ভূরুঙ্গামারীতে সরকারি ধানকাটার মেশিন বিক্রি, অভিযোগের পর মেশিন ফিরে পেলেন কৃষকরা

রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫ | ৮:৪৭ অপরাহ্ণ

ভূরুঙ্গামারীতে সরকারি ধানকাটার মেশিন বিক্রি, অভিযোগের পর মেশিন ফিরে পেলেন কৃষকরা
apps

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় সরকারি ধান কাটা (রিপার) মেশিন বিক্রির অভিযোগে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এক উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে ইতিমধ্যে শোকজ করা হয়েছে।অভিযোগের প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় ইতোমধ্যে রিপার মেশিনটি উদ্ধার করে দল উৎপাদক দলের কয়েক জনকে ডেকে মেশিনটি বিতরণ করেন বলে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা কৃষি অফিস।

উল্লেখ্য যে, ভূরুঙ্গামারী উপজেলার তিলাই ইউনিয়নের দক্ষিণ তিলাই এলাকায় দল উৎপাদক দলের কৃষকরা তাদের রিপার ধান কাটা মেশিন না পেয়ে ভূরুঙ্গামারী উপজেলার কৃষি অফিসের উক্ত ওই ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল খালেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।
উপজেলার দক্ষিণ তিলাই এলাকার কৃষকরা ৭ অক্টোবর ২০২৫, মঙ্গলবার, ভূরুঙ্গামারী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়ে উর্দ্ধতন কর্মকর্তাকেও অনুলিপি দেয়।

অভিযোগে বলা হয়—রংপুর বিভাগ কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দকৃত ধান কাটা রিপার মেশিন (মডেল: CHINA 4G 120AB, ইঞ্জিন নম্বর: 170F-24110037, পাওয়ার: 6HP, চেসিস নম্বর: 202505055) ‘দক্ষিণ তিলাই ফল উৎপাদক দল’-এর নামে ৩/৯/২৫ তারিখে বিতরণ করা হয়।
কিন্তু মেশিনটি দলের কোনো সদস্যকে না দিয়ে, দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল খালেক ফল উৎপাদক দলের সাধারণ সম্পাদক বাদশা আলমগীরের পদবী জালিয়াতি করে দক্ষিণ তিলাই গ্রামের বাসিন্দা রিপন মিয়াকে ভুয়া সাধারণ সম্পাদক বানিয়ে রিপন মিয়ার কাছে গোপনে বিক্রি করে দেন।

দক্ষিণ তিলাই ফল উৎপাদক দলের সদস্যরা অভিযোগে বলেন, “রিপন মিয়া আমাদের দলে নেই। অথচ সরকারি বরাদ্দের রিপার মেশিনটি তাকেই দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটি সরাসরি দুর্নীতি ও কৃষকদের সঙ্গে প্রতারণা।

তারা আরও জানান, “সরকার কৃষকদের উৎপাদন খরচ কমাতে ও সময় বাঁচাতে যান্ত্রিকীকরণের উদ্যোগ নিয়েছে। অথচ মাঠ পর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা সেই সুবিধাকে ব্যক্তিগত বাণিজ্যে পরিণত করেছেন।

কৃষকরা অবিলম্বে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল খালেকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও রিপার মেশিনটি দলের নিকট ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান।

অভিযোগ হওয়ার পরে ভূরুঙ্গামারী কৃষি অফিস নরে চরে বসে এবং রিপার ধান কাটা মেশিন উদ্ধারের জন্য ব্যস্ত হয়।পরে অভিযোগের ২ দিন পর ৯ অক্টোবর বৃহস্পতিবার বিকেলে ভূরুঙ্গামারী কৃষি অফিস থেকে অভিযোগ কারীদের ডেকে উপজেলা কৃষি অফিসার,উপজেলা নির্বাহী অফিসার,উপসহকারী কৃষি কর্সমকর্হতাসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ উপস্থিত থেকে রিপার ধান কাটা মেশিন বিতরণ করেন।

(রিপার) ধান কাটা মেশিন বিষয়ে জানতে গণমাধ্যমকর্মীরা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল খালেকের কাছে জানতে চেয়ে সরকারের এত বড় একটা দায়িত্বে থেকে টাকার বিনিময়ে মেশিনটি বিক্রি করেছেন এবং প্রায় দুই মাস পর কৃষকরা জানতে পেরে কৃষি অফিস বরাবর অভিযোগ করার পর মেশিনটি উদ্ধার করেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য না দিয়ে পালিয়ে যায়।

অন্যদিকে, মেশিনটি ক্রয় করেছেন দক্ষিন তিলাই গ্রামের আতোয়ার হোসেন ইউপি সদস্যের ছেলে রিপন মিয়া।রিপন মিয়াকে ৭ অক্টোবর থেকে তারও কয়েক দিন আগে রিপার মেশিন ক্রয় করার বিষয়ে জানার জন্য একাধিকবার ফোন করা হলে তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।পরিশেষে একবার ফোন ধরে গণমাধ্যম কর্মীর পরিচয় শোনার পর বলে বাজারে আছি এ বিষয়ে পরে কথা বলবো বলে ফোন কেটে দেয়।পরবর্তীতে রিপন মিয়ার কাছ থেকে রিপার ধাবনকাটা মেশিনটি কৃষি অফিস উদ্ধার করে।মেশিন চলে যাওয়ার পর রিপন মিয়া ও শাহিন নামে দুজন গণমাধ্যম কর্মীর অফিসে এসে গণমাধ্যম কর্মীকে বলেন ওই দিন আমি ফোন ধরিনি আমি অন্য কাজে ব্যস্ত ছিলাম।রিপন মিয়া তার মুখে স্বীকার করেন (রিপার) ধান কাটা মেশিন উপসহকারী আব্দুল খালেকের নিকট (৩৫০০০) পয়ত্রিশ হাজার টাকা দিয়ে ক্রয় করেন।ফল উৎপাদক দলের সাধারণ সম্পাদক কি ভাবে হলেন জানতে চাইলে রিপন মিয়া বলেন আমি ওই দলের কোনো সদস্য না। আমি অনেক দিন আগে উপসহকারী আব্দুল খালেকের কাছে একটা সরকারি মেশিন চাইলে তিনি বলেন টাকা দিলে মেশিন পাবেন।পরে আমি ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে রিপার ধানকাটা মেশিন ক্রয় করি।রিপন মিয়ার কাছে রিপার ধান কাটা মেশিন বিতরণের রেজিস্ট্রার খাতায় রিপন মিয়ার স্বাক্ষর ও সীল থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে রিপন মিয়া বলেন মেশিন যখন নিয়েছি সেদিন আমাকে ফল উৎপাদক দলের ভুয়া সাধারণ সম্পাদক বানিয়ে তাদের রেজিস্ট্রার খাতায় আমার স্বাক্ষর ও সীল নেয়।এবং সীল তৈরি করার সহযোগিতা করেন ওই উপসহকারী আব্দুল খালেক।রিপন মিয়া আরও বলেন আমার কাছ থেকে মেশিনটি কৃষি অফিস ফেরত নেওয়ার সময় আমাকে কৃষি অফিসে যেতে বলেন উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুল জব্বার স্যার।কিন্তু আমি কৃষি অফিসে না যেতে চাইলে আমাকে মামলার হুমকি দেন।আমি বলেছি মামলা দেন না কি দেন আমি ভয় পাই না।

ভূরুঙ্গামারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল জব্বার ৯ অক্টোবর বলেন,কৃষকদের অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা তদন্ত শুরু করি। প্রাথমিক তদন্তে উপসহকারী আব্দুল খালেকের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। ওই রিপার মেশিনটি উদ্ধার করা হয়েছে এবং যাদের পাওয়ার কথা ছিল, তাদের কাছেই হস্তান্তর করেছি।তিনি আরও জানান,“অভিযোগের পরপরই আব্দুল খালেককে শোকজ করা হয়েছে। তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে—কেন তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা লিখিতভাবে জানাতে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে পূর্বেও একাধিক অভিযোগ ছিল। বিষয়টি আমরা বিভাগীয় পর্যায়ে পাঠিয়েছি, তারা প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।

সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের আওতায় বরাদ্দপ্রাপ্ত যন্ত্রপাতি কোনো ব্যক্তি বা কর্মকর্তা বিক্রি, হস্তান্তর বা বন্ধক রাখতে পারেন না। এসব যন্ত্র সংশ্লিষ্ট ফল উৎপাদক দল বা কৃষক সমিতির নামে নিবন্ধিত থাকে এবং তারাই যন্ত্রের বৈধ ব্যবহারকারী হিসেবে বিবেচিত।

দক্ষিণ তিলাই ইউনিয়নের ফল উৎপাদক দলের সদস্য আমির উদ্দিন, আতাব উদ্দিন,জামাল উদ্দিন, শাহজাহান আলী,মিজানুর রহমানসহ দলের অন্য সদস্যরাও বলেন,কৃষকরা খুব কষ্টে ফসল ফলায়। আমরা কিছুদিন পর শুনি মেশিন বিক্রি হয়ে গেছে! এটা কৃষকদের সঙ্গে সরাসরি বিশ্বাসঘাতকতা।সরকার যখন তাদের যান্ত্রিক সহায়তা দিচ্ছে, তখন কোনো কর্মকর্তা যদি সেই সুযোগে বিক্রি করে দেয়, এটা ভয়াবহ অনিয়ম।আমরা অভিযোগের পর মেশিনটি ফিরে পেয়েছি।কৃষকরা বলেন উপসহকারীর আব্দুল খালেক কেনো মেশিনটি অন্য কাউকে অর্থের বিনিময়ে বিক্রি করে দিবে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত যাতে ভবিষ্যতে কেউ আর এমন শাহস না পায়।উপসহকারী আব্দুল খালেক এর বিচার না হওয়া পযন্ত আমাদের দাবী অব্যাহত থাকবে।

ভূরুঙ্গামারী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অফিসার আব্দুল জব্বার ১২ অক্টোবর রবিবার তার কাছে উপসহকারী আব্দুল খালেকের শোকজ এবং রিপার ধান কাটা মেশিন বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন এ বিষয়ে উর্ধতন কতৃপক্ষে মৌখিক ও লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন উপসহকারী আব্দুল খালেক এর যেহেতু অভিযোগ আসছে তার বিরুদ্ধে অফিসিয়ালি তদন্ত হবে যদি তার দায় থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Development by: webnewsdesign.com