বাউফলে ডায়রিয়া মহামারি আকারে দেখা দিয়েছে। ডায়রিয়া চিকিৎসার অত্যাবশ্যকীয় কলেরা স্যালাইনের জন্য হাহাকার পড়ে গেছে। গত এক সপ্তাহে ডায়রিয়ায় ৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। অবশ্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজনের মৃত্যুর তথ্য রয়েছে।
জানা গেছে, উপজেলার সর্বত্রই ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ছাড়াও গ্রামগঞ্জের পল্লী চিকিৎসক এবং ফার্মেসীওয়লারা ডায়রিয়ার চিকিৎসা দিতে হিমসিম খাচ্ছে। ডায়রিয়া চিকিৎসার প্রধান ওষুধ কলেরা স্যালাইন এখন সোনার হরিণ হয়ে গেছে। কোন কোন এলাকায় ৭০ টাকার স্যালাইন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নারী, শিশু এবং বৃদ্ধরা ডায়রিয়ার বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ি গত তিন দিনে বাউফলের কেশবপুর ইউনিয়নের ভরিপাশা গ্রামের মাসুম মিয়ার স্ত্রী খাদিজা বেগম(২৭), মমিনপুর গ্রামের বেল্লাল হাওলাদারের স্ত্রী মোসা. মাকসুদা বেগম(২৫), শাহিন হাওলাদারের পাঁচ বছরের মেয়ে কুলসুম আক্তার এবং বাউফল পৌর সভার ৪ নং ওয়ার্ডের সাবেক শিক্ষা কর্মকর্তা মাহতাব উদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা আক্তার(৬০) ডায়রিয়ায় মৃত্যুবরণ করেছেন।
ডায়রিয়ায় আক্রান্ত মমিনপুর গ্রামের নাসির উদ্দিন জানান, তার পরিবারের সদস্যরা প্রতিটি স্যালাইন ৫০০ টাকা করে কিনে এনে তার শরীরে পুশ করেছেন। মমিনপুর এলাকার সমাজকর্মী মজিবুর রহমান জানান, স্থানীয়ভাবে স্যালাইন সংকটের কারণে অনেকেই পার্শ্ববর্তী বাখেরগঞ্জ, বরিশাল, দশমিনাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে স্যালাইন কিনে এনে ডায়রিয়ার চিকিৎসা নিচ্ছেন। এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে স্থান সংকুলন না হওয়ায় ফ্লোরেই বিছানা করে রোগিদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা.এস.এম. সায়েম জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডায়রিয়া রোগিদের জন্য মাত্র ১০টি বেড রয়েছে। কিন্তু এই মূহুর্তে ভর্তি রয়েছে ৮০ জন রোগি। তিনি আরো জনানা, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কলেরা স্যালাইনের সংকট নেই। স্থানীয় এমপি আ.স.ম. ফিরোজের প্রচেষ্টায় ১০ হাজার স্যালাইন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে আজ বুধবার পাওয়া গেছে।
তবে বেশির ভাগ রোগিই করোনার ভয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে না এসে বাজার থেকে স্যালাইন কিনে বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। রোগিরা বাড়িতে চিকিৎসা নিয়ে ভাল না হয়ে মূমূর্ষ অবস্থায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসছেন। ফার্মেসীর মালিকরা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে স্যালাইনের দাম বৃদ্ধি করেছেন বলেও তিনি মনে করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ফার্মেসীর মালিক জানান, স্যালাইনের সরবরাহ অনেক কম। আমাদের ২৩০ থেকে ২৫০ টাকায় স্যালাইন ক্রয় করতে হচ্ছে। যার কারণে বেশি দামে স্যালাইন বিক্রি করতে হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কর্মকর্তা ডা. প্রশান্ত কুমার সাহা জানান, কেশবপুর ইউনিয়নের খাদিজা বেগমের চিকিৎসা শুরুর আগেই সে মারা গেছেন। এছাড়া অন্যত্র কেউ ডায়রিয়ায় মারা গেছেন কিনা সে খবর আমাদের জানা নেই। অতিরিক্ত তাপদহে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে গেছে বলে তিনি মনে করেন। কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বেশি দামে স্যালাইন বিক্রি করার অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।
দৈনিক বাংলাদেশ মিডিয়া/এসআরসি-২১
Development by: webnewsdesign.com