বিচার করতে গিয়ে মামলার আসামী হলেন ইউপি চেয়ারম্যান বাচ্চু

শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | ৮:২০ অপরাহ্ণ

বিচার করতে গিয়ে মামলার আসামী হলেন ইউপি চেয়ারম্যান বাচ্চু
apps

ছোট বাচ্চাদের ঝগড়াকে কেন্দ্র করে ভাসুরের পুত্র পান্ত দে’র এলোপাতাড়ি লাথিতে গুরতর আহত হন তারই কাকী বাবলী রানী দে। এতে বাবলী রানী দে’র অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়ায় ১৪ দিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। সঠিক বিচার করেছিলেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান। তারপরও চেয়ারম্যানকে মামলায় প্রধান আসামী করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার হাজিপুর ইউনিয়নে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৩১ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বিকেলে কুলাউড়ার হাজিপুর ইউনিয়নের রনচাপ গ্রামে ছোট্ট বাচ্চাদের ঝগড়াকে কেন্দ্র করে পান্ত দে (১৮) হাতে হামলার শিকার হন তাঁর চাচা (কাকা) প্রবাসী প্রজয় দেব’র স্ত্রী বাবলী রানী দে (৩২)। মারামারি এক পর্যায়ে পান্ত তার কাকীর তলপেঠে এলোপাতাড়ি লাথি মারলে তাঁর প্রচুর পরিমাণে রক্তক্ষরণ হয়। তখন বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অবগত করে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে ৬দিন চিকিৎসা নেন।

 

 

 

 

 

তারপর মৌলভীবাজারের প্রাইভেট পলি ক্লিনিক ও সেবা ক্লিনিকে ৩দিন চিকিৎসা শেষে রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়াতে ২০ জানুয়ারি সিলেটের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডাঃ নমিতা রানী সিনহার অধীনে চিকিৎসা নেন। এরপর সিলেট রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৮ জানুয়ারি থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত ভর্তি থেকে তাঁর অপারেশন করা হয়। মৌলভীবাজার ও সিলেটে চিকিৎসা করে অপারেশন করলে তাঁর রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়।

চিকিৎসা শেষে ৫ ফেব্রুয়ারি উভয়পক্ষকে নিয়ে বাড়িতে বসে সালিশী বৈঠক। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, বর্তমান চেয়ারম্যান সাংবাদিক আব্দুল বাছিত বাচ্চু, সাবেক চেয়ারম্যান মাহমুদ আলী, স্থানীয় ইউপি সদস্য শেখ আব্দুর রউফ, সাবেক সদস্য সওয়াব আলী, মো. মইনুদ্দীন, মহিলা সদস্য আছমা বেগমসহ হিন্দু ধর্মাবলম্বীর ব্যক্তিবর্গসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।

বৈঠকে বিভিন্নজন ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দেবার প্রস্তাব তুলেন। কিন্তুু ইউপি চেয়ারম্যান বিচার বিশ্লেষণ করে সর্বসম্মতিক্রমে ২৫ হাজার টাকা দেওয়ার রায় দেন এবং ভবিষ্যতে এমন কর্মকান্ড না করার জন্য পান্ত দে’র কাছে অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর নেন। কিন্তুু জরিমানার টাকা না দেয়ার অজুহাতে এলাকার প্রভাবশালী মহলের যোগসাজশে পান্ত’র মা অর্পিতা দে বৃহস্পতিবার বাদী হয়ে চেয়ারম্যান আব্দুল বাছিত বাচ্চুকে প্রধান আসামী ও বাবলীর স্বামী প্রজয় দেব কে আসামী করে মামলা দায়ের করেন।

 

 

 

 

এদিকে বাবলী রানী দে গণমাধ্যমকে দেয়া তাঁর বক্তব্যে বলেন, আমার ভাসুরের ছেলের মারধরে আমি গুরুতর আহত হলে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। এখনো আমি পুরোপুরি সুস্থ নয়। মৌলভীবাজারে চিকিৎসার সময় চেয়ারম্যান সাহেব প্রতিদিন আমার খোঁজখবর নিয়েছেন। আমার চিকিৎসায় অনেক টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তুু চেয়ারম্যান সবার সম্মতিতে মাত্র ২৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদানের রায় দেন। তারপরও আমরা মেনে নিয়েছি। চেয়ারম্যানের বিচারে আমরা শতভাগ সন্তুষ্ট হয়েছি। এদিকে স্থানীয় একটি মহলের চাপে উল্টো চেয়ারম্যান ও আমার স্বামীকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে আসামী করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান সাংবাদিক আব্দুল বাছিত বাচ্চু বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে নিরপেক্ষ থেকে বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি। এরই ধারাবাহিকতায় রনচাপ গ্রামের বখাটে হিসেবে চিহ্নিত পান্ত দে নামে এক ছেলে তার আপন কাকীর তলপেঠে কয়েকটা লাথি মেরে তাকে গুরুতর আহত করে। এলাকাবাসীর অনুরোধে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে নিয়ে সালিশী বৈঠকে পান্ত ও তার মা অর্পিতার অঙ্গীকারনামা নিয়ে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। আগামী ২০২১ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে আমার উজ্জ্বল ভাবমুর্তি নষ্ট করতে প্রতিপক্ষের প্ররোচনায় এবং জরিমানা মাফ পেতে এই মামলা দায়ের হতে পারে।

এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুর রহিম বলেন, মামলা রেকর্ডের পর তদন্তের জন্য আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ঘটনাটি আমি সরেজমিন তদন্ত করবো।

জানতে চাইলে কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ইয়ারদৌস হাসান বলেন, ওই ঘটনার পর দু’পক্ষের উপস্থিতিতে বিচারের সময় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল বাছিত বাচ্চু পান্ত দে’কে মাথায় আঘাত করায় সে আহত হয়। অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে মামলা রেকর্ড করা হয়েছে।

মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার ফারুক আহমদ পিপিএম (বার) মোবাইলে বলেন, সালিশী বৈঠকের বিষয়টি জেনেছি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে গ্রাম আদালতে শুনানী ও মামলা নিষ্পত্তিতে চেয়ারম্যান আব্দুল বাছিত বাচ্চু’র নেতৃত্বে মৌলভীবাজার জেলার মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করে হাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদ। এছাড়া বিগত ৩০ বছর যাবৎ সিলেট এবং ঢাকার শীর্ষ জাতীয় দৈনিকে কর্মরত ছিলেন। এরআগে প্রেসক্লাব কুলাউড়ার প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও তিনবারের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

Development by: webnewsdesign.com