মেডিক্যালে চান্স পাওয়া হিলির মেধাবী শিক্ষার্থী রিফাতের ভর্তি নিয়ে অনিশ্চিতা

মঙ্গলবার, ১২ এপ্রিল ২০২২ | ২:১৮ অপরাহ্ণ

মেডিক্যালে চান্স পাওয়া হিলির মেধাবী শিক্ষার্থী রিফাতের ভর্তি নিয়ে অনিশ্চিতা
apps

“ইচ্ছা থাকলে উপায় হয় ” নিজের ইচ্ছা শক্তি ও অদম্য মেধাকে কাজে লাগিয়ে এই প্রবাদ বাক্যটিকে বাস্তবে রুপ দান করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন দিনাজপুরের হাকিমপুর (হিলি) পৌর শহরের মাঠপাড়া গ্রামের মুদিদোকানির ছেলে অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থী রিফাত ইসলাম। অন্যে শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বই ধার নিয়ে এবং বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আন্তরিক সহযোগিতায় রিফাত ভর্তির প্রস্তুতি নিয়ে কুমিল্লা সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু দারিদ্র্যেতার সঙ্গে সংগ্রাম করে নিজ ইচ্ছা শক্তি অধ্যাবসয়ের ফলে এপর্যন্ত এগিয়ে আসার পর অর্থ-সংকটের কারণে তার মেডিক্যালে ভর্তি হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। তার চোখে মুখে এখন দুশ্চিন্তার ছাব দেখা গেছে।

রবিবার (১০ এপ্রিল) রিফাতের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার মা’র শত দুশ্চিন্তার মাঝেও ছেলের এই সাফল্যেতায় এক চিলতে মুচকি হাসি বলে দিচ্ছে সে কষ্ট ভূলে গেছে।উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন গ্রাম মাঠপাড়ায় বসবাস রিফাতের পরিবারের। দুই ভাইয়ের মধ্যে রিফাত বড়। ছোট ভাই ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। বাবা আমিন ইসলামের রয়েছে ছোট্ট মুদিদোকান। ভালো কোনও স্কুল কলেজে পড়ার সুযোগ ছিল না তার। শিশু শ্রেণিতে তিনি লেখাপড়া করেছেন গ্রামের ব্র্যাক স্কুলে। এরপর বাসুদেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পিএসসিতে জিপিএ-৫ ও সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পান। একই স্কুল থেকে অষ্টম শ্রেণিতে জিপিএ-৫-সহ ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়ে ভর্তি হন বাংলাহিলি পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজে। ২০১৯ সালে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাস করে ভর্তি হন স্থানীয় হাকিমপুর সরকারি কলেজে। ২০২১ সালে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন রিফাত। অভাবের কারণে প্রাইভেট পড়ার সুযোগ হয়নি তার।

মেডিক্যালে ভর্তির সুযোগ পাওয়া রিফাত ইসলাম বলেন, আমি নিজে যেহেতু গরিব পরিবারের সন্তান। ছোট বেলা থেকে দুঃখ কষ্ট ও প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠে আজ মেডিক্যালে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি। একজন দরিদ্র পিতা-মাতার যে কি কষ্ট আমি তা বাস্তবে দেখেছি। আমি যেদিন থেকে মেডিক্যালে ভর্তি হয়ে ডাক্তার স্বপ্ন দেখেছি সেদিন থেকেই আমি মনে মনে ঠিক করি আল্লাহর অশেষ রহমত ও সকলের দোয়ায় যদি ডাক্তার হইতে পাড়ি দরিদ্রদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য আমার নিজ গ্রামে একটি চেম্বার থাকবে। আমি দেশের যেখানেই থাকি না কেন, মাসে একবারও যদি আসি সেদিন বিনামূল্যে আমার নিজ গ্রাম ও এলাকার মানুষকে চিকিৎসা দেবো ইনশাআল্লাহ!

রিফাতের মা লাভলী বেগম বলেন, আমাদের গরীবের সংসার। ছেলে আমার অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করেছে। আজ ছেলে মেডিক্যালে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে এটি মা হিসেবে আমার খুব খুশির বিষয়! এটা যে আমার কেমন আনন্দ তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। মেডিক্যালে ভর্তির সকলের সহযোগিতা ও সবার দোয়া কামনা করছি।

রিফাতের বাবা আমিন ইসলাম বলেন, আমি গরীব মানুষ যা আয় করি তা দিয়ে কোন রকমে আমার সংসার চলতো।আমার ছেলেকে পড়ালেখা করানো কোনো ভাবেই সম্ভব ছিল না। আল্লাহর নিকট শুকরিয়া আমার ছেলের মেধা দিয়েছে। সেই সাথে তার শিক্ষকদের সহযোগিতায় সে এতদূর আসতে পেরেছে। আজ আমার ছেলে মেডিক্যালে সুযোগ পেয়েছে, কিন্তু ভর্তিসহ পড়ার খরচ চালানোর মতো কিছু নেই আমার। কষ্ট করে যেভাবে এতদূরে এসেছে, এভাবেই সামনের দিকে যেতে হবে। আমার ছেলের পড়াশুনার জন্য সকলের সহযোগিতা ও সবার দোয়া কামনা করছি।

রিফাতের এই সাফল্যতায় হিলিবাসীসহ আনন্দে ভাসছে গ্রামের মানুষ। সেই সাথে নিজ বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকাসহ তার শুভাকাঙ্ক্ষীরা আনন্দে ভাসছে। রিফাতের বাংলাহিলি পাইলট স্কুল এন্ড কলেজ এর শিক্ষকরা তার এই সাফল্যর জন্য দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থী হিসেবে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মেডিক্যালে ভর্তির জন্য কিছু আর্থিক সহযোগিতা করেছেন।

বাংলাহিলি পাইলট স্কুল এন্ড কলেজ এর সিনিয়র সহকারী শিক্ষক সাইদুল ইসলাম বলেন, স্কুল জীবন থেকে আমি লক্ষ্য করেছি রিফাত অনেক ভদ্র ও নরম স্বভাবের ছাত্র। রিফাত অনেক মেধাবী ছাত্র। তার মধ্যে একটা ইচ্ছাশক্তি ছিল প্রবল ” আমাকে পারতেই হবে”। আমরা স্কুলের শিক্ষকরা তাকে সব সময় উৎসাহ ও সাহস দিয়েছি। তার কাছ থেকে সব সময় আমরা পজিটিভ কিছু পেয়েছি। আমি আশাবাদী, সে মেডিক্যালের পড়া শেষ করে আরও উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে দেশ ও জাতির সেবা করবে। সেই সাথে নিজ গ্রাম ও এলার গরীব অসহায় মানুষের চিকিৎসা সেবা দিবে।

হাকিমপুর সরকারি কলেজের প্রভাষক শহিদুল ইসলাম বলেন, কলেজে রিফাত খুব শান্ত ও ভদ্র ভাবে থাকতো। কোন দুষ্ট বখেটা ছেলেদের সাথে তাকে আড্ডা দিতে কখনো দেখিনি। সবসময় পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে দেখেছি তাকে। নিজের ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ভালো কিছুর করার আগ্রহ নিয়ে পড়াশোনার কারণেই তার এই সফলতা। আমি ভবিষ্যত জীবনের আরও সাফল্যতা কামনা করছি।
রিফাতের বিষয়ে জানতে চাইলে, হাকিমপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন উর রশীদ হারুন বলেন, পড়ালেখার ক্ষেত্রে টাকা পয়সা কোনও বাধা নয়। ইচ্ছা “শক্তিই যে বড় শক্তি বা ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়” মেডিক্যালে চান্স পেয়ে সেটিই প্রমাণ করেছে আমাদের রিফাত ইসলাম। সে যেন মেডিক্যাল কলেজে পড়াশোনা করতে পারে, দেশের একজন ভালো চিকিৎসক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে– এজন্য তার পড়ালেখা চালিয়ে যেতে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে ইনশাআল্লাহ।

Development by: webnewsdesign.com