“পাগলীটা মা হলেও সেই সন্তানের বাবা হলো না কেউ”! দিনাজপুরের হাকিমপুর, হিলি স্থলবন্দর এলাকায় মানসিক ভারসাম্যহীন প্রতিবন্ধী (পাগলী) এক নারী ফুটফুটে একটি পুত্র সন্তান প্রসব করেছেন। প্রসবের পর থেকেই সন্তানকে হাসপাতালে ফেলে রেখে বাহিরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তার মানসিক প্রতিবন্ধি মা।
শিশুটি হাসপাতালের নার্স, চিকিৎসক ও এক মায়ের নিবিড় পরিচর্যায় থাকার পর শিশুটিকে এক দম্পতিকে দত্তক নিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
জানাগেছে গত শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) দিবাগত রাতে হিলি স্থলবন্দর এলাকার চারমাথা মোড়ে রাস্তার পাশে ফুটপাতে সন্তান প্রসব করা অবস্থায় ওই ভারসাম্যহীন (পাগলী) কে দেখতে পায় কয়েকজন পথচারী। পরে তাকে হাকিমপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন তারা। হাসপাতাল কতৃপক্ষ বলেন, সন্তান প্রসবের পরের দিনই থেকেই শিশুটির ভারসাম্যহীন মা বাহিরে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
স্থানীয় নুরন্নবী বলেন, গত শুক্রবার রাতে হিলি স্থলবন্দরের চারমাথা মোড়ে কাজের সুবাধে আমরা কয়েকজন অবস্থান করছিলাম। এসময় আমরা হঠাৎ দেখতে পাই ভারসাম্যহীন এক নারী সন্তান প্রসব করে সেই বাচ্চা নিয়ে চারমাথার দিকে যাচ্ছে। আমরা সাথে সাথে বাচ্চা ও তার মাকে নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই। এরপর সেখানে বাচ্চাটির চিকিৎসা করেন হাসপাতালের নার্স ও চিকিৎসকরা।
বাচ্চাটি দত্তক নিতে চাওয়া শাহিদা বেগম বলেন, বাচ্চাটি ও তার মাকে যখন আমার ভাইদের হাসপাতালে নিয়ে আসার খবর পেয়ে আমি হাসপাতালে আসি। তারপর বাচ্চাটির গায়ে লেগে থাকা কাঁদা মাটিসহ অনেক ময়লা পরিস্কার করে দেই। আমি বাচ্চাটিকে দত্তক নিতে চাই! তাই তাকে বুকে টেনে নিয়েছি। বাচ্চাটিকে দুধ খাওয়ার জন্য তার মাকে বলা হলে, বাচ্চাটিকে কাছেই নিচ্ছে না তার মা। বাচ্চাটির খাওয়া-দাওয়াসহ প্রসাব- পায়খানা সবকিছু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন আমি করছি।
হাকিমপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. গাদ্দাফি শিকদার বলেন, হাসপাতালে আসার আগেই ওই নারী সন্তান প্রসব করেন। তবে এর পরবর্তী ধাপগুলো হাসপাতালে আসার পর সম্পূর্ণ করা হয়। কিন্তু বাবুটির মা একজন মানসিক প্রতিবন্ধি হওয়ায় বাচ্চার কাছে তাকে রাখা যাচ্ছেনা। সে বাহিরে বাহিরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। হাসপাতালের এক নার্স ও বাহিরের এক মহিলা বাচ্চাটির দেখাশোনা করছেন।হাসপাতাল থেকে বাচ্চাটির জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বাচ্চাটিকে দত্তক নেওয়ার জন্য অনেকেই হাসাপাতালে এসেছেন। কিন্তু আমরা চাইলে যে কাউকে বাচ্চাটি দিতে পারি না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট দত্তক নেওয়ার জন্য আবেদন করতে হবে। তিনি পরবর্তীতে উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার এর সমন্নয়ে গঠিত কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাবুটির পরবর্তী ভবিষ্যৎ ঠিক করা হবে বলে জানান, ডা. গাদ্দাফি শিকদার।
হাকিমপুর উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন উর রশীদ হারুন বলেন, হাসপাতালে যে শিশুটি ছিলো তার মা মানসিক প্রতিবন্ধী। যার কারণে শিশুটির লালন-পালন ও ভরণ পোষনের জন্য শিশুটিকে দত্তক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট ৫ জন দম্পত্তি শিশুটিকে দত্তক নেওয়ার জন্য আবেদন করেন। পরবর্তীতে তিনি কমিটির মিটিং এ তাদের মধ্যে যাচাই বাছাইপূর্ব নুরনবী নামে এক দম্পতিকে শিশুটি দত্তক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূর- এ আলম বলেন, হাসপাতালের ওই নবজাতক শিশুটিকে দত্তক নেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে ৫জন দম্পতি আমাদের উপজেলা কমিটিতে আবেদন করেন। পরবর্তীতে বিষয়টি গতকাল কমিটির মিটিং এ পর্যালোচনার মাধ্যমে নুরনবী- জায়েদা বেগম নামে এক দম্পতির কাছে শিশুটিকে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগীকাল আনুষ্ঠানিক ভাবে ওই দম্পত্তির হাতে নবজাতক শিশুটি তুলে দেওয়া হবে। এখন পর্যন্ত শিশুটি হাসপাতালে সুস্থ রয়েছে বলে জানান তিনি।
দৈনিক বাংলাদেশ মিডিয়া/এসআরসি-২৭
Development by: webnewsdesign.com