হবিগঞ্জের মাধবপুরের নোয়াপাড়া স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে ২৩ মাস ধরে অনুপস্থিত রয়েছেন চিকিৎসা কর্মকর্তা। এ ছাড়া উপসহকারী চিকিৎসা কর্মকর্তার পদটি শূন্য রয়েছে প্রায় আড়াই বছর ধরে। আর ৯ মাস ধরে নেই ফার্মাসিস্টও। ফলে চিকিৎসা নিতে রোগীদের তীব্র ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।
যেতে হচ্ছে দূরের হাসপাতালে। স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা অফিস সহায়ক ও সম্প্রতি সংযুক্ত মিডওয়াইফ সেবা দিচ্ছেন রোগীদের সরেজমিনে দেখা যায়, চিকিৎসা কর্মকর্তার দরজায় তালা ঝুলছে। রোগীরা ভিড় করছেন ওষুধ প্রদানকারীর কক্ষের দরজায়। দায়িত্বে থাকা অফিস সহায়ক রেজাউল করিম সেবা দিচ্ছেন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আসা রোগীদের।
স্বাস্থ্য কেন্দ্র সূত্রে জানা যায় ২০১৯সালের আগস্ট থকে চিকিৎসা কর্মকর্তা বিশাকা মাসুক বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। আর উপসহকারী চিকিৎসা কর্মকর্তা ইমলাক আহমেদ ২০১৮ সালে ডিসেম্বর মাসে অবসরে (এলপিআর) এ চলে যান।
সবশেষ গত বছরের অক্টোবরে অবসরে (এলপিআর) চলে যান একমাত্র ফার্মাসিস্ট আলাউদ্দিন এরপর থেকে একমাত্র অফিস সহায়ক রেজাউল করিমই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের রোগীদের সেবা দেওয়ার দায়িত্বে আছেন। আর তাঁর সঙ্গে সদ্য সংযুক্ত হয়েছেন আয়েশা আক্তার নামের একজন মিডওয়াইফ তিনিও এখন চিকিৎসা দিচ্ছেন রোগীদের।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে এম এইচ মুরছালিন নামের একজন চিকিৎসককে প্রেষণে দেওয়া হয়েছে। তিনি সপ্তাহে দুই দিন ওই কেন্দ্রে এসে চিকিৎসা দেন। চলমান লকডাউনে তিনিও ওই কেন্দ্রে চিকিৎসা দিতে আসেননি নোয়াপাড়া ইউনিয়নের মৃত ময়ব আলীর স্ত্রী ফজিলা খাতুন বলেন, ‘জ্বরে শরীর কাঁপছে, সঙ্গে গলা ব্যথা।
তাই হাসপাতালে আসছি ওষুধ নিতে। চিকিৎসক না থাকায় তিনিই (অফিস সহায়ক) এখন আমাদের চিকিৎসক অপরদিকে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের ওই কেন্দ্রের দায়িত্বে আছেন পরিদর্শিকা শিখা বণিক তিনি বলেন,সপ্তাহ ছয় দিন নোয়াপাড়া ও একদিন ছাতিয়াইন স্বাস্থ্য কেন্দ্র দায়িত্ব পালন করতে হয়।
এ দুই কেন্দ্রের দায়িত্ব আমাকে একাই পালন করতে হয় শিখা বণিক আরও বলেন, নোয়াপাড়া স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রতি মাসে ১৮ থেকে ২০ জন নবজাতকের স্বাভাবিক প্রসব হয়। কিন্তু চিকিৎসক না থাকায় মুমূর্ষু রোগীদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেরণ করতে হয়। বিভিন্ন সময় বাচ্চা প্রসবের পরে একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হয়।
কিন্তু ওই কেন্দ্রে চিকিৎসক না থাকায় মুমূর্ষু রোগীরা বিপাকে পড়েন জলশিখা বণিক আরও জানান, স্বাস্থ্য কেন্দ্রের নাইট গার্ড নেই রাতে প্রসবের রোগী আসলে একা একা ভয় পাই ঝুঁকির মধ্যে কাজ করতে হয়,নোয়াপাড়া স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের।
অফিস সহায়ক রেজাউল করিম বলেন দৈনিক ৭০ থেকে ৮০ জন রোগীকে সেবা দিতে হচ্ছে জরুরি কাজে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলেও এখানে মিডওয়াইফই চিকিৎসা দিচ্ছেন চিকিৎসক না থাকার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে
নোয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. জাবেদ বলেন বৃহৎ শিল্পাঞ্চল এলাকা নোয়াপাড়া প্রায় ৫০ হাজার লোকের বসবাস এই ইউনিয়নের স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসক কর্মকর্তা না থাকায় এলাকাবাসী সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত। বিষয়টি কয়েকবার উপজেলা সমন্বয় সভায় আলোচনা করেছি।
মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ইসতিয়াক মামুন বলেন, নোয়াপাড়া স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসা কর্মকর্তা তিন দিনের ছুটি নিয়ে ২৩ মাস কর্মস্থলে অনুপস্থিত তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সব কার্যক্রম প্রস্তুত করা হচ্ছে, ইসতিয়াক মামুন বলেন অচিরেই তাঁকে বরখাস্ত করা হবে ওই কেন্দ্রে একজনকে প্রেষণে দেওয়া হয়েছে। করোনার টিকা কার্যক্রম ও রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে।
Development by: webnewsdesign.com