একসময়ের খরস্রোতা সিলোনিয়া নদী আজ মুমূর্ষু। ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত এই নদীটি, যা মুহুরী ও কহুয়ার মতোই স্থানীয় অর্থনীতি ও পরিবেশের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল, এখন অস্তিত্ব সংকটে। দখলবাজি, অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ এবং সরকারি সংস্থার নিস্পৃহতার শিকার হয়ে নদীটি হারাতে বসেছে তার স্বাভাবিক স্রোতধারা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সিলোনিয়া নদীর করুণ দশার প্রধান কারণ হলো একদল প্রভাবশালী কর্তৃক নদীতে মাছ ধরার ফাঁদ তৈরির উদ্দেশ্যে বাঁধ নির্মাণ। এই বাঁধের কারণে নদীর জলপ্রবাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে, যা সরাসরি সেচ নির্ভর কৃষকদের জীবনে বিপর্যয় ডেকে আনছে। এক ভয়াবহ বন্যার পর নদীর তলদেশ পলিমাটি ও আগাছায় ভরে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
বাঁধের পাশাপাশি, নদীর পাড় ও অভ্যন্তর দখল করে বসতি স্থাপন এবং কৃষিজমি দখলের প্রবণতা মুন্সীরহাট থেকে বন্দুয়া পর্যন্ত আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, নদীর এই দখলযজ্ঞের ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা কখনোই এলাকায় পরিদর্শনে আসেননি। ফলে দখলদাররা নির্বিঘ্নে নদীর পাড় ও ভেতরে ঘরবাড়ি তৈরি করে চলেছে।
স্থানীয়দের মন্তব্য: “আমরা দিনের পর দিন দেখছি কীভাবে নদীর পাড় ভরাট হচ্ছে। কিন্তু পাউবোর কাউকে কোনোদিন দেখিনি। নদীটা মরে গেলে আমাদের হাজার হাজার বিঘা জমিতে সেচ দেওয়া অসম্ভব হয়ে যাবে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে, পাউবোর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. ফাহাদ্দিস হোসাইন সমস্যার কথা স্বীকার করেন। তিনি জানান, মুহুরী প্রকল্পের অধীনে ১২২ কিলোমিটার নদীপাড়ে এমন সমস্যা রয়েছে। তবে তিনি আশ্বাস দেন যে সরকারি অর্থায়নে ঝোপঝাড় পরিষ্কার এবং জলপ্রবাহ সচল রাখার কাজ চলছে। তিনি মন্তব্য করেন, প্রকল্পের পূর্ণাঙ্গ অনুমোদন ও বাস্তবায়ন হলে নদীগুলোর অবস্থার স্বয়ংক্রিয়ভাবে উন্নতি হবে।
ফুলগাজী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাশিয়াত আকতার নদীর এই বিপন্নতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, কেবল সরকারের একার পক্ষে নয়, নদী দখলমুক্ত করে এর প্রবাহ সচল রাখতে স্থানীয় এলাকাবাসীর সচেতনতা ও সহযোগিতাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
পরিবেশবিদরা আশঙ্কা করছেন, দ্রুত কোনো পদক্ষেপ না নিলে সিলোনিয়া নদী কেবল মানচিত্র থেকেই নয়, স্থানীয় ইতিহাস ও ঐতিহ্য থেকেও চিরতরে হারিয়ে যাবে। ফুলগাজীর পরিবেশের এই বিপর্যয়ে প্রশ্ন উঠছে: প্রশাসনিক গাফিলতি এবং জনসচেতনতার অভাব কি তবে সিলোনিয়া নদীর কফিনেই শেষ পেরেক ঠুকছে?
Development by: webnewsdesign.com