ময়নাতদন্তে নারী, ডিএনএ টেস্টে হলো পুরুষ

সোমবার, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | ১২:২১ অপরাহ্ণ

ময়নাতদন্তে নারী, ডিএনএ টেস্টে হলো পুরুষ
apps

সিলেটের নিখোঁজ এক গৃহবধূর গলিত লাশ (কঙ্কাল) সন্দেহে উদ্ধারের পর তার ডিএনএ টেস্টের জন্য মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়। পরীক্ষা শেষে নমুনায় আসে নারী নয়, এটি কোনো পুরুষের মরদেহ।

এমন প্রতিবেদন দিয়ে উচ্চ আদালতে জামিন চেয়েছেন ওই গৃহবধূর স্বামী এবং মামলাটির একমাত্র আসামি ওমর ফারুক। রোববার (৭ ফেব্রুয়ারি) শুনানি শেষে গৃহবধূ পুতুল হত্যা মামলায় আসামিকে জামিন না দিয়ে বিচারকাজ ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বিচারিক আদালতকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এরপর এ বিষয়ে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার এ আদেশ দেন।

ঘটনার শুরু ২০১৫ সালের ১৯ অক্টোবর। ওইদিন সিলেটের জৈন্তাপুরে বাবার বাড়িতে থাকা গৃহবধূ পুতুলের মোবাইল একটি কল আসে। সে কলের পর ঘর থেকে বের হয়ে পুতুল নিখোঁজ হন। এরপর ওই বছরের ৩ নভেম্বর নিখোঁজের ঘটনায় থানায় একটি জিডি করেন পুতুলের মা। একপর্যায়ে পুলিশ পুতুলের স্বামী ওমর ফারুক দোলনকে গ্রেফতার করে। এরপর ওই বছরের ৪ নভেম্বর সিলেটের জৈন্তাপুর থানায় মামলা করেন নিহতের মা আনোয়ারা বেগম।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, নিখোঁজের দিন টেলিফোনে ডেকে নিয়ে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করে পুতুলকে হত্যা করে তার স্বামী। এ মামলার পরদিন ওই বছরের ৫ নভেম্বর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন ওমর ফারুক।

অন্যদিকে ওই বছরের ৩১ অক্টোবর সিলেটের জাফলং ভ্যালি বোর্ডিং স্কুল পার্শ্ববর্তী পাহাড়ি নালার পাশের জঙ্গল থেকে একটি অর্ধগলিত ‘কঙ্কাল প্রায়’ মরদেহ উদ্ধার করে জৈন্তাপুর থানা পুলিশ। পরে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের জন্য মরদেহ সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, এটি ২-৩ মাস আগে মৃত কোনো নারীর মরদেহ বলে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান। তবে পরিচয় নিশ্চিত হতে ‘কঙ্কাল প্রায়’ মরদেহের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হাসপাতালে পাঠানো হয়।

২০১৬ সালের ৪ ডিসেম্বর ডিএনএ রিপোর্ট দেওয়া হয়। সে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, মরদেহটি পুরুষের। আর এই ডিএনএর সঙ্গে পুতুলের বাবা-মায়ের জৈবিক কোনো মিল নেই। এমন বাস্তবতায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সেই ‘কঙ্কাল প্রায়’ লাশটির ডিএনএ পুনরায় পরীক্ষা করার উদ্যোগ নেন বলে মামলায় উল্লেখ করেন। তবে লাশটির কবর চিহ্নিত করতে না পারায় পুনরায় ডিএনএ পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি।

একপর্যায়ে ২০১৭ সালের ১২ মার্চ পুতুলের স্বামী ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। বর্তমানে সিলেটের তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। সর্বশেষ এই মামলায় জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন ওমর ফারুক। সে আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ওমর ফারুককে জামিন না দিয়ে পুতুল হত্যা মামলাটি ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন। সেই সাথে এ বিষয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়।

আদালতে আসামিপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী।

Development by: webnewsdesign.com