নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে। পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যের সরকার ডিটেনশন ক্যাম্প নির্মাণের কাজ বন্ধ বলে ঘোষণা করেছে। আর এর মাঝেই আসামের গৌহাটি মেডিক্যাল কলেজে ডিটেনশন ক্যাম্পে এক বন্দির মৃত্যু হয়েছে। এই নিয়ে আসামের ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দি মৃত্যুর সংখ্যা ২৯ জনে পৌঁছেছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, মৃত ব্যক্তির নাম নরেশ্বর কোচ (৫০)। তাকে গোয়ালপাড়া জেলখানার ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়েছে ।
আসামে ডিটেনশন ক্যাম্পে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ২৯। এর মধ্যে ২৮ জনেরই মৃত্যু হয়েছে ২০১৬ সালে বিজেপি রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, কোথাও কোনও ডিটেনশন ক্যাম্প নেই। নরেশ্বরের মৃত্যু বুঝিয়ে দিল মোদির কথা কতটা অসার।
গোয়ালপাড়া জেলার মরনৈ থানার তিনকোনিয়া পাড়ার বাসিন্দা ছিলেন নরেশ্বর। ২ বছর আগে তাঁকে ডিটেনশন ক্যাম্পে আটক করা হয়। তাঁর স্ত্রী জিমি কোচ জানিয়েছেন, তাঁরা ডি-ভোটারের বিষয়ে কিছুই জানতেন না। ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল একতরফাভাবে তাঁর স্বামীকে বিদেশি বলে ঘোষণা করে। গ্রেপ্তার করা হয় নরেশ্বরকে। অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারটির ট্রাইব্যুনালে মামলা লড়ার সঙ্গতি ছিল না। গত এক বছর ভুগছিলেন নরেশ্বর। কিছুদিন আগে পক্ষাঘাতের শিকার হন। গোয়ালপাড়া সিভিল হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল। দিন সাতেক আগে তাঁকে নিয়ে আসা হয় মেডিক্যাল কলেজে।
জিমি জানান, তাঁরা ১৯৬৪ সালে পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসামে এসেছিলেন। সেই কাগজপত্রও আছে। কিন্তু ট্রাইব্যুনালে সেসব দেখাবার সুযোগটুকুও পাননি তাঁরা। নরেশ্বরের মৃত্যুর ঘটনার নিন্দা করেছেন আসাম রাজ্য নাগরিক অধিকার সমন্বয় সমিতির চেয়ারম্যান তপোধীর ভট্টাচার্য।
তিনি বলেন, নরেশ্বরের মৃত্যু নতুন কোনও ঘটনা নয়। আসামে অনসমিয়ারা তো মরেই আছি। বিভিন্ন উপায়ে আমাদের উইপোকার মতো মেরে ফেলার চক্রান্ত চলছে।
আসামে বর্তমানে ৬টি ডিটেনশন ক্যাম্প রয়েছে। এগুলো জেলা সংশোধনাগারের সঙ্গে যুক্ত। প্রত্যেকটিতেই প্রায় হাজার জন করে থাকতে পারেন। গোয়ালপাড়ায় সপ্তম ডিটেনশন ক্যাম্পটি নির্মিয়মান অবস্থায় রয়েছে।
আসাম সরকারের দাবি অনুসারে, ফরেন ট্রাইবুন্যালে যে ২৪ জনকে বেআইনি অনুপ্রবেশকারী হিসাবে গণ্য করা হয়েছে গত তিন বছরে তাদেরই মৃত্যু হয়েছে।
গত জুলাইতে আসামের পরিষদীয় মন্ত্রী চন্দ্রমোহন পাটোয়ারী বিধানসভায় বলেছিলেন, রাজ্যের ৬টি ডিটেনশন ক্যাম্পে ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২০১৮-১৯ সালের জুলাই পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ৭ জন। ২০১১ ও ২০১৬ সালে মৃত্যুর সংখ্যা যথাক্রমে ছিল ১ এবং ৪। অসুস্থতার কারণেই এই মৃত্যু বলে সরকারি তথ্যে প্রকাশ।
বিধানসভার রিপোর্ট অনুসারে মৃতদের মধ্যে মাত্র ২ জনের ঠিকানা বাংলাদেশের। বাকিদের বাড়ির ঠিকানা আসামেরই।
আসাম রাজ্য বিধানসভায় মন্ত্রী চন্দ্রমোহন পাটোয়ারী বলেছিলেন, ক্যাম্পে আটক অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে সেখানেই মৃত্যু হয় তাদের। কোনো লাশই বাংলাদেশে পাঠান হয়নি।
Development by: webnewsdesign.com