অনশনে অসুস্থ শিক্ষার্থীর অস্ত্রোপচার, ভাঙেননি অনশন

পদ বড় না ২৪টি জীবন বড় ?

সোমবার, ২৪ জানুয়ারি ২০২২ | ১:২৬ অপরাহ্ণ

পদ বড় না ২৪টি জীবন বড় ?
apps

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের(শাবিপ্রবি) উপাচার্যের পদ বড় না ২৪জন শিক্ষার্থীর জীবন বড় সেই প্রশ্ন সিলেটের সর্বত্র। শাবি উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে চলমান উত্তাল আন্দোলন এখন ধীরে ধীরে দেশব্যাপি ছড়িয়ে পড়ার ইঙ্গিত বহন করছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে শাবির শিক্ষার্থীদের জীবনের থেকে ভিসির পদ অনেক বড়। নির্লজ্জ ভিসি সন্তানদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়ে সরকারের কৃপায় পদ আকড়ে থাকার চেষ্টা করছে। তাহার বড় উদাহরণ সরকারের মন্ত্রীদের এবং সিলেটের স্থানীয় আওমীলীগ নেতাদের বক্তব্য। সরকার মনে করছে ভিসি পদত্যাগ করলেই সরকাররে সম্মান চলে যাবে। তাদের ক্ষমতা খর্বহয়ে যাবে।

শাবি নিয়ে সরকারের পদক্ষেপে অসন্তুষ্ট সিলেটের সুশীল সমাজ,সংস্কৃতিকর্মী, সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ সাধারণ মানুষ। তাদের প্রশ্ন ভিসি শিক্ষার্থীদের পড়াবেন না পদবীকে। শিক্ষার্থীই যদি না থাকে তাহলে ভিসি কাদের পড়াবেন বা কাদের ভিসি হবেন সেই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।

এখনও সময় আছে সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত কার্যকর উদ্যেগ গ্রহন করেন, পদ না বাচিয়ে শিক্ষার্থীদের বাচান। আল্লাহ না করুক যদি কোন আমরণ অনশনরত শিক্ষার্থীর দূর্ঘটনা ঘটে তাহলে ভিসি পদত্যাগের মধ্যে এই আন্দোলন সীমাবদ্ধ থাকবেনা। তখন সরকারের অবহেলার কারনে সরকার পতনের আন্দোলনে মোড় নিবে। যত দ্রুত সম্ভব শাবির সমস্যা সমাধান অপরিহার্য নয়কি?

এদিকে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি অনশনরত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহীন শাহরিয়ার রাতুলের অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাহীনের অনশনের দ্বিতীয় দিন থেকে থেমে থেমে পেটব্যথা হচ্ছিল। গতকাল রোববার বিকেলে হঠাৎ পেটব্যথা বেড়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। অ্যাপেন্ডিসাইটিস ধরা পড়লে রাত পৌনে ১১টার দিকে তার অস্ত্রোপচার হয়।

উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে অনশনরত শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম বলেন, অস্ত্রোপচারের পরও মাহীন অনশন ভাঙেননি। অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান নুরুল কাইয়ুম মোহাম্মদ মোরসালিন বলেন, পেটব্যথার পাশাপাশি মাহীনের জ্বর ছিল। বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।

এদিকে অনশনরত আরেক শিক্ষার্থী আসাদুল্লাহ গালিব বলেন, ‘১৯ জানুয়ারি থেকে আমাদের দাবি আদায় করতে দৃঢ় মনোবল নিয়েই অনশন চালিয়ে যাচ্ছি। অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরও কেউ অনশন ভাঙেননি। আজ সোমবার সকাল সাতটা পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১৭ জন। শুরুতে ২৪ জন অনশন শুরু করলেও এক শিক্ষার্থীর বাবা হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হওয়ায় অনশন ছেড়ে বাড়ি ফিরতে হয়েছে তাকে। আর গত শনিবার রাত থেকে নতুন করে গণ-অনশনে যুক্ত হয়েছেন পাঁচ শিক্ষার্থী।’

গতকাল বিকেল থেকে উপাচার্যের বাসভবনের মূল ফটকের সামনে মানব দেয়াল তৈরি করে রেখেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে আছেন উপাচার্য। সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয় উপাচার্যের বাসভবনের বিদ্যুৎ–সংযোগ। এতে ইন্টারনেটের সংযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। উপাচার্যের বাসভবনে পুলিশ সদস্য ও গণমাধ্যমকর্মী ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। উপাচার্যের বাসভবনের ভেতরে যাতায়াতের সড়কে শিক্ষার্থীরা রাতভর অবস্থান করছিলেন। তবে বিদ্যুতবিহীন থাকতে হয়নি তাকে, বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে জেনারেটরের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন এক শিক্ষক।

উল্লেখ্য, শাবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের শুরু ১৩ জানুয়ারি। রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদ লিজার বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক শ ছাত্রী। ১৬ জানুয়ারি বিকেলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। তখন শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে উপাচার্যকে মুক্ত করে পুলিশ। এরপর পুলিশ ৩০০ জনকে আসামি করে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করে। সেদিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীরা তা উপেক্ষা করে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে তার পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনে নামেন।

বাসভবনের সামনে অবস্থানের কারণে গত ১৭ জানুয়ারি থেকেই অবরুদ্ধ অবস্থায় আছেন উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদ। ১৯ জানুয়ারি দুপুর আড়াইটা থেকে উপাচার্যের পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরণ অনশনে বসেন ২৪ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে একজনের বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ায় তিনি অনশন শুরুর পরদিনই বাড়ি চলে যান। বাকি ২৩ অনশনকারীর মধ্যে ১৬ জন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। ২৩ জানুয়ারি আরও চারজন শিক্ষার্থী অনশনে যোগ দেন।

এর মাঝে উপাচার্য ইস্যুতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ২২ জানুয়ারি গভীর রাতে ভার্চুয়ালি বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী। বৈঠকে উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না এলেও দাবিগুলো লিখিতভাবে জমা দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি। তবে বৈঠকের পর শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের মূল দাবি উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদের পদত্যাগ। এই দাবি না মানা পর্যন্ত তারা আন্দোলন থেকে সরবেন না। ২৩ জানুয়ারি দুপুরের পর শিক্ষার্থীদের আবার শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। তবে তা না হওয়ায় তারা উপাচার্যকে অবরুদ্ধের ঘোষণা দেন।

Development by: webnewsdesign.com