ফিলিস্তিনের গাজায় “চলমান গণহত্যা ও জাতিগত নিধনের বিরুদ্ধে” প্রতিবাদ জানাতে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। নানা রকম পোস্টার, ব্যানার, প্ল্যাকার্ড এবং বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনের পতাকাসহ বিপুল সংখ্যক মানুষ এতে অংশ নিয়েছেন।
‘প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশ’ নামে একটি প্ল্যাটফর্মের উদ্যোগে “মার্চ ফর গাজা” কর্মসূচির ডাক দেয়া হয়। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি, হেফাজতে ইসলামের বিভিন্ন নেতা, ইসলামি বক্তাসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এই কর্মসূচিতে একাত্মতা জানান।
শনিবার বিকেলে সমাবেশে পাঁচ দফা দাবিতে একটি ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়। এতে ইসরায়েলের সাথে বাংলাদেশ সরকারের সব চুক্তি বাতিলের দাবিসহ গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ এবং মুসলিম বিশ্বকে ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক ছিন্নের আহ্বান জানানো হয়।
কর্মসূচিতে সংহতি জানানো ধর্মীয় বক্তা ও বিভিন্ন দলের নেতাদের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বানানো মঞ্চে উপস্থিত হতে দেখা গেছে। তবে কর্মচূচিতে নারীদের উপস্থিতি তুলনামূলক কম ছিল। শনিবার দুপুরের পর থেকেই ফিলিস্তিনের পতাকাসহ হাজারো মানুষ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে আসতে শুরু করে। দুপুর নাগাদ উদ্যান মানুষে পূর্ণ হয়ে যায়।
এ সময় শাহবাগ ও এর আশেপাশের এলাকায় গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরপর ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে বাস, ট্রাক নিয়ে মানুষকে সোহরাওয়ার্দীর নিকটবর্তী এলাকায় নেমে মিছিল নিয়ে ভেতরে আসতে দেখা গেছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যানারেও কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন অনেক শিক্ষার্থী। এছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে অনেককে রওনা দিতে দেখা গেছে। ইসরাইয়েলি গণহত্যার নিন্দা এবং তা বন্ধ করতে নানা ধরনের স্লোগান দিতে দেখা যায় এসব মিছিলে অংশ নেয়া মানুষদের। কর্মসূচিতে অংশ নেয়া কয়েকজন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ফিলিস্তিন ও গাজার মুসলমানদের ওপর যে হত্যাযজ্ঞ চলছে তার প্রতিবাদ জানাতে তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উপস্থিত হয়েছেন। তারা বার্তা দিতে চান, যেন অবিলম্বে এই হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা হয়। সেই উদ্দেশ্যেই তাদের এই ‘মার্চ’।
বিকেল চারটার দিকে শাহবাগ, মৎস্য ভবন, ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট তথা উদ্যানের আশেপাশের প্রতিটি রাস্তা লোকে লোকারণ্য ছিল। রাস্তায় সেনাবাহিনী ও পুলিশকে নিরাপত্তা চৌকি বসিয়ে অবস্থান দিতে দেখা গেছে। তেজগাঁও এলাকায় ট্রেনের ছাদে করেও অনেককে কর্মসূচিতে যোগ দিতে আসতে দেখা যায়। সোহরাওয়ার্দীতে জড়ো হওয়া মানুষদের কয়েকজন জানান, ঢাকাসহ আশেপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকেও অনেকে এই কর্মসূচিতে যোগ দিতে সকালেই এখানে চলে এসেছেন। সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ‘মার্চ ফর গাজা’ ইভেন্টে ৮০ হাজারের বেশি সংখ্যক মানুষ এতে অংশ নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
কর্মসূচি ঘোষণা করার সময় রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউ অভিমুখে মার্চ করার কথা ছিল। পরে সে সিদ্ধান্তে বদলে শনিবার বেলা তিনটায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণজমায়েত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
‘প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশ’র পক্ষ থেকে দেয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার জন্য একটি পথ নির্দেশনা দেয়া হয়।
এই কর্মসূচিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ইলিয়াস কাঞ্চন, বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান, ইসলামী বক্তা মিজানুর রহমান আজহারী ও শায়খ আহমদুল্লাহসহ আরও অনেকেই একাত্মতা জানান।
‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে মানুষের ঢল
এর আগে, গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে কয়েক দফায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়। এর মধ্যে গাজার প্রতি সংহতি জানানোর নামে ডাকা মিছিল থেকে গত সাতই এপ্রিল সোমবার সিলেট, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ বেশ কয়েকটি জেলায় কেএফসি, বাটা, পিৎজা হাটসহ এক ডজনেরও বেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।
এছাড়াও গত বৃহস্পতিবার ফিলিস্তিনের গাজা ও রাফায় ইসরায়েলি আগ্রাসন এবং গণহত্যার প্রতিবাদে দেশব্যাপী প্রতিবাদ মিছিল ও সংহতি সমাবেশ কর্মসূচি পালন করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও ‘মার্চ ফর গাজা’ শীর্ষক এই কর্মসূচিতে একাত্মতা প্রকাশ করেন।
Development by: webnewsdesign.com