বাগেরহাটে মাদরাসা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে সনদ জালিয়াতির অভিযোগ

মঙ্গলবার, ৩০ নভেম্বর ২০২১ | ২:৫৫ অপরাহ্ণ

বাগেরহাটে মাদরাসা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে সনদ জালিয়াতির অভিযোগ
apps

জাল সনদ ও তথ্য গোপনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে চাকুরী করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে এক মাদ্রাসার অধ্যক্ষ বিরুদ্ধে। স্থাানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্তে জাল সনদের বিষয়ে সত্যতা পাওয়ার পরেও বহাল তবিয়াতে রয়েছেন তিনি।

বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলার সোনাখালী পিকে মোহসিনিয়া সিনিয়র আলীম মাদরাসার অধ্যক্ষ মোঃ সিহাব উদ্দীন এর অসাদু উপায় অবলম্বনের বিচার ও তার অপসারণের দাবিতে কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের সচিব বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন অত্র প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাাপনা কমিটির সাবেক সভাপতি মোঃ তৈয়াবুর রহমান সেলিম।

এমনকি বাগেরহাট সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্রাজিষ্ট্রেট আদালতে নিয়মিত মামলাও হয়েছে এই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে।

অনুসন্ধ্যান ও মামলার নথি সূত্রে জানাযায়, ১৯৮৫ সালের হাদিস বিভাগে কামিল পাশের সনদ দাখিল করে ১৯৮৯ সালে মোরেলগঞ্জ উপজেলার খারইখালী আহম্মাদীয়া দাখিল মাদরাসায় সুপার পদে চাকুরী নেন অধ্যক্ষ মোঃ সিহাব উদ্দীন। একই পদে ওই প্রতিষ্ঠানে ১২ বছর কর্মরত ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে স্থাানীয়রা জানতে পারেন অধ্যক্ষ মোঃ সিহাব উদ্দীনের জমা দেওয়া কামিল পাসের সনদটি জাল।

স্থাানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে ২০০৩ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ-পরিদর্শক মোঃ আবুল কাশেম ও অডিট অফিসার চৌধুরী নাসিরুজ্জামান জাল সনদের বিষয়ে তদন্ত করেন। তদন্ত প্রতিবেদনে অধ্যক্ষ মোঃ সিহাব উদ্দীনের ১৯৮৫ সালের কামিল পাশের সনদটি ভুয়া বলে উল্লেখ করা হয়। ভুয়া সনদ দিয়ে গ্রহন করা চাকুরীর বেতন হিসেবে গ্রহীত সকল অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার সুপারিশও করা হয় তদন্ত ওই প্রতিবেদনে। এরপরে কোন ব্যবস্থাা গৃহিত হয়নি, কারণ তৎকালীন কমিটিতে অধ্যক্ষ শিহাব উদ্দিনের একাধিক আত্মীয় ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।

পরবর্তীতে ২০১০ সালের ২৭ নভেম্বর শিক্ষা পরিদর্শক মোঃ মুজিবুর রহমানের করা আরও একটি তদন্ত প্রতিবেদনে আবারও অধ্যক্ষ মোঃ সিহাব উদ্দীনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হয়।

অন্যদিকে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশে ২০১৮ সালের ১লা এপ্রিল মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ কামরুজ্জামান অধ্যক্ষ মোঃ সিহাব উদ্দীনের বিরুদ্ধে তদন্ত করেন। ওই তদন্তেও অধ্যক্ষ মোঃ সিহাব উদ্দীনের বিরুদ্ধে সনদ জালিয়াতির প্রমান পাওয়া যায়।

এসব অভিযোগ, তদন্ত কমিটি, তদন্ত, চাকুরিচ্যুতির সুপারিশ ও স্থাানীয়দের আপত্তির পরও স্বপদে বহাল রয়েছেন অধ্যক্ষ মোঃ সিহাব উদ্দীন। এসব নিয়ে মাদরাসার অভিভাবক ও স্থাানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। সনদ জালিয়াতি করে চাকুরী গ্রহনকারী এই অধ্যক্ষের বিচারের দাবিতে সর্বশেষ এবছরের ৭ জুন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ নজরুল ইসলাম শিকদার নামের এক ব্যক্তি বাগেরহাট জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বর্তমানে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে তদন্তাধীন রয়েছে।

মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী সুরাইয়া সিদ্দিকা বলেন, পিকে মোহসিনিয়া সিনিয়র আলীম মাদরাসার অধ্যক্ষ মোঃ সিহাব উদ্দীনের বিরুদ্ধে সনদ জালিয়াতি ও চাকুরী প্রদানের কথা বলে টাকা আত্মসাতের অভিযোগটি আদালত আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন।

সোনাখালী পিকে মোহসিনিয়া সিনিয়র আলীম মাদরাসা ব্যবস্থাাপনা কমিটির সাবেক সভাপতি মোঃ তৈয়াবুর রহমান সেলিম বলেন, অধ্যক্ষ মোঃ সিহাব উদ্দীনের জাল জালিয়াতিতে আমরা অতিষ্ট। জালিয়াতির জন্য ২০১৫ সালে অধ্যক্ষ মোঃ সিহাব উদ্দীনকে মাদরাসা থেকে বরখাস্ত করা হয়। পরবর্তীতে বিভিন্নভাবে আবারও চাকুরীতে বহাল এই অধ্যক্ষ।

অভিযুক্ত অধ্যক্ষ মোঃ সিহাব উদ্দীন বলেন, আমি কোন অন্যায় করিনি। আমি ১৯৮৫ সালের কামিল পাসের সনদ নিয়ে চাকুরী করি নেই। এরপরেও মাদরাসা ব্যবস্থাাপনা কমিটির সাবেক সভাপতি মোঃ তৈয়াবুর রহমান সেলিমসহ তার আত্মীয় স্বজন অন্যায়ভাবে আমাকে বহিস্কার করেছিল। আদালতের মামলা খারিজ হওয়ার পরও আমাকে যোগদান করতে দেয়নি তারা। মূলত নিয়োগ বানিজ্য করার জন্য তারা আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়েছে।

বাগেরহাট জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, পিকে মোহসিনিয়া সিনিয়র আলীম মাদরাসার অধ্যক্ষ মোঃ সিহাব উদ্দীনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা রয়েছে। মামলায় যে আদেশ হবে, সেই অনুয়ায়ী আমরা ব্যবস্থাা গ্রহন করব।

Development by: webnewsdesign.com