আওয়ামী সরকারেরে পতনের দাবিতে দীর্ঘ ১৬ বছর দেশে যেমন আন্দোলন হয়েছে- তেমনি হয়েছে প্রবাসেও। যে কোনো কর্মসূচির ডাক আসলেই প্রবাসে থাকা বিএনপির নেতাকর্মীরা কাজকর্ম ফেলে সর্বস্ব নিয়ে বাস্তবায়নে কাজ করতেন। আর শেখ হাসিনা প্রবাসে গেলেই একেবারে বিমানববন্দর থেকে শুরু করে সকল জায়গায় হাসিনাবিরোধী বিএনপির প্রবাসী নেতাকর্মীরা আন্দোলন ছড়িয়ে দিতেন ব্যাপক হারে। আর এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছেন বিভিন্ন দেশে- বিশেষ করে যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সিলেটি নেতাকর্মীরা।
এদিকে, বিভিন্ন দেশে থেকে আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী এমন জোরাল আন্দোনের কারণে দেশে আসতে পারতেন না এসব প্রবাসী বিএনপি নেতাকর্মী। দেশে আসলেই গ্রেফতার করা হতো তাদের, হয়রানি করা হতো নানাভাবে।
তবে ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের থেকে দেশে আসতে শুরু করেছেন তারা। দেশে থাকা অবস্থায় তারা সিলেট বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে করছেন, করছেন মতবিনিময়।
ওয়ান-ইলিভেনের সরকারের আমল থেকে বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত জীবন যাপন করেছেন। সেখান থেকেই তিনি দীর্ঘ দেড় যুগ থেকে পরিচালনা করেছেন দেশের সবচেয়ে বৃহত্তম তাঁর দল বিএনপি। আর যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বসবাস করেন সিলেটীরা। তারেক রহমান সিলেটের জামাই। গেল দেড় যুগ থেকে তাঁকে জামাই আদর দিয়েই রাখছেন
যুক্তরাজ্যে বসবাসরত সিলেটের বিএনপি নেতাকর্মীরা। বিশ্বের যেসব দেশে আওয়ামী সরকার বিরোধী আন্দোলন হত তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হত যুক্তরাজ্যে। কারণ যুক্তরাজ্যেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অবস্থান। শেখ হাসিনা যখন যুক্তরাজ্যে ভিজিট করতে যেতেন দিনের পর দিন আন্দোলন করে নাস্তেনাবুদ করে রাখত বিএনপি। এমনকি শেখ হাসিনার ইউরোপ সফর করার সময় যুক্তরাজ্য থেকে শতশত বিএনপি নেতাকর্মীরা হাসিনার অবস্থানস্থল ঘেরাও করে রাখতেন।হাসিনা বিরোধী ব্যাপক আন্দোলোন হত যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। আর এতে সিলেটিসহ প্রবাসী বাংলাদেশীদের সরব উপস্থিতি থাকত চোখে পড়ার মত।
হাসিনা বিরোধী আন্দোলনে শরীক নেতাকর্মীরা গেল প্রায় ১৬ বছর থেকে তারা দেশে আসতে পারতেন না। দীর্ঘ এই সময়ে অসংখ্য নেতাকর্মী দেশে থাকা তাদের পরিবার-পরিজন হারিয়েছেন।জন্মদাতা মা-বাবার শেষ বিদায়ের সময়ও বিদায় জানাতে পারেননি অনেকে। শুধু ফেসবুকে তাঁদের আহাঝারির স্ট্যাটাস দেখা যেত। দেশে আসলেই গ্রেফতার এবং মামলা দিয়ে হয়রানি করা হত। এমনকি বিদেশে অবস্থানকালেও দেশে মামলা দিয়ে আসামি করা হত। হয়রানি করা হত দেশে থাকা পরিবারের উপরও। ২০১৮ সালে দেশে (সিলেট) থাকা অসুস্থ বাবাকে দেখতে এসেছিলেন যুক্তরাজ্যে বিএনপির তৎকালীন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম মামুন। দেশে থেকে ফিরে যাওয়ার সময় বিমানবন্দরে গ্রেফতার করা হয় তাকে। একটি হত্যা মামলাসহ ৮-১০টি মামলঅয় গ্রেফতার দেখানো হয়েছিল তাকে। দীর্ঘদিন জেলখেটে বের হয়ে যুক্তরাজ্যে ফিরেন তিনি। এরপর আর দেশে আসেননি মামুন। একই সময়ে লন্ডন মহানগর যুবদলের সভাপতি আবুল খয়ের দেশে আসলে কয়েকটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছিলো। পরে জামিন নিয়ে তিনি লন্ডন ফিরেন।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেকের বাড়ি দক্ষিণ সুরমা উপজেলায়। ২০২১ সালের ২৮ এপ্রিল তাঁর বাড়িঘর ভাংচুর করে জ্বালিয়ে দেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এমন আরো অনেক প্রবাসী বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে হামলা করা হয়।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশে আসতে শুরু করেছেন এসব প্রবাসী বিএনপি নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপে বসবাসরত সিলেট অঞ্চলের বিএনপি নেতাকর্মীরা এসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন। গেল দেড় মাসে অন্ত্যত কয়েকশ নেতাকর্মী সিলেটে এসেছেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সহকারী প্রেস সচিব সিলেটের কৃতি সন্তান মুশফিকুল ফজল আনসারী। বিগত প্রায় এক দশক মার্কিন হোয়াইট হাউজ, স্টেট ডিপার্টমেন্টসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পরিমণ্ডলে পেশাদার এই সাংবাদিক বাংলাদেশের ভঙ্গুর মানবাধিকার পরিস্থিতি ও আওয়ামী দুঃশাসনের নানা প্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন সাহসিকতার সঙ্গে। আনসারী।গেল ১২ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে ফিরেন তিনি। কয়েকদিন দেশে থেকে আবার চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে।
সম্প্রতি দেশে এসেছেন বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির আন্তর্জাতিক সম্পাদক ও সৌদি আরব বিএনপির সভাপতি হবিগঞ্জের কৃতি সন্তান আহমদ আলী মুকিব, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও যুক্তরাজ্য স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি নাসির আহমদ শাহিন, যুক্তরাজ্য যুবদলের সাবেক আহবায়ক দেওয়ান মোকাদ্দেম চৌধুরী নিয়াজ, যুক্তরাজ্য বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিসবাহুজ্জামান সুহেল, এডভোকেট খলিলুর রহমান, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান তপন, লন্ডন মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারন সম্পাদক শেখ সাদেক, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি নেতা মস্তোফা কামাল পাশা মওদুদ, কাতার বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুল হক সাজু প্রমুখ।
এদিকে, আগামী ১৮ অক্টোবর বিএনপির জাতীয় কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমদসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী দেশে ফিরছেন। বিষয়টি সিলেটভিউ-কে জানিয়েছে যুক্তরাজ্য বিএনপির একটি সূত্র।
কয়ছর এম আহমদ ছাড়াও ওই দিন যাদের দেশে আসার কথা রয়েছেন তারা হলেন- যুক্তরাজ্য বিএনপির সহসভাপতি সুজাতুর রেজা, যুক্তরাজ্য স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন, লন্ডন মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি তাজুল ইসলাম, সহ সাধারন সম্পাদক ফেরদৌছ আলম, যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এনামুল হক লিটন, যুক্তরাজ্য বিএনপির সহ সাধারন সম্পাদক বাবুল চৌধুরী, ইস্ট লন্ডন বিএনির সাবেক সভাপতি ফখরুল ইসলাম বাদল, লন্ডন মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক শেখ সাদেক, যুক্তরাজ্য সেচ্ছাসেবক দলের সহ সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ চৌধুরী শাকিল প্রমুখ।
দেশে আসা প্রসঙ্গে যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমদ সিলেটভিউ-কে বলেন, স্বৈরশাসক শেখ হাসিনামুক্ত বাংলাদেশে আসতে পারছি যার আনন্দের শেষ নেই। তবে সবচেয়ে বেশি আনন্দিত হব- যেদিন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে দেশে আসব।
আরেকটি সূত্র সিলেটভিউ-কে জানিয়েছেন- দেশে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন সভাপতি এম এ মালেকসহ দীর্ঘদিন না আসা দলের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী। শীতকালে সবচেয়ে বেশি নেতাকর্মীদের আগমন ঘটবে বলে জানিয়েছেন ফ্রান্স বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জুনেদ আহমদ।
Development by: webnewsdesign.com