ভূমধ্যসাগরে ডুবে মারা যাওয়াদের ২১ ভাগই বাংলাদেশি

বুধবার, ০৮ মে ২০২৪ | ১২:৩০ অপরাহ্ণ

ভূমধ্যসাগরে ডুবে মারা যাওয়াদের ২১ ভাগই বাংলাদেশি
apps

যে সব দেশের নাগরিকরা সবচেয়ে বেশি অভিবাসী হচ্ছে সেই বৈশ্বিক তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। চলতি বছরের প্রথম চার মাসে এই পথ দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যত মানুষ ইউরোপে ঢুকেছে, তার মধ্যে ২১ শতাংশ বাংলাদেশি। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) মহাপরিচালক অ্যামি পোপ এই তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের মানুষ জলবায়ু পরিবর্তন ও সংঘাতের কারণে অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় বেশি সংখ্যায় অভিবাসী হয়েছেন। বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিপুলসংখ্যক মানুষ অভিবাসী হচ্ছেন কি না, সেটা বোঝার জন্য তথ্য-উপাত্ত ও গবেষণার প্রয়োজন। বাংলাদেশ সফরে আসা আইওএমের এই শীর্ষ কর্মকর্তা গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে কয়েকজন সাংবাদিকের সঙ্গে আলাপের সময় এসব কথা বলেন। তিনি এর আগে ওই হোটেলে ‘আন্তর্জাতিক অভিবাসন প্রতিবেদন-২০২৪’ প্রকাশ করেন। আইওএমের চলতি বছরের বৈশ্বিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রায় ১৫ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এ নিয়ে জানতে চাইলে অ্যামি পোপ বলেন, শুধু বাংলাদেশে নয়, গত বছর বিশ্বজুড়ে জলবায়ুর প্রভাব ও সংঘাতের কারণে নতুন বাস্তুচ্যুতির সংখ্যা বেশি হয়েছে। এটা চমকে দেওয়ার মতো। তিনি বলেন, লাখ লাখ মানুষ এখন জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে বাস করেন।
অ্যামি পোপের মতে, কোন কোন উপাদান মানুষকে অভিবাসনে বাধ্য করে, তার যথাযথ চিত্র নেই। তাই সঠিক চিত্র বোঝার জন্য সরকারগুলোকে বিনিয়োগ করতে হবে।

২১% বাংলাদেশি
বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ইউরোপে অভিবাসন বাড়ছে। এ নিয়ে জানতে চাইলে অ্যামি পোপ বলেন, এসব অভিবাসীর অনেকেই মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করছেন। ভূমধ্যসাগর হয়ে ইউরোপ পাড়ির প্রবণতা ২০১৫ সাল থেকে বেড়েছে। ২০২৩ সালে ৫ হাজার অভিবাসী মারা গেছেন। তাদের মধ্যে ৫২৪ জন মারা গেছেন ভূমধ্যসাগরে, যে রুট (পথ) দিয়ে সাধারণত বাংলাদেশের মানুষেরা ইতালিতে যান। বাংলাদেশি কতজন মারা গেছেন জানতে চাইলে অ্যামি পোপ বলেন, ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশি মারা গেছেন ২৮৩ জন (ভূমধ্যসাগর হয়ে ইউরোপে যাওয়ার পথে)। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন দেশের ১৬ হাজার ২০০ নাগরিক এই পথ দিয়ে ইউরোপে পৌঁছেছেন উল্লেখ করে অ্যামি পোপ বলেন, এর মধ্যে বাংলাদেশের নাগরিক ৩ হাজার ৪২৫ জন। ২০২৩ সালে ভূমধ্যসাগর হয়ে অনিয়মিত অভিবাসনের তালিকায় চতুর্থ স্থানে ছিল বাংলাদেশের মানুষ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অপতথ্য অভিবাসনের ক্ষেত্রে কতটা চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে জানতে চাইলে অ্যামি পোপ বলেন, মানব পাচারকারীরা পরিশীলিতভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে থাকে। কারণ, তারা সারা বিশ্বের পরিস্থিতিকে বিবেচনায় রাখে। কাজেই অভিবাসী হতে আগ্রহী লোকজনের জন্য যে পর্যাপ্ত বৈধ পথ নেই, শুধু সেটিই নয়, অভিবাসনের বৈধ উপায় সম্পর্কে জানার বিষয়ে যথেষ্ট অর্থ বিনিয়োগ করা হয় না। এমনকি বৈধ পথে অভিবাসনের জন্য তাঁদের কী ধরনের দক্ষতা অর্জন করতে হবে এবং এর উপায় কী সে সম্পর্কে তথ্য তাঁরা যথাযথভাবে জানতে পারেন না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কিংবা ডিজিটাল মাধ্যমে মানব পাচারকারীদের প্রতিহত করতে হলে মানুষকে বৈধ অভিবাসনের পথ সম্পর্কে যথাযথভাবে জানাতে হবে বলে উল্লেখ করেন অ্যামি পোপ।

রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আইওএমের ভূমিকার বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যামি পোপ বলেন, এটা অনস্বীকার্য যে বাংলাদেশে জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি। মানুষের কাজের সুযোগ তৈরি বা অর্থনৈতিক প্রাপ্যতা নিয়ে সরকার চ্যালেঞ্জে রয়েছে। রোহিঙ্গাদের প্রশিক্ষণ ও কাজের সুযোগের প্রসঙ্গ টেনে অ্যামি পোপ বলেন, ‘রোহিঙ্গারা যাতে শিক্ষা ও কাজের সুযোগ পেতে পারে, সে কথা বলছি। এটা এ জন্য বলছি যে তা না হলে তাঁরা পুরোপুরি মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে।’রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা কমার প্রসঙ্গ টেনে অ্যামি পোপ বলেন, এটা উদ্বেগজনক। করোনা মহামারি, বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি ও বিশ্বের কয়েকটি স্থানে সংঘাতের অনিবার্য ফল এই সহায়তা কমে যাওয়া।

Development by: webnewsdesign.com