হবিগঞ্জের মাধবপুরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধান ভাঙানোর কাজ করছেন যুবকেরা কৃষকের ঘরে উঠেছে পর্যাপ্ত ধানের ফলন। দীর্ঘ চার মাসের পরিশ্রমের ফলন ভালোভাবে তুলতে পেরে কৃষকও বেশ খুশি। এখন ধান কাটা মাড়াই ও শুকানোর পর চাল করার জন্য ঘরের পুরুষের ওপর নির্ভর করে থাকতে হচ্ছে না। বেঁচে যাচ্ছে সময় ও অর্থ দুটোই। গত ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে ধানের চারা রোপণ ও মে মাসে দিন মজুর ও হার্ভেস্টার মেশিনের মাধ্যমে কাটা ও ঝাড়ার কাজ করা হয়। পুরো কাজ মেশিনে করায় অর্থ যেমন সাশ্রয় হয়েছে তেমনি সময়ও বেঁচে গেছে অনেক। করোনা মহামারিতে কৃষি শ্রমিকের অভাব থাকায় ধান ঘরে তোলা নিয়ে শঙ্কিত ছিলেন কৃষকেরা। কিন্তু এই আধুনিক যন্ত্রপাতি সহজতর করে দিয়েছে কৃষকের কাজ। যা দেখে অনেক কৃষকই এখন নিশ্চিন্ত। শুকানো ধান ভাঙাতে গৃহস্থরা এখন তা ভাঙাতে বেশ ব্যস্ত। ধান ভাঙানোর মেশিন দূরে হওয়ায় তা বহন করতে লাগে বাড়তি অর্থ। গ্রামাঞ্চলে উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ব্যবহারে তৈরি করা ধান ভাঙার মেশিন বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে। আধুনিক পদ্ধতি চালু হওয়ায় ধান ভাঙানোর জন্য গৃহস্থদের হাট-বাজার কিংবা মেইল বাড়িতে এখন আর যেতে হচ্ছে না। ঘরে বসেই পাচ্ছেন ধান ভাঙার সুবিধা। এতে করে কৃষক ও গৃহস্থদের সময় ও শারীরিক কষ্ট থেকে রক্ষা পাচ্ছেন তারা। পাশাপাশি ধান ভাঙতে লোডশেডিং কিংবা বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কবলে পড়তে হচ্ছে গৃহস্থদের মাধবপুর উপজেলার পৌরসভা সহ ১১টি ইউনিয়নের প্রায় প্রত্যেকটি গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধান ভাঙানোর কাজ করছেন যুবকেরা। এতে দারিদ্রতা ঘোচানোর পাশাপাশি বাড়তি অর্থ আয় করছেন মাধবপুর উপজেলার এসব যুবক। গ্রামের বেকার যুবকরা স্থানীয় প্রযুক্তিতে একটি পাওয়ার ট্রিলার মেশিনের সঙ্গে ১টি হলার যোগ করে নিজেদের উদ্যোগে ধান ভাঙার মেশিন তৈরি করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধান ভাঙার কাজ করছেন। এক সময় মানুষ তাদের উৎপাদিত শুকনো ধান ভাঙতে অনেক কষ্ট করত। ধান ভাঙার মেইল বাড়িতে গিয়ে ধান ভাঙতে আসা যাওয়াসহ গৃহস্থদের অনেক পরিশ্রম হয়।
মাধবপুর উপজেলার হরিশ্যামা গ্রামের গৌতম দাশ বলেন, দীর্ঘদিন বেকার থাকায় অনেক ঘুরেছি। কাজকর্ম ছিল না। পরে আমার বাবার পরামর্শে ধান লাগানোর মৌসুমে পাওয়ার টিলারের মাধ্যমে জমি চাষ এবং বাড়ি বাড়ি গিয়ে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে ধান ভাঙানোর কাজ করে আসছি। এতে আমার আর্থিক দৈনতা যেমন কাটাতে পেরেছি তেমনি বেকারত্বের গ্লানি থেকেও মুক্তি পেয়েছি। প্রতিদিন প্রায় ৩০ থেকে ৪০ মণ ধান ভাঙাতে পারি। যা থেকে সব খরচ দিনে ১ হাজার টাকা আয় করি। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধান ভাঙানোর কাজ করছেন যুবকেরা। একই এলাকার রইছ মিয়া জানান, ‘আগে পুরুষ মানুষের ওপর নির্ভর করতে হতো। এখন আর তা করা লাগে না। মেশিন বাড়িতে চলে আসে বলে আমরাই সঙ্গে থেকে ধান ভাঙাতে পারি। এ মেশিনের মাধ্যমে বাড়িতে ধান ভাঙতে আমাদের অনেক সুবিধা হয়েছে। আগে বস্তায় করে পরিবহনের মাধ্যমে মেইল বাড়িতে নিয়ে যেতে অনেক কষ্ট হতো। টাকাও লাগতো দ্বিগুণ। এখন আর তা লাগে না।’
মাধবপুর উপজেলার হোসেনপুর গ্রামের শাজাহান মিয়া বলেন , এ মেশিনে ধান ভাঙতে খরচ সামান্য বেশি হলেও কোনো প্রকার গৃহস্থের কষ্ট নেই। পরিশ্রম ছাড়া ঘরে বসেই ধান ভাঙতে পেরে খুবই খুশি। কারণ মেইল বাড়িতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকে ধান ভাঙতে হয়। অনেক সময় লোডশেডিংয়ের কারণে সারাদিন লেগে যেতো। এখানে এই সমস্যা নেই। এখন অনেক সুবিধা হয়েছে।
মাধবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আল মামুন হাসান বলেন, গৃহস্থরা এখন ধান শুকাতে ব্যস্ত হয়ে ওঠছেন। সে সঙ্গে এখন চলছে ধান ভাঙার কাজও। যাদের ধান ভাঙার প্রয়োজন তারা যোগাযোগ করলে মেশিন নিয়ে বাড়িতে গিয়ে ভাঙার কাজ করা হয়। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধান ভাঙার প্রচুর চাহিদা আছে।
তাছাড়া ধান ভাঙার মেশিনের শব্দশুনে আশপাশের লোকজন আসেন বলে জানায়। ধীরে ধীরে দেশে কৃষি শ্রমিকের সংখ্যা কমে আসছে। প্রযুক্তি নির্ভর করতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। এ বছর মাধবপুর উপজেলার ৩০ একর জমিতে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষককে তার সুবিধা সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে। ৫০ ভাগ ভর্তুকি দিয়ে উপজেলায় কয়েকটি হার্ভেস্টার মেশিনের ব্যবস্থাও করে দিয়েছে সরকার। কৃষি বান্ধব এ সরকার সর্বদাই কৃষকের স্বার্থে কাজ করছে।
এ ব্যাপারে মাধবপুর প্রেসক্লাবের সেক্রেটারী সাব্বির হাছান বলেন, যদি সরকার আরো প্রণোদনা বা ক্ষুদ্র ঋণ চালূ করে তাহলে কৃষকরা আরো ধান সহ বিভিন্ন আশ জাতীয় চাষে উদ্বুদ্ধ হবে।
Development by: webnewsdesign.com