বাগমারায় জমি নিয়ে বিরোধে কৃষককে পিটিয়ে হত্যা

শুক্রবার, ২৩ এপ্রিল ২০২১ | ৩:০১ অপরাহ্ণ

বাগমারায় জমি নিয়ে বিরোধে কৃষককে পিটিয়ে হত্যা
apps

রাজশাহীর বাগমারায় জমিজমা নিয়ে বিরোধের জেরে হাবিল কাজী (৪২) নামে এক কৃষককে পিটিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষরা। তাকে উদ্ধারে গিয়ে আরও পাঁচজন আহত হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার গনিপুর ইউনিয়নের মাধাইমুড়ি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় ৫ জনকে বাগমারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সহ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আহতরা হলেন, নিহতের পিতা আজিমুদ্দীন কাজী (৬৫), চাচা আব্দুর রাজ্জাক (৫০), ছেলে সৈকত (১৬), প্রতিবেশী আব্দুস সাত্তারের ছেলে জুয়েল রানা (২৫), মুনছুর রহমান (৪৬) । এছাড়াও নিহতের ছোট ভাই হাফিজুর রহমানসহ বেশ কয়েকজনকে বাড়িতেই প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাদ দিয়ে ওসি জানান, সন্ধ্যায় হাবিল কাজী বাড়ির বাহির বের হলে তার উপর হামলা চালানো হয়। এ সময় পিটিয়ে গুরুতর জখম করে হলে তাকে উদ্ধারে অন্যরা এগিয়ে আসলে তাদেরকেও পিটিয়ে জখম করা হয়। পরে তাদের উদ্ধার করে বাগমারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পথে মারা যায় হাবিল কাজী। বাকিদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রাজশাহী সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন দেব। তিনি বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়। তবে পুলিশ পৌঁছার আগে এ হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িতরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। তাদের ধরতে অভিযান চলছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্ত

জানা গেছে, নিহতের পিতা আজিমুদ্দীন কাজী ১৯৭৩-৭৪ সালে একই গ্রামের মৃত আসতুল্লাহর কাছ থেকে জমি ক্রয় করে ভোগদখল করে আসছিল। অন্যদিকে তার বোন ছবেজানের নিকট থেকে ১৯৮৩ সালে আবারও জমি ক্রয় করেন আজিমুদ্দীন কাজী। সেই জমির অংশীদার দাবী করে তা ফিরে পেতে আদালতের দ্বারস্থ হন আসতুল্লাহ। পরবর্তীতে ১৯৯৫ সালে আদালত আজিমুদ্দীন কাজীর নামে রায় দেয় ।

এর মধ্যে আসতুল্লাহ মৃত্যুবরণ করলে ২০১৯ সাল থেকে ছেলেরা এবং তারই ভাই সেফাতুল্লাহসহ তার ছেলে একটি ভূয়া দলিল করে জমিটি নিজেদের বলে দাবী করে। বিষয়টি নিয়ে থানা পুলিশ সহ স্থানীয় চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়নের বিভিন্ন গন্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে সমঝোতা বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। এরই মাঝে তারা বিভিন্ন সময় আজিমুদ্দীনসহ তার পরিবারের কারো না কারো লাশ ফেলবে বলে হুমকি দিয়ে আসছিল।

স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার (২২এপ্রিল) নিহত হাবিল কাজী এবং তার একমাত্র ছেলে সৈকত বিকেলে পান বরজ থেকে বাড়ি ফিরছিলেন এমন সময় তাদের পথ আটকিয়ে দেয় প্রতিপক্ষ মৃত আসতুল্লাহর ছেলেসহ সেফাতুল্লাহ ও তার ছেলে এবং তাদের পরিবারের নারী সদস্যরা। বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে বিষয়টি তখন থেমে যায়। পরে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে হাবিল কাজী সন্ধ্যার পর যখন বাড়ি থেকে বের হয় আগে থেকে ওঁৎপেতে থাকা অবস্থায় লাঠিসোটা, লোহার রড, হাসুয়া, কোদালসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সেফাতুল্লাহ এর নেতৃত্বে হামলা চালায় তার উপরে। সেই সময় তাকে একা পেয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে হামলাকারীরা । পরে বাগমারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পথে হাবিল মারা যায় বলে জানা গেছে।

এসময় হাবিলের উপর হামলার খবর পেয়ে হাবিলের পরিবারের লোকজন ঘটনাস্থলে আসলে তাদের উপরেও হামলা করে তারা। এতে অন্তত দশজন আহত হয় বলে জানা যায়। তাদের মধ্যে পাঁচ জনকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে মেডিকেলে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই বাদী হয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে বাগমারা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, নিহতের ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। মামলা হলেই আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।

Development by: webnewsdesign.com