বগুড়া তথা উত্তরাঞ্চলের আলু চাষের আতুড়ঘর হিসেবে খ্যাত বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলা। হঠাৎ করেই এবার আলুর ভরা মৌসুমে উপজেলায় আলুচাষে ‘উইল্ড’ রোগ (কচি পাতা হঠাৎ করে নেতিয়ে পড়ে গাছ মারা যাওয়া) দেখা দিয়েছে।
এতে দিশেহারা পড়েছে আলুচাষীরা।কেউ বলছে নিন্ম মানের বীজের কারণে, কেউ বলছে নিন্ম মানের সারের কারণে, কেউ আবার বলছে মাটি চাষে সমস্যা’র কারণে এ রোগ দেখা দিয়েছে। এ রোগ সম্পর্কে এ অঞ্চলের কৃষকেরা অনেকটাই অজানা। কারণ হিসেবে তারা বলছে, এর আগে কখনো এমন রোগ তারা দেখেনি। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বারোটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা মিলে আঠারো হাজার চার’শ হেক্টর জমিতে এবার আলুর চাষের লক্ষমাত্রা থাকলেও চাষ হয়েছে উনিশ হাজার চারশত হেক্টর জমিতে। ইতোমধ্যে ছয়শত বিশ হেক্টর জমির আলু উত্তোলন করা হয়েছে। এতে গড় ফলন হয়েছে ষোল মেট্রিকটন। গত বছর আলু উৎপাদন ও বিক্রি করে লাভ বেশি হওয়ায় এ অঞ্চলের চাষিরা এ বছর অধিক জমিতে আলুর চাষ করেছে। কিন্তু ‘উইল্ড’ রোগ দেখা দেওয়ায় তাঁরা পড়েছে চরম বিপাকে।
কথা হয় শিবগঞ্জ সদর ইউনিয়নের সাদুল্যাপুর গ্রামের আলুচাষি চাষি আহম্মেদ আলী সাথে। তিনি বলেন, ‘আমি ৪বিঘা জমিতে স্টিক জাতের আলুর চাষ করেছি। এই ৪বিঘা জমির মাঝে মাঝে আলুরগাছ নেতিয়ে পড়ে মারা যাচ্ছে। এমন রোগ এর আগে কখনো দেখিনি। যত দিন যাচ্ছে এ রোগের প্রকোপ ততোই বাড়ছে। এখন পর্যন্ত প্রায় শত বিঘা জমিতে এ রোগ দেখা দিয়েছে। এতে আমরা দিশেহারা হয়ে পরেছি।
একই গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর বলেন, ‘৩০’ দিন আগে আলু লাগাইছি। আলুর গাছগুলো দেখে মনে হচ্ছিলো ফলন ভালো হবে। কিন্তু আলুরগাছ মাঝে মাঝে নেতিয়ে পরেছে। ঔষধ দিয়াও কাম হচ্ছেনা। আলুর বীজে কোন সমস্যা হইছে কিনা বললে তিনি জানান, আমি তা মনে করিনা, বিএডিসি’র পটাশের সমস্যার কারণে এমনটি হতে পারে।
গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, সামপুর গ্রামের আলুচাষি আরিফুল ইসলাম জমিতে ছত্রাকনাশক ওষুধ স্পে করছে। ঠিক কি কারণে আলুরগাছ মারা যাচ্ছে তা সে জানানে। সে দৈনিক জয়যুগান্তরকে বলেন, আলুগাছ মরে যাচ্ছে, তাই জমিতে ঔষধ দিচ্ছি, এতে লাভ হবে কিনা জানিনা। এমনিতেই এবার আলুর দামকম, তার উপর আবার আলুতে আজানা রোগ, কি হবে আমাদের ভাগ্যে বুঝতে পারছিনা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান বলেন, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ব্যাকটেরিয়াল উইল্ড একটি মাটিবাহিত রোগ। এ রোগের জীবাণু শিকড়ের ক্ষতস্থান দিয়ে গাছে প্রবেশ করে এবং পানি-পরিবহন নালীর মধ্যে বংশ বিস্তার করে নালী পথ বন্ধ করে দেয়। ফলে পাতা ও গাছ সবুজ অবস্থায় নেতিয়ে বা ঢলে পড়ে। এভাবে কয়েক দিনের মধ্যে সবুজ অবস্থাতেই গাছটি মরে যায়। এ রোগাক্রান্ত গাছ দেখা মাত্র তুলে ধ্বংস করতে হবে। আলুচাষিদের এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
Development by: webnewsdesign.com