শীতে পাহাড়ের রূপ এখন অপরূপ। তাই পাহাড়ি জনপদ রাঙামাটিতে ভিড় বেড়েছে পর্যটকদের। আসলে শীত মৌসুমই হলো পাহাড় আর অরণ্যের শহর রাঙামাটিতে বেড়ানোর শ্রেষ্ঠ সময়।
শীতের হিমেল পরশে সজীব হয়ে উঠে পার্বত্য প্রকৃতি। এই শীতেই শতশত গাড়ির যান্ত্রিক কোলাহলে ধ্যানভাঙে গুরুগম্ভীর বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের শহর রাঙামাটির। সারাটা শীত মৌসুম জুড়ে যেন উৎসব লেগে থাকে এখানে। সঙ্গত কারণে হাজারো পর্যটকদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে পাহাড়ের পাদদেশ।
ছোট্ট পাহাড়ি শহর রাঙামাটি এমনিতেই নানা কারণে আকর্ষনীয়। ১০টি ভাষাভাষীর ১১টি জনগোষ্ঠীর নিজস্ব সাংস্কৃতিক, নৃতাত্তিক কৃষ্টির সংস্পর্শ পেতে অনেকেই শীত মৌসুমকেই বেছে নেন। ছুটে আসেন মন রাঙানো রাঙামাটি।
অন্যদিকে ঝুলন্ত ব্রিজ এখানে আসা পর্যটকদের মূল আকর্ষণ। নয়নাভিরাম বহুরঙা এই ঝুলন্ত সেতু হার্দিক সম্পর্ক গড়ে দিয়েছে দুইটি বিচ্ছিন্ন পাহাড়ের মাঝে। সেতুতে দাঁড়িয়েই পুরো কাপ্তাই হ্রদের সৌন্দর্য অবলোকন সম্ভব। ওপারেই রয়েছে পাহাড়ি গ্রাম। পাহাড়ি জীবনযাপনের চালচিত্র যেখানে দৃশ্যমান। রাঙামাটির আরেক দর্শনীয় স্থান চাকমা রাজবাড়ী আর তদসংলগ্ন রাজবনবিহার। চাকমা রাজার পুরনো বাড়ি পানিতে তলিয়ে যাওয়ার দৃশ্য এবং রাজবনবিহারের মনোমুগ্ধকর নির্মাণশৈলী অভিভূত হওয়ারই মতো। এখানেই দেখা মেলে ধ্যানমগ্ন বৌদ্ধ ভিক্ষুদের। গেরুয়া রঙের কাপড় পরিহিত নির্জনতা প্রিয় ভিক্ষুরা পাহাড়ের সাথে একাত্ম হয়ে থাকেন পরম মৌনতায়।
রাঙামাটি শহর থেকে আধাঘন্টা দূরত্বে রয়েছে আরণ্যিক পিকনিক স্পট, বালুখালী কৃষি ফার্ম,পেদতিংতিং, টুকটুক ইকো ভিলেজ,বরগাঙ ও বেড়াইন্যা। এখানে নির্জনতাপ্রিয় পর্যটকদের জন্য রয়েছে প্রায় সকল ব্যবস্থা। এমনকি আদিবাসীদের ঘরের স্টাইলে মাচাং এর উপরে কটেজ। এসবই পর্যটকদের কাছে ভীষণ আকর্ষণের।
এই রাঙামাটিতেই চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন সাত বীরশ্রেষ্ঠদের একজন বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ। রাঙামাটি শহর হতে জলপথে একঘন্টার দূরত্বে বুড়িঘাটে এই সমাধি। চারিদিকে কাপ্তাই লেকের নীলজল খেলা করে আর তার মাঝখানে একটি ছোট্ট দ্বীপে ঘুমিয়ে আছেন আমাদের এই বীর। অনেক পর্যটক এই বীরের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এখানে আসেন।
পর্বতপ্রেমি পর্যটকরা ছুটে যান সুভলং কিংবা ১৬৩৭ ফুট উচ্চতার ফুরমোন পাহাড়ে। কিন্তু দুর্ভাগ্য শীত মৌসুমে ঘুমিয়ে থাকে এখানকার পাহাড়ি ঝর্ণাগুলো।
এখানেই শেষ নয়, রাঙামাটির উপজাতীয় জাদুঘর, ডিসি বাংলো, পলওয়েল পর্যটন কেন্দ্র, বনবিথী, রাঙামাটি বেতার কেন্দ্র, রাঙামাটিস্থ টেলিভিশন উপকেন্দ্র, বেতবুনিয়া ভূ উপগ্রহ কেন্দ্র এসবও ভীষণ আকর্ষণের।
রোমাঞ্চপ্রিয়রা বাঘাইছড়ির সাজেক উপত্যকায় ভিন্ন আস্বাদন খুঁজে নেন। এখানে দুর্গম পাহাড় শীর্ষে আরোহণের মজা অনেকেই হাতছাড়া করতে চান না। যারা ঘুরে বেড়ানো হাতি দেখতে চান তারা ছুটে যান কাউখালী ও লংগদু ও কাপ্তাইয়ে।এছাড়া কাপ্তাই নেভি ক্যাম্প পিকনিক স্পর্ট, প্যনোরামো জুম রেস্তোরা, গিরিনন্দিনী পিকনিক স্পর্ট, কাপ্তাইয়ে বাংলাদেশের একমাত্র জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও কর্নফুলী পেপার মিলস এসবও দারুণ উপভোগের।
কাপ্তাই হ্রদের উপর নির্মিত শহরের আসামবস্তিতে নির্মিত আসামবস্তি ব্রিজ ও আর্জেন্টিনা ব্রিজেও ছুটে যান অনেক পর্যটক। পাহাড়ের আড়ালে অস্তগামী সূর্যের নৈসর্গিক দৃশ্য এখানে আরেকটি বাড়তি পাওনা।
এখানিই রয়েছে উপজাতীয় রমণীদের হস্তশিল্পের বিভিন্ন কারুকাজ সমৃদ্ধ জামা কাপড়, শো পিস।রাঙামাটি শহরের তবলছড়িস্থ কল্পতরুতে রয়েছে হাতির দাঁতের বিভিন্ন জিনিসপত্র।রাঙামাটিতে আসার পথ এখন সবারই জানা। রাঙামাটিতে পর্যটকদের থাকার জন্য ভালমানের হোটেলও আছে। পর্যটন মোটেল, পলওয়েল রিসোর্ট,হোটেল সুফিয়া, নীডস হিল ভিউ,মোটেল জর্জ, হোটেল গ্রিন ক্যাসেল, টুকটুক ইকো ভিলেজ, হোটেল আনিকা অন্যতম। পর্যটনের রয়েছে নিজস্ব মোটেল। রয়েছে ছোট ছোট কটেজ, সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের রেস্ট হাউস, গেস্ট হাউস ।
Development by: webnewsdesign.com