যশোরে দগ্ধ শিশুর মৃত্যুতেও মিটলোনা পিতা-মাতার দ্বন্দ্ব

শনিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২০ | ৯:০৭ অপরাহ্ণ

যশোরে দগ্ধ শিশুর মৃত্যুতেও মিটলোনা পিতা-মাতার দ্বন্দ্ব
apps

পাঁচ বছরের শিশু আল আমিন ক্ষোভের আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার পরও মিটলো না পিতা-মাতার দ্বন্দ্ব। বরং তার মৃত্যুর পর দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হয়েছে। মঙ্গলবার ময়নাতদন্ত শেষে তার লাশ নিয়েও টানাটানি হয়েছে। পিতা ও মাতা উভয়ে লাশ নিয়ে যাওয়ার দাবি করলে ঘটনার ঘটে। পরে দুজনই সন্তানের মৃতদেহ বুঝে নিলেও দাফন করার জন্য নিয়ে যায় মা তামান্না খাতুন। পিতা দাউদ সরদার জানান, জীবিত থাকতেও সন্তানকে গ্রহণ করতে চাইলেও তারা দেননি। আবার মারা যাওয়ার পরও মৃতদেহ দাফন করতে দেয়া হলোনা।

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার শঙ্করপুর ইউনিয়নের বাকুড়া গ্রামের দাউদ সরদার ও তামান্না খাতুনের দ্বন্দ্ব শুরু হয় আল আমিন গর্ভে আসার পর থেকেই। দাউদ সরদারের ধর্ষণে তামান্না অন্তঃসত্ত্বা হয়েছিলো বলে দাবি তার। বাকুড়া গ্রামের আবুল কালামের মেয়ে তামান্না দাউদ সরদারের বাড়িতে ঝিঁয়ের কাজ করার সুবাদে তাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছিলো।

২০১৫ সালের ২০ অক্টোবর তামান্নার মা সাকিরন নেছা বাদি হয়ে দাউদ সরদারের বিরুদ্ধে যশোর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্রুনালে মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-২২৩১৭। বর্তমানে মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে-২ বিচারাধীন। এদিকে মামলার পর দাউদ সরদার ধর্ষণ ঘটনা ও সন্তানের বিষয়টি অস্বীকার করেন। পরে বাদীর আবেদনের পেক্ষিতে বাচ্চার ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। রিপোর্ট প্রমান মেলে গর্ভের সন্তান দাউদ সরদারের।

এরপর থেকে দাউদ সরদার ও তামান্নার দ্বন্দ্ব আর থামেনি। তামান্না জানিয়েছেন, আমার মা সাকিরন শিশু আলআমিনকে নিয়ে সদর উপজেলার দেয়াড়া ইউনিয়েনের এড়ন্দা গ্রামে বসবাস করেন। গত ৭ অক্টোবর আমার মা (সাকিরন) আলআমিনকে নিয়ে বাকুড়া গ্রামে বেড়াতে যায়। সাকিরন নেছা জানান, নাতি ছেলেক নিয়ে আমি মশারির নিচে ঘুমিয়ে ছিলাম। রাত ১ টার দিকে আলআমিনের চিৎকার শুনে ঘুম ভেঙ্গে যায়। এসময় দেখতে পায় মশারিতে আগুন জ্বলছে। আগুনে আলআমিনের শরীর পুড়ে গেছে। তখন আমি মশারি থেকে বের হয়ে ঘরের দরজা খুলে চিৎকার দিলে আশেপাশের লোকজন এসে আলআমিনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। তামান্না ও সাকিরনের দাবি, দাউদ সরদার ইটের ফাঁক দিয়ে মশারিতে আগুন দিয়ে শিশু আল আমিনকে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে।

এদিকে, শিশু সন্তান আলআমিনকে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় নানি সাকিরনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন পিতা দাউদ সরদার। পিবিআই মামলাটি তদন্ত করছে। এরই মধ্যে গত সোমবার (২৩ অক্টোবর) দুুপুরে মারা যায় শিশু আল আমিন। বাঁকড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এসআই হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, শিশু আলআমিন আগুনে পুড়ার পর প্রথমে ভর্তি করা হয়েছিলো যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে। সেখান থেকে পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। চিকিৎসকরা তার শারীরিক অবস্থার দেখে ১৩ অক্টোবর বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। ২৩ অক্টোবর বাড়িতেই মারা যায় শিশু আল আমিন।

তার মৃতহে উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, আল আমিনের মৃতদেহ নেয়ার জন্য এসেছেন তার পিতা দাউদ সরদারসহ পরিবারের লোকজন। আবার সন্তানের মৃতদেহ গ্রহণ করার জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন তার মা তামান্না খাতুন। পিতা-মাতা দুইজন সন্তানের মৃতদেহ গ্রহণ করতে চাইলে শুরু হয় তর্কবিতর্ক। তারা মৃতদেহ নিতে টানাটানিও করেন। পরে মা তামান্না মৃতদেহ নিয়ে যান। তামান্না জানান, দাউদ সরদার জীবিত থাকতে সন্তানের খোঁজ নেননি। এখন মারা যাওয়ার পর মৃতদেহ নিতে এসেছেন দাউদ সরদার। আমার সন্তানের মৃতদেহ আমি নিয়ে যাচ্ছি।

এদিকে, দাউদ সরদার জানান, ঘটনার পর থেকে মামলা নিষ্পত্তি ও আলআমিনকে দেখভাল করার নামে আমার কাছ থেকে সাড়ে ১২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন সাকিরন নেছা। আমার সন্তানকে ফিরিয়ে নিতে চাইলেও তারা দেননি। দ্বন্দ্ব নিষ্পত্তিতে আমি বার বার রাজি হয়েছি। কিন্তু তারা ছিলো নারাজ। আল আমিনকে নিজেদের কাছে রেখে টাকা হাতিয়ে নেয়া হলো তাদের লক্ষ্য। আমার দেয়া টাকায় আলআমিনের নামে কেনা জমি আত্মসাৎ করতে তাকে আগুনে পুড়িয়ে মারার ঘটনা ঘটানো হয়েছে। শেষ পর্যন্ত সন্তানের মৃতদেহ আমাকে দেয়া হলোনা।

এদিকে, স্বজনদের সূত্রে জানা গেছে, শনিবার বিকেলে যশোর সদরের দেয়াড়া ইউনিয়নের এড়েন্দা গ্রামে আল আমিনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। ছেলেকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় নানির সাকিরননেছার বিরুদ্ধে মামলা করবেন বলে দাউদ সরদার জানান।

Development by: webnewsdesign.com