চিকিৎসা করে আসছেন। একই সাথে নানা প্রকারের ওষুধ তৈরি করছেন। চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের ছাতিয়ানতলা মল্লিক পাড়ায় ননী ফল নার্সারীর অন্তরালে তিনি চিকিৎসার নামে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছেন।