বরগুনা সদরের পশ্চিম গোলবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নাসির হাওলাদারকে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন তার স্ত্রী ফাতেমা মিতু (২৪) এবং মিতুর পরকীয়া প্রেমিক রাজু মিয়া (২০)। গত বৃহস্পতিবার রাতে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক ইয়াসিন আরাফাতের আদালতে জবানবন্দি দেন তারা।
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সরজিৎ কুমার জানান, তাদের গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বামীকে হত্যার কথা স্বীকার করেন স্ত্রী মিতু ও রাজু। পরে গত বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে তিনটার পরে তাদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর তারা হত্যার দায় স্বীকার করে রাত ৯টার দিকে জবানবন্দি দেন আদালতে। জবানবন্দি শেষে তাদেরকে জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। এ ঘটনায় আর কেউ জড়িত আছে কিনা সে বিষয়েও পুলিশ তদন্ত করছে।
পরকীয়া প্রেমিকের হারানো মোবাইল ফোনের কল রেকর্ডের কারণেই স্বামী হত্যার ঘটনায় ফেঁসে যান স্ত্রী ফাতেমা আক্তার মিতু। শিক্ষক স্বামীকে হত্যার ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন স্ত্রী ও তার পরকীয়া প্রেমিক। ইতিমধ্যে স্বামীর পেনশনের টাকার আবেদনও করেছেন স্ত্রী।
তবে একটি কল রেকর্ডই তার কাল হয়ে দাঁড়ায়। ধরা পড়েন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। এতেই বেরিয়ে আসে বরগুনার আলোচিত শিক্ষক নাসির উদ্দিন হত্যার চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য। এ ঘটনার ৯ মাস পর মিতুর পরকীয়া প্রেমিক রাজুর হারিয়ে যাওয়া মোবাইল ফোনে নাসিরকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার কথোপকথনের রেকর্ডিং পান নাসিরের স্বজনরা। পরে থানায় অভিযোগ করলে নাসিরের স্ত্রী ফাতেমা আক্তার মিতু (২৪) এবং মিতুর পরকীয়া প্রেমিক রাজু মিয়াকে (২০) গত বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
বরগুনার গোলবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন নাসির উদ্দিন। তিনি সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের মো. গয়েজ উদ্দিনের ছেলে। গ্রেপ্তারকৃত মিতু বরগুনা পৌরসভার থানাপাড়া এলাকার মো. মাহতাব হোসেনের মেয়ে এবং রাজু মিয়া ঢলুয়া ইউনিয়নের গোলবুনিয়া এলাকার বারেক মিয়ার ছেলে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, গত বছর ঈদের আগের দিন ২৩শে মে রাতে স্বামীকে খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে অজ্ঞান করে স্ত্রী ফাতেমা আক্তার মিতু। রাত ১১টার পর রাজুকে ফোন করে তার বাসায় আসতে বলে মিতু। রাত ১১টা ৪০ মিনিটে বাসায় এসে হাত-পা বেঁধে পায়ের উপরে উঠে বসে রাজু। স্ত্রী মিতু স্বামীর বুকের উপর উঠে কম্বল দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করলে প্রাণভিক্ষা চান শিক্ষক নাসির। টানা দুই ঘণ্টা ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে নিস্তেজ হয়ে যায় নাসিরের দেহ। সফল হয় কিলিং মিশন। মিতু সবাইকে জানায় তার স্বামী অতিরিক্ত কাঁঠাল খেলে রাতে ঘুমের মধ্যে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান। পরদিন সকালে তড়িঘড়ি করে নাসিরকে দাফন করা হয়। এর আগেও বেশ কয়েকবার ওই স্কুল শিক্ষককে হত্যার চেষ্টা করে তার স্ত্রী ফাতেমা আক্তার মিতু। ঈদুল ফিতরের আগের দিন নাসিরের মৃত্যু হওয়ায় স্বজনরা এ মৃত্যু নিয়ে তেমন চিন্তিত ছিলেন না। স্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবে সবাই মেনে নেয়। নাসির এবং মিতু দম্পতি দুই সন্তানের জনক-জননী। আট বছর বয়সী মেয়ের নাম নুসরাত জাহান এবং পাঁচ বছর বয়সী ছেলের নাম মো. নাঈম।
ফাতেমা মিতু তার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার কথা স্বীকার করে জানিয়েছেন, তাদের পরকীয়া সম্পর্ককে দীর্ঘস্থায়ী রূপ দিতে দুইজনে মিলে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। ২৩শে মে বিকালে ঘুমের ওষুধ কিনে রাজু তাকে দিয়ে আসেন। সন্ধ্যার পরে নাসির মজা করে কাঁঠাল খায়। ঘুমের আগে কৌশলে নাসিরকে অতিরিক্ত পরিমাণ ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয়। রাত ১১ টার পরে রাজুকে মোবাইলে জানানো হয়, নাসির ঘুমিয়ে পড়েছে তুমি চলে আসো। রাত সাড়ে ১১টার দিকে মিতু ও রাজু মিলে নাসিরকে কম্বল চাপা দিয়ে মেরে ফেলে। মিতু স্বীকার করেছে, তার ইচ্ছে ছিল রাজুকে বিয়ে করে নতুন সংসার শুরু করবে।
রাজু জানিয়েছেন, সম্পর্কে দাদি হলেও মিতুকে সে ভাবী বলে ডাকতো। চাকরির জন্য নাসির স্কুলে গেলেই তারা দাদি-নাতি অনৈতিক সম্পর্কে মিলতে হতো। নাসির তাদের সম্পর্কের কথা জেনে ফেলায় পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। ঈদের আগের রাতকে হত্যাকাণ্ডের জন্য বেছে নেয়ার প্রসঙ্গে বলেন, তাদের ধারণা ছিল ঈদের দিন সবাই ব্যস্ত থাকবে। কেউ পরিকল্পিত হত্যার বিষয়টি বুঝতে পারবে না। তবে হারিয়ে যাওয়া মোবাইলটি তাদের জন্য কাল হয়েছে, সে তাদের ফোন আলাপ রেকর্ড রেখেছিল, যাতে সে এ হত্যাকাণ্ডে একা ফেঁসে না যায়। রাজু আরো জানায়, সপ্তাহ খানেক আগে তার মোবাইল ফোনটি হারিয়ে ফেলে।
Development by: webnewsdesign.com