রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা জুড়ে তীব্র শীত উপেক্ষা করে পুরোদমে চলছে বোরো ধান লাগানোর কাজ। গত ১৫ জানুয়ারীর হতে বরেন্দ্র অঞ্চলের ধান রোপন শুরু হয়েছে। মাঝে মধ্যে ঘনকুয়াশা ও প্রচন্ড ঠান্ডার জন্য বোরো ধান লাগানোর কাজে কিছুটা বিঘœ হলেও কৃষকরা বসে থাকেনি বেশী দিন।
বীজ তলায় কোল্ড ইনজুরির কারণে কিছুটা সমস্যা দেখা দিলেও সেই সব সমস্যা কাটিয়ে বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকরা বোরো ধান লাগানো কাজে ব্যন্ত সময় পার করছে । গোদাগাড়ী উপজেলার গোটা বরেন্দ্রর মাঠ জুড়ে যেদিকে তাকানো যায় সেদিকেই চোখে মিলবে কৃষক-কৃষাণীরা ধান লাগার দৃশ্য।
চারা ও ধানের দাম ভালো পাওয়ার পাশাপাশি অনুকুল আবহাওয়া এ অঞ্চলের চাষিরা বোরো আবাদের দিকে বেশি ঝুঁকছেন। ফলে প্রতিবারই বাড়ছে ইরি বোরো ধান লাগানোর পরিমাণ।
বোরো চাষি ও কৃষিবিদদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে রাজশাহীর গোদাগাড়ীর চাষিরা কয়েক বছর যাবত সেচ কম লাগে এ ধরনের আবাদের দিকে ঝুঁকছেন। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকেও চাষিদের এ ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়েছে।
গোদাগাড়ী উপজেলার কৃষক, সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল মামুন আবুল জানান, এবার ৮ বিঘা জমিতে ধান লাগানো হয়েছে । আর ৩ বিঘা জমিতে সরিষা উঠানো হয়েছে, এ সরিষার ফলন ভালই হবে আশা করচ্ছি। বাকী ৩ তিন বিঘা জমিতে বোরো ধান লাগাবো ইনশাল্লাহ।
গোদাগাড়ী পৌর এলাকার কৃষক আব্দুল মাতিন বলেন, এবার প্রায় ৭ বিঘা জমিতে বোরো ধান লাগানোর কাজ চলছে। আশা করা যায় আর এক সপ্তাহের মধ্যেই সকল ধান লাগানো সম্পন্ন হবে। গতবারের মত এবারও ধানের ফলন ও দাম পেলে কৃষকদের জন্য ভালো হবে বলে জানান।
চলতি মৌসুমে ৮৯ হাজার ১০০ টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে বোরো ধানের চারা রোপণ চলছে জোরেসোরে। ঘন কুয়াশা আর কনকনে শীতকে উপেক্ষা করে বোরো ধানের ক্ষেত প্রস্তুত ও চারা রোপন করছেন শ্রমিকরা।
বিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে ও এবার শ্রমিকদের পারিশ্রমিক বেশি, সেই সঙ্গে সার ও জ্বালানির মূল্য বাড়ায় গত বছরের তুলনাই এবার বোরো চাষাবাদে উৎপাদন খরচ বেশি পড়বে। তারপরও এ অঞ্চলের কৃষকেরা বোরো চাষ করছে। এখন কৃষি উপকরণের সহজলভ্যতা প্রাপ্তি নিশ্চিত হলে এবং চাষাবাদের পরিবেশ ও আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে এবারও বোরোতে বাম্পার ফলন হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন কৃষকরা।
গোদাগাড়ী কৃষি বিভাগ জানিয়েছেন, প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১৫ হাজার ৩০০ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক বিনামূল্যে উফশী ও হাইব্রিড জাতের বোরো বীজসহ রাসায়নিক সার পেয়েছেন। যার মধ্যে হাইব্রিড ১০ হাজার ২০০ জন শুধু ২ কেজি করে হাইব্রিড বীজ ও ৫ হাজার ১০০ জনকে ৫ কেজি করে উফশী বীজ, ডিএপি ১০ কেজি, এমওপি ১০ কেজি করে রাসায়নীক সার দেওয়া হয়েছে।
গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১৪ হাজার ৮শ” ৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত মৌসুমে এ উপজেলায় বোরো আবাদ হয়েছিল ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে। তবে চলতি মৌসুমে বোরো ধানের আবাদ লক্ষ্য মাত্রা ছাড়িয়ে গত মৌসুমের সমান চাষবাদ হতে পারে বলেন জানান কৃষি অফিস।
ভাজনপুর গ্রামের কৃষক শ্রী দুলুদেব বলেন, এবার ৮ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করছি। তার মধ্যে ৬ বিঘা জমিতে ধান লাগানো হয়ে গেছে। বাকী ২ বিঘা জমি ধান লাগানোর জন্য তৈরী করছি। ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে এ জমিতেও ধান লাগা হয়ে যাবে। তিনি আরো বলেন, ৫ বিঘা জমিতে সরিষা ছিলো। সরিষা তুলার পর ওই জমিতে ধান লাগাচ্ছি।
রাজাবাড়ী এলাকার কৃষক মো. শাখওয়াত হোসেন জানান, জমিতে বোরোর আবাদ করার জন্য পানি ছেড়েছি। ধান লাগানোর জন্য হ্যারো দিয়ে জমি তৈরীর কাজ করছি। ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে জমিতে ধানের চারা লাগানোর কাজ শুরু হবে। হাইব্রিড জাতের ধান বেশি করেছেন। শ্রমিকের পারিশ্রমিক বেশি, সেচ, সার ও কীটনাশকের দাম বেশি। অন্য বছরের তুলনায় এবার বোরো ধানের উৎপাদন খরচ বেশী হবে।
হ্যারো চালক নয়ন বলেন, এখন আমাদের সিজিন। দম ফেলার সময় নাই। পুরো দমে কৃষকের জমি চাষ করছি। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জমিতে হ্যারো দিয়ে হাল দিচ্ছি। প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ বিঘা জমি হ্যারো দিয়ে চাষ করি। বিঘা প্রতি ৩৫০ টাকা করে নিচ্ছি। গত বছর ৩০০ টাকা বিঘা চাষ করেছি। এবার তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ৩৫০ টাকা করে নিচ্ছি।
মহিশালবাড়ী এলাকার বর্গাচাষীরা আলাউদ্দিন বলেন, ইতোমধ্যে অনেক কৃষক বোরোর চারা রোপন শেষ করেছেন। আগামী সপ্তাহ খানেকের মধ্যে বোরোর চারা রোপন সম্পন্ন হবে। তবে এবার শ্রমিকের পারিশ্রমিক, সেচ ও রোপন খরচ বেশি হয়েছে।
গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মরিয়ম আহমেদ বলেন, চলতি মৌসুমে ১৪ হাজার ৮শ” ৫০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ মাত্র ধরা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৩ হাজার ৪ শ” ২০ হেক্টর বোরোর চারা রোপণ শেষ হয়েছে।
কৃষকরা সরিষা ফসল তোলার পর সেখানে বোরো চাষাবাদ করছেন। ফলে বোরোর চারা রোপণে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। তবে পুরোদমে বোরোর চাষাবাদ চলছে। পতিত জমিগুলোকে চাষাবাদের আওতায় আনতে কৃষকদের উৎসাহ দেওয়াসহ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন ও কৃষি বিভাগ থেকে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। আবহাওয়া ও পরিবেশ অনূকুলে থাকলে এবারও বোরোতে বাম্পার ফলন হবে আশা করছেন কৃষকরা।
Development by: webnewsdesign.com